চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

অনৈতিক সুবিধা না দেয়ায় প্রাণের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে: আনিসুর রহমান

সম্প্রতি দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্র্যান্ড প্রাণের ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং মাকেটিং পলিসিসহ ব্যবসা বাণিজ্যের নানা প্রসঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে মিলিত হন প্রাণ বেভারেজের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এমডি আনিসুর রহমান। তার সাক্ষাতকার নিয়েছেন রাজু আলীম

প্রশ্ন: প্রাণ এর প্রোডাক্ট নিয়ে টেলিভিশনে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশিত হয়। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন সংবাদ ভাইরাল হয়েছে?
এমডি আনিসুর রহমান: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন যে ইস্যুগুলো দেখেছেন- তা শুরু হয় যমুনা টেলিভিশনের ইনভেষ্টিগেশন থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। তার কাট ভার্সন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে। অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে এই টেলিভিশন প্রাণের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

প্রশ্ন: আপনারা কি কথা বলার চেষ্টা করেছেন তাদের সাথে?
এমডি আনিসুর রহমান: আমরা কথা বলেছি। কিন্তু তাদের কিছু দাবি দাওয়া থাকে। তা আমরা পূরণ করতে পারছি না। আমরা ব্র্যান্ড প্রমোশনের জন্য বাংলাদেশের ৩০টা টিভি চ্যানেলের কাছেই যাই এবং কাজ করি।

প্রশ্ন: এই ধরণের সংবাদে আপনাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু কমছে না?
এমডি আনিসুর রহমান: আসলে এই টেলিভিশন মানুষ দেখে না। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। এর কিছু উত্তর আমরা দিয়েছি। অন্য টেলিভিশনে দেখাচ্ছে দুধের ভেতরে মাছ আর যমুনা টিভি দেখাচ্ছে প্রাণের দুধে মাছ। এই দুই সংবাদ দেখলেই তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে যাবে। যেদিন দুধে টেংরা মাছ এসেছে সেদিন ইউটিউবে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা উত্তর দিয়েছি যে, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এইভাবে দেখাচ্ছে প্রাণের দুধে টেংরা মাছ।

প্রশ্ন: আপনাদের প্রোডাক্ট লাইন অনেক বড়। দেশের গণমাধ্যমসহ পাশের দেশের টিভি চ্যানেলেও আপনারা বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন- এর উদ্দেশ্য কী?
এমডি আনিসুর রহমান: কলকাতা বিরাট মার্কেট। বাংলাদেশে যেভাবে আমরা ব্র্যান্ডটাকে তুলে ধরেছি মানুষের কাছে। আমাদের পরের টার্গেট পাশের দেশ ইন্ডিয়ার মার্কেট।

প্রশ্ন: আপনারা কি সেখানে কারখানা করেছেন?
এমডি আনিসুর রহমান: জ্বি, কলকাতা এবং ত্রিপুরায় প্রাণের কারখানা আছে। সেখানে যে প্রোডাক্ট হচ্ছে তা লোকালি আমরা ডিষ্ট্রিবিউট করছি। কিন্তু ৯০ শতাংশ পণ্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হচ্ছে ইন্ডিয়াতে।

প্রশ্ন: কলকাতা ছাড়াও অন্য জায়গায় প্রোডাক্ট চলছে সেখানেও কি বিজ্ঞাপন করছেন?
এমডি আনিসুর রহমান: মধ্যপ্রাচ্যে অনেক বড় মার্কেট আমাদের। সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার এবং মালয়েশিয়াতে আমাদের মার্কেটিং টিম এর আন্ডারে বিরাট কমিউনিটি আছে। ইউএসএ, ইতালি, নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স এই সব জায়গায় আমাদের মার্কেটিং টিম আছে। যেহেতু আমরা কনজ্যুমার আইটেমের ব্যবসা করি সেহেতু এটাকে মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে এবং এর ভ্যালু বোঝাতে হবে। তাই সব জায়গায় আমাদের অপারেশন আছে।

প্রশ্ন: অন্য ব্র্যান্ডের মানুষ হিসেবে আড়ংকে ব্র্যান্ড হিসেবে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
এমডি আনিসুর রহমান: একটি দেশি ব্র্যান্ড আড়ং এবং আমাদের গর্ব। আমাদের যিনি ফাউন্ডার সিইও মেজর জেনারেল আমজাদ খান চৌধুরী। তার টার্গেটও ছিলো যে, বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ, কিভাবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাক্টকে কমার্শিয়াল ফর্ম দিয়ে ভ্যালু অ্যাড করে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া যায়? তাহলে কৃষক বাঁচবে। এই দিক দিয়ে আড়ং এবং প্রাণের ভালো মিল আছে। আড়ংও কিন্তু গ্রাম থেকে দুধ সংগ্রহ করছে। গ্রামের মানুষকে কাজ দিচ্ছে। যাদের ৫০ শতাংশই মহিলা। নারীদের উন্নয়নে কাজ করে আড়ং। আর আমাদের বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ১৭টি ফ্যাক্টরি আছে। যার ৭০ শতাংশ কর্মীই মহিলা। এক লক্ষ মানুষ কাজ করছে যার বেশিরভাগই মহিলা। এই জায়গায়ও আড়ংয়ের সাথে প্রাণের এর মিল আছে।

প্রশ্ন: প্রাণ বেভারেজের দায়িত্বে আপনি আছেন। এর মধ্যে কী কী প্রোডাক্ট আছে। স্বাস্থ্যসম্মত পানীয় নিয়ে কি কাজ করছেন?
এমডি আনিসুর রহমান: বর্তমান প্রোডাকশন লাইনে আমাদের কার্বোনেটেড সফট ড্রিংক প্রাণ আপ আছে। জুস এর ভেতরে প্রাণ ফ্রুটো। মিল্ক ড্রিংকস এর ভেতরে আছে লাচ্ছি।

