‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, আমি বাইবো না মোর খেয়া তরী এই ঘাটে গো’-আজ বাইশে শ্রাবণ। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৪তম মহা প্রয়াণ দিবস। কে বলে রবীন্দ্রনাথ চলে গেছেন! রয়ে গেছেন আমাদের আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না, প্রেম-বিরহ-সবকিছুর মাঝে।
বাঙালির এ প্রাণের কবি নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও তার অসামান্য লেখনি আর কাজের মধ্যে দিয়ে বেঁচে আছেন প্রেরণাদাতা হয়ে সবার মাঝে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বহুমুখী সৃজনশীলতা বাংলা সাহিত্য ও শিল্পের প্রায় সবকটি শাখাকে স্পর্শ করেছে, বাড়িয়েছে সমৃদ্ধি।
ভারতের কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫শে বৈশাখ জন্ম নেন এ সাহিত্য শ্রষ্টা। তারপর পুরোটাই ইতিহাস। বাংলা সাহিত্যের সব শাখাতেই তার সফল বিচরণ। প্রেম, প্রকৃতি আর জীবনের প্রতি বাঙালীর বোধকে দিয়ে গেছেন বহুমাত্রিকতা।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিক এবং বিংশ শতাব্দীর দিকটাতে বাংলা সাহিত্য ও সঙ্গীত রবীন্দ্রনাথ যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করেন। যা পরবর্তীতে বাংলা শিল্প-সাহিত্যকে পৌঁছে দেয় বিশ্ব দরবারে। বসন্ত নয়, বর্ষাই ছিল তাঁর প্রিয় ঋতু। আষাঢ়-শ্রাবণে নদ-নদীর টইটম্বুর দৃশ্যে বিভোর হতেন তিনি। গাছের পাতায়, ঘরের চালে কিংবা আকাশ আর প্রান্তরজুড়ে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ার মিষ্টি সুরে মুগ্ধ হতেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই বর্ষা ঋতুতেই চলে গিয়েছিলেন এ মহাকবি।
বর্ষাকে ভালোবেসে তিনি লেখে গেছেন ১০০ টিরও বেশি গান,
“আজি ঝর ঝর মুখর বাদলদিনে
জানি নে, জানি নে কিছুতেই কেন মন লাগে না।”
গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে প্রথম বাঙালি তথা এশিয়ো হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পান তিনি। ১৯১৫ সালে তিনি ব্রিটিশ সরকারের ‘নাইট’ উপাধি লাভ করেন। অবশ্য ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তা প্রত্যাখ্যান করেন।
কলকাতায় জন্মগ্রহণ করলেও এপার বাংলার সাথে ছিলো তার আত্মিক যোগাযোগ। ১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর খুলনার বেণীমাধব রায় চৌধুরীর মেয়ে মৃণালিনী দেবী চৌধুরানীকে বিয়ে করে তার আরও দৃঢ় করেন।
পৈতৃক জমিদারি দেখাশুনার জন্য বাংলাদেশ এসেছেন বহুবার। কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও নওগাঁর পতিসরের জমিদার বাড়িগুলো আজও তার স্মৃতিচিহ্ন বহন করছে।
বাংলা সাহিত্যের এ দিকপাল মাত্র আট বছর বয়সে লেখেন প্রথম কবিতা। ১৮৮৭ সালে মাত্র ষোল বছর বয়সে ‘ভানুসিংহ’ ছদ্মনামে তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। ঐ বছরই ব্যারিস্টারি পড়তে পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে। তবে সেটি আর শেষ করা হয়ে ওঠেনি। দেড় বছর সেখানে অবস্থান শেষে দেশে ফিরে রচনা করেন গীতিনাট্য –বাল্মীকি প্রতিভ।
তাঁর গ্রন্থের মধ্যে ‘শেষের কবিতা’ বহুল পঠিত ও আলোচিত উপন্যাস। সোনার তরী, মানসী, চিত্রা, চৈতালী, চোখের বালি, নৌকাডুবি, গোরা, চিত্রাঙ্গদা, শ্যামা, নটরাজ, সভ্যতার সঙ্কট ইত্যাদি গ্রন্থও রচনা করেছেন তিনি। তার সাহিত্যকর্ম বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত ও পঠিত হচ্ছে।
কবিগুরুর প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে সারাদেশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
বিভিন্ন টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে। নানা আয়োজনে এই দিনটি পালিত করবে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।