প্রতিবারই ভাষার মাসে বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলায় অনেক বই প্রকাশ হয়। প্রচুর পাঠক লেখকের সমাগম হয় মেলাকে ঘিরে। মানুষের এই মহামিলন দেশের খুব কম আয়োজনেই ঘটে থাকে। বইমেলাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর অসংখ্য নতুন বই বের হয়, বহু নতুন লেখকের অভিষেক ঘটে। বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে একুশের গ্রন্থমেলা একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও এই মেলা ভূমিকা রেখেছে। বইমেলা উপলক্ষ্যে প্রচুর বই প্রকাশ হয়। সব বই যে মানসম্মত বা শিল্পসম্মত তা নয়। সব পাঠকও শিল্পসম্মত বই খুঁজে বেড়ান না। তবু প্রাণের এই মেলায় সারাদেশ থেকে ছুটে আসেন অসংখ্য বইপ্রেমী মানুষ। অনেকে গোটা বছর অপেক্ষা করেন এই মাসটির জন্য। মধ্যবিত্ত বই কেনার জন্য এখন একটি বাজেটও রাখে। এই প্রবণতা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি অসাধারণ ঘটনা। সবচেয়ে আশার দিক হচ্ছে, শিশুদের ব্যাপক অংশগ্রহণ, তাদের নিয়ে অনেক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন। শিশুদের সুস্থ মানবিক বিকাশে বইমেলার একটি প্রভাব রয়েছে। একথা অনস্বীকার্য যে বাঙ্গালীর এই প্রাণের মেলাটি একাধারে শিশুদের মনন বিকাশেও বড় ভূমিকা রাখছে। এরপরও বইমেলা নিয়ে অনেক প্রশ্ন। অনেক অলেখক লেখক হন, নামসর্বস্ব ভূইঁফোড় কিছু প্রতিষ্ঠান প্রকাশকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। যা-তা লেখা হয় মেলায় বই প্রকাশকে কেন্দ্র করে। এইসব অভিযোগ মেনে নিয়েও আমরা বলতে চাই, বইমেলাকে কেন্দ্র করে অনেক সুপাঠ্য বই বের হয়, অনেক মানসম্মত প্রয়োজনীয় বই আমরা পাই। এই মেলাকে কেন্দ্র করে অনেক পাঠকের আর্বিভাব ঘটে। সারা বছর তারা বই না কিনলেও মেলার সময় অনেকে বই কেনেন। কেউ কেউ তাদেরকে সাময়িক পাঠক বললেও একথা ঠিক যে কিছু হলেওতো তারা এসময় কিছু বই নিজেদের সংগ্রহে নেন, কিছু বই পড়েন। এটাই বা কম কী! আমরা চাই বাঙ্গালীর প্রাণের মেলা অমর একুশে গ্রন্থমেলা যেনো প্রকৃতই পাঠক-লেখকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।