প্রশ্ন: আর হেলথ ড্রিংক এর ভেতরে?
এমডি আনিসুর রহমান: প্রাণ লাচ্ছি হেলথ ড্রিংক। বাচ্চাদের খুব পছন্দ এবং বাংলাদেশে এটি আমরাই প্রথম নিয়ে এসেছি বাজারে। আমরা এখন মার্কেটে আছি লাচ্ছি নিয়ে। প্রাণ ড্রিংকিং ওয়াটার আছে। এছাড়াও আমরা বিদেশের বিভিন্ন মার্কেটে যাচ্ছি, বিভিন্ন ফুড ফেয়ারে অংশ নিচ্ছি। এর মাধ্যমে মানুষ হেলথ কনসাস হচ্ছে। একটা উদাহরণ দিতে চাই- যেমন, বাংলাদেশে রাস্তাঘাটে বিক্রি হয় অ্যালোভেরা। ৬ মাসের ভেতরে আমরা মার্কেটে অ্যালোভেরা দিচ্ছি।

প্রশ্ন: আমদানি করে উৎপন্ন করবেন নাকি দেশীয়ভাবে উৎপাদিত হবে?
এমডি আনিসুর রহমান: নাটোর ও নরসিংদী অঞ্চলে প্রচুর অ্যালোভেরা হয়। সেখান থেকে সংগ্রহ করে তৈরি করছি। আমাদের ইউরোপের একজন বায়ার তাইওয়ান থেকে এই প্রোডাক্ট কেনেন। সে যখন দেখছে যে এই দেশে রাস্তাঘাটে অ্যালোভেরা বিক্রি হয়। সে এখন আমাদের কাছ থেকে নেবেন। সেই আমাদেরকে উৎপাদনের জন্য উৎসাহ দেন। তারপরে বিদেশ থেকে আমরা মেশিন কিনে আনি অ্যালোভেরা পিলিং, স্লাইসিং, পাস্তুরাইজ এবং বোতলজাত করার জন্যে। এক মাসের ভেতরে ইউরোপের বাজারে এটি প্রাণের নামে পাওয়া যাবে।

প্রশ্ন: আপনারা শিশু খাদ্য উৎপাদন করছেন। এই খাদ্য উৎপাদনে তো খুব দায়িত্ব সহকারে করতে হয়?
এমডি আনিসুর রহমান: আমাদের কমপ্লিট একটা কম্প্ল্যায়েন্স বিভাগ আছে। তার ভেতরে ফুড সেফটি, গুড ম্যানুফ্রাকচারিং প্রাকটিস, আইএসও ৯০০০, ব্রিটিশ রিটেইল এই ধরণের বিভিন্ন সার্টিফিকেশন দিয়েই কিন্তু ১৪০টা দেশে আমরা পণ্য রপ্তানি করছি। প্রতিটি দেশে পণ্য রপ্তানি করতে গেলে সেই দেশে লাইসেন্সিং করতে হয়। তার জন্য সেসব দেশের অথরিটিগুলো আসে। ফ্যাক্টরি, ডকুমেন্টেশন ও ওয়েজেস পলিসিসহ নানা বিষয় দেখে সার্টিফিকেশন দেওয়ার পরেই পণ্য রপ্তানি করতে পারি আমরা।

প্রশ্ন: গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকাতেও প্রাণের পণ্য পাওয়া যায়- এই সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে বলুন?
এমডি আনিসুর রহমান: আমাদের কোম্পানির মিশন এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন থ্রু প্রফিট্যাবল অর্গানাইজেশন। আমাদের টার্গেট থাকে কিভাবে বেশি মানুষের কর্মসংস্থান করা যায়? এই জন্য আমাদের প্রাণের সেলস ডিষ্ট্রিবিউশনে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ কাজ করে। আমাদের প্রোডাক্ট এবং ভ্যারাইটি অনেক এই জন্য পরিবেশক, বিক্রয়কর্মী, এরিয়া ম্যানেজার সবকিছু মিলিয়ে আমরা এমন একটা মডেল করেছি যাতে মানুষ সহজেই পণ্য পেতে পারেন। ইউনিয়ন লেভেলেও আমাদের পরিবেশক আছে। ছোট ছোট বাজারে আমাদের ডিষ্ট্রিবিউটর আছে। একেকটা বাজারে ৩০-৩৫ জন ডিষ্ট্রিবিউটর থাকে এবং ৩০-৩৫ রকমেরই সেলস রিপ্রেজেন্টিটিভ আছে। একেকজন একেকটা প্রোডাক্ট নিয়ে মুভ করছেন।

প্রশ্ন: অনেক প্রতিষ্ঠান ব্র্যান্ডিংয়ে এগিয়ে থাকে কিন্তু কোয়ালিটি প্রোডাক্টে তেমনটা নয়- এই বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
এমডি আনিসুর রহমান: কনজ্যুমার আইটেমের ব্যবসা করতে গেলে প্রথমে ভোক্তার কাছে যেতে হবে। ভোক্তার কাছে যাওয়ার উপায় দুইটি। একটি হলো প্রোডাক্টটা চেনাতে হবে। আর চেনাতে গেলে অবশ্যই ব্র্যান্ডিং লাগবে। আর হলো ভ্যালু ফর মানি অর্থ্যাৎ প্রোডাক্ট কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে হবে। শুধু ব্র্যান্ডিং করে গেলে ভোক্তাকে বেশিদিন ধরে রাখা সম্ভব হবে না। প্রোডাক্ট ব্যবহারের পর তার মান নিয়ে সন্তুষ্ট না হলে হবে না।