চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

অনেক প্রশ্ন যৌক্তিক আক্ষেপ, তবুও টানটান পুরোটা সময়

‘কালের পুতুল’ এর সিনেমা রিভিউ

অনেক প্রশ্ন তৈরী হয় বিভিন্ন দৃশ্য দেখে। তৈরী হয় লজিক খুঁজে বের করার আবহ। অনেক জায়গায় থাকে আক্ষেপ অতৃপ্তি। কিছু কিছু সময় পোশাক ধারাবাহিকতার বিষয়টি নজরে পড়ে। বা দৃশ্যগ্রহণের  চকচকেপনার খামতিও ধরা পড়ে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে পুরোটা সময় মানে পুরোটা সিনেমা না দেখে ওঠার কথা মনেও আসেনা। তারওপর সিনেমাটা প্রচলিত ঘরাণার নয়। মানে প্রথাগত ফর্মূলার গান-নাচ বা মেলোড্রামা নেই। এসব থাকলে যে সেগুলো ভালো হতে পারেনা তা বলা হচ্ছেনা। সেই প্রথার বাইরে একদম আলাদা বিষয়ের একটা বাংলা সিনেমা তথা বাংলাদেশি সিনেমা টানা বসে কৌতুহল সহকারে কেন দেখা যেতে পারে? কেন মনে হয়না টাকা দিয়ে টিকেট কেটে সিনেমা হলে ঢুকে প্রতারিত হয়েছি?

কারণ, এর গতিময়তা। কারণ এর গল্প বলার ধরণ। সিনেমা হলে থাকা প্রত্যেক দর্শক জানতে পারছেন আগেই কে খুন করছে কীভাবে খুন হচ্ছে। কিন্তু সিনেমার চরিত্ররা সেগুলো জানতে পারছেনা। সিনেমার চরিত্রগুলো কিভাবে সত্য জানতে পারবে সেটা জানার তীব্র আকাঙ্খা দর্শককে ধরে রাখে শেষ পর্যন্ত। আলফ্রেড হিচকক ধরণের গল্প বলার বলার ভঙ্গি বাংলাদেশের সিনেমায় স্বার্থক প্রয়োগ করেছেন পরিচালক আকা রেজা গালিব। তার দীর্ঘ চলচ্চিত্র আন্দোলনের ছাপ পড়েছে চলচ্চিত্রটিতে। তবে কিছু ক্ষেত্রে তিনি নিয়ন্ত্রনহীন ছিলেন তা চলচ্চিত্রটি দেখলে বোঝা যায়। তবে প্রথম ছবির নির্মাতা হিসেবে নানা খামতি স্বত্বেও নির্মেদ ঝরঝরে সিনেমা উপহারের জন্য প্রশংসার দাবী রাখেন তিনি। বিভিন্ন ধরণের গল্প বলিয়ে সিনেমা নির্মাতা যত বাড়বে তত বাংলাদেশের সিনেমার খরা কাটবে বলে আশা করা যায়।

গল্পে রশীদ সাহেবের আমন্ত্রণে ১০ জন বিভিন্ন পেশার মানুষ একটি পাহাড়ি রিসোর্টে মিলিত হয়। তাদের অভ্যর্থনা জানান এক ক্ষুদ্র জাতিস্বত্বার প্রতিনিধি। কেউ কাউকে চিনত কি না প্রশ্নটি চিত্রনাট্যের গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। সেই রিসোর্টে থাকা একটি টেলিভিশনের মাধ্যমে জানা যায় এরা প্রত্যেকে খুনী। প্রশ্ন ওঠে রশীদ খান নামে আদৌ কি কেউ আছেন? রিসোর্টে থাকা ১০টি পুতুল একে একে খোয়া যাচ্ছে, কেন? সিনেমাটা দেখতে দেখতে মনে হবে আমরা প্রতিনিয়ত নিজেরা নিজেদের বিভৎস গোপনগুলো লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। বারবার মনে হবে আমরা নিজেরা নিজেদের খুন করার জন্য প্রতিদিন অদ্ভুতদর্শন সব অস্ত্র শান দিচ্ছি। আমরা জানি খুন হবে কিন্তু পরোয়া করছিনা।

ক্যামেলিয়া চরিত্রটি আরো বেশি বিকশিত হওয়ার সুযোগ ছিল যৌক্তিক ভাবে। কেন সে তার বাবা-মাকে খুন করে এর প্রেক্ষাপট জানতে পারলে ছবির গভীরতা বাড়তে পারত। চরিত্রটির টেকচারে আরো বৈচিত্র আসত। প্রতিটা চরিত্রের বেলাতে এমন সুযোগ ছিল।

