অন্যায়ের বিচার না পেয়ে মেয়ে আয়েশা আক্তারকে (৮) নিয়ে হযরত আলীর (৪৫) আত্মহত্যার আলোচিত ঘটনার পর এখন কেমন আছেন তার স্ত্রী হালিমা বেগম? বহুজনের বহু আশ্বাসের পরও সাহায্য সহযোগিতা তেমন পাননি, সৌর বিদ্যুতের সংযোগ পেলেও লাইট নেই বলে ‘অন্ধকারেই থাকতে হচ্ছে’ তাকে।
বুধবার হালিমাকে দেখতে যাওয়া বিশিষ্টজনদের তিনি বলেন, “একটা বিদ্যুত (সৌর বিদ্যুত সংযোগ) লাগায় দিছে, কিন্তু এইখানে একটা লাইট নাই? আমি অন্ধকারে থাকি।”
দুপুরে গাজীপুরে শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের কর্ণপুরের সিটপাড়া গ্রামের হালিমার বাড়ীতে যান বিশিষ্ট লেখক, কলামিষ্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফসহ কয়েকজন। তারা হালিমা বেগমের সঙ্গে কথা বলেন ও তার খোঁজ খবর নেন।
হালিমা বেগমের বর্তমান দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, তার আসলে কেউ নাই। তাকে বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতার অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তিনি তেমন কিছুই পাননি। সাহায্য বলতে তার হাতে একটা মোবাইল ফোন গেছে। তার বাসায় সৌর বিদ্যুতের একটা সংযোগ হয়েছে। সৌর বিদ্যুতের যন্ত্রাংশগুলো শুধু লাগানো হয়েছে। কিন্তু বাল্বও নাই। রাতে অন্ধকারে থাকে।
“তাকে আসলে কেউ সহযোগিতা করেনি। অনেকেই গেছিলো, রাজনীতিবিদরাও গেছে, স্থানীয় রাজনীতিবিদরা আশ্বাস দিছে, আমি আপনার ছেলের মতো, আমি হেল্প করবো, এমন বলছে; কিন্তু সেইরকমের কোন সহযোগিতা তিনি পান নাই।”
শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, “এখন ওনার সমস্যাগুলো কি কি?, এই প্রশ্নের জবাবে উনি আমাকে বললেন, বাবা আমি অন্ধকারের ভেতরে থাকি। আমার এইখানে একটা লাইট নাই। এই যে একটা বিদ্যুৎ লাগায় দিছে এইটাতো লাইট না থাকলে, এইটা দিয়ে আমি কি করবো? আমি অন্ধকারে থাকি।”
গত ২৯ এপ্রিল, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শ্রীপুর রেলস্টেশনের পশুহাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় চলন্ত তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে মেয়ে আয়েশা আক্তারসহ বাবা হযরত আলী আত্মহত্যা করেন।
প্রাথমিকভাবে জানা যায়, ফারুক নামের স্থানীয় এক বখাটে হযরত আলীর প্রথম শ্রেণীতে পড়া শিশু কন্যা আয়েশাকে একাধিকবার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। এর বিরুদ্ধে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল হোসেনের কাছে বিচার চাইলেও তিনি ব্যবস্থা নেননি। বরঞ্চ তিনি তা ধামাচাপা দেন। পরে থানায় অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি হযরত আলী। সেই ক্ষোভে মেয়েকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়েন হযরত আলী। তিনি দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন।
এই ঘটনায় ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবুল হোসেনকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৮ দিন পেরিয়ে গেলেও আর কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। এ বিষয়ে শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ২০০ টাকা খেয়ে মামলাটাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছিলো যে ইউপি সদস্য তাকেই শুধু গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি কোন আসামীকেই গ্রেপ্তার করা হয় নাই।
এখনও বাকি আসামীদের গ্রেপ্তার না হওয়ার পেছনে নিজের কিছু অভিমত তুলে ধরেন শরীফুজ্জামান। তিনি বলেন, “বিষয়টা ক্রমশই ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। অন্যান্য ইস্যুগুলোর কারণে ইস্যুটা পেছনে পড়ে যাচ্ছে।” আসামী গ্রেপ্তারের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশের তৎপরতায় ঘাটতি আছে বলেও মনে করেন তিনি।
‘আসামীদের ধরতে পুলিশ যেসমস্ত প্রসেস অ্যাপ্লাই করে, এক্ষেত্রে সম্ভবত সেই প্রসেস অ্যাপ্লাই হচ্ছে না’ অভিযোগ করে তিনি বলেন, “২০ দিনের (১৮ দিন) মতো হয়ে গেলো, তাৎক্ষণিকভাবে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারের বাইরে কেউ ধরা পড়লো না, অথচ পুলিশ চাইলে এদেরকে ধরতে পারতো। তাদের যে আার্থিক অবস্থা তাতে তাদের পক্ষে দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ারও সুযোগ নেই।
হালিমা বেগমের বাসায় পুলিশ ও আনসার পাহারায় আছে জানিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় আনার প্রতি জোর দেন শরীফুজ্জামান।
হালিমার অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তার কোন কাজ নাই। সে বেকার। আত্মীয় স্বজনের সহায়তায় মোটামুটি বেঁচে আছে। তার বসবাসের এলাকাটি অনেকটা বন্য অঞ্চল বলে আশে পাশে ঘরবাড়িও তেমন নাই। এছাড়াও আশেপাশের বাসিন্দারাও তেমন স্বচ্ছল না, তারাও গরীব। তাই প্রতিবেশীরাও তাকে তেমন সাহায্য করতে পারে না।
দায়ীদের আইনের আওতায় আনার জোড় দাবি জানান শরীফুজ্জামান। পাশাপাশি ভিকটিমের নিরাপত্তা ও অন্যান্য ব্যবস্থাও বলবত রাখতে হবে বলে উল্লেখ করেন। এক্ষেত্রে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলন ও কর্মসূচী ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানান তিনি।
বুধবার হালিমার সাথে দেখা করতে যাওয়া অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন সি.পি.বি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী মোঃ জাকির হোসেন প্রমুখ।