এ ছবির অন্যতম প্রাপ্তি নায়ক ফেরদৌস, আশীষ খন্দকার, শাহেদ আলী এবং লুৎফর রহমান জর্জের অভিনয়। ট্র্যাকের বাইরে গিয়েও দারুন সাবলীল ফেরদৌস বুঝিয়ে দিয়েছেন শিল্পীর কাছ থেকে কাজ বের করে নিতে জানতে হয়। আশীষ খন্দকার প্রমাণ করেছেন তিনি কতটা শক্তিশালী অভিনেতা। তবে তার নিজেকেও অন্তত দর্শকের কথা ভেবে হলেও চলচ্চিত্রে নিয়মিত হওয়া উচিত। হয়ত কিছু ক্ষেত্রে তার রুচির সঙ্গে মিলবেনা কিন্তু সেই শক্তিশালী শিল্পী যে নিজের চিন্তা দিয়ে অন্যকে প্রভাবিত করতে পারে।

রাইসুল ইসলাম আসাদকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। যে চরিত্র করুক না কেন তার টেক্সট-সাবটেক্সট এমন ভাবে নিজের ভেতরে নিয়ে চরিত্রটা ফুটিয়ে তোলেন তা অনুকরণীয়। পাহাড়ে যখন উঠছেন তখন পরিশ্রমজাত ঘামের দেখা মেলে তার পোশাকে তখন বোঝা যায় কতটা অনুকরণীয় তিনি। শাহেদ আলীর চরিত্রটি সিনেমার অন্যতম অনুঘটক চরিত্র। তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। তার অভিব্যক্তিগুলো দারুণ ছিল। সিনেমার প্রায় পুরোটা সময় মাহমুদুল ইসলাম মিঠু সাবেক পুলিশের চরিত্রে শক্তিশালী অভিনয় করেছেন। ক্যামেলিয়া চরিত্রের জান্নাতুন নূর মুন সম্ভাবনার দীপশিখা জ্বালিয়েছেন গহীন বালুচর এর পর এমন ধারার ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে।

ডিগ্ল্যামারাইজ চরিত্রের পর গ্ল্যামারাইজ চরিত্রে নিজের সম্ভাবনাকে তুলে ধরেছেন। নবাগত আরিফ অর্ক চরিত্রের দাবী মিটিয়েছেন। গানের সময়ের অভিব্যক্তিতে যথাযথ ছিলেন। ঋতু সাত্তারকে কিছু সংলাপ প্রক্ষেপনে আড়ষ্ট এবং আরোপিত মনে হয়েছে। অভ্যর্থনাকারী চরিত্রে কমল চাকমা যথার্থ রহস্যময়তা তৈরী করেছেন। বিশেষ করে অস্ত্র হাতে দাড়িয়ে থাকা তার ভঙ্গি এবং চাহনি দারুন ছিল।

তবে সাইকোলজিকাল থ্রিলার ঘরাণার সিনেমাটির প্রাণ এর মিউজিকাল স্কোর। দুটি গান রয়েছে তা একদমই গল্পের প্রয়োজনে। টাইটেল গানটি রক ফিউশন ঘরাণার। আর অন্যটি সফট রোমান্টিক। সানী যুবায়ের ধ্রুপদী ঘরাণার হলেও নিজের মত করে সব কিছু আতস্থ করতে পারেন তা প্রমাণিত হয়েছে এ সিনেমায়। তবে সাইকোলজিকাল থ্রিলার এর যে শব্দগত চাহিদা তা যথাযথ পূরণ করেছেন তিনি। পুরো সিনেমাকে একসুরে বাঁধতে মিউজিকাল স্কোর বড় ভূমিকা রেখেছে।

কালের পুতুল টিমের একাংশ…

সারা দেশে ৬টি সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে আগাথা ক্রিস্টির রহস্য উপন্যাস ‘এন্ড দেয়ার ওয়ার নান’ অবলম্বনে নাসিফুল ওয়ালিদের চিত্রনাট্যে আকা রেজা গালিব পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘কালের পুতুল’। ঢাকার মধ্যে ছবিটি যাচ্ছে বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্স, বলাকা(নিউ মার্কেট), শ্যামলী সিনেমা হল। ঢাকার বাইরে খুলনার লিবার্টি, ময়মনসিংহের ছায়াবানি ও দিনাজপুরের মডার্ন। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত  সিনেমা ‘কালের পুতুল’ এর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস, বীথি রানী সাহা, জান্নাতুন নূর, শাহেদ আলী, রাইসুল ইসলাম আসাদ, লুৎফর রহমান র্জজ, মাহমুদুল ইসলাম মিঠু, আশিষ খন্দকার, ঋতু সাত্তার, আরিফ অর্ক প্রমুখ।