‘বেতন বোনাসের আশায় আজও কাজে এসেছি, আল্লাহ জানে বেতন বোনাস নিয়েই বাড়িতে ঈদ করতে পারবো কি না।’ ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসের দুপুরে এরকম অনিশ্চয়তায় কথা বলছিলেন মহাখালির এম ইয়ো ফ্যাশন লিমিটেডের এক কর্মী। তার নামসহ বিস্তারিত জানার আগেই চ্যানেল আই অনলাইন প্রতিবেদককে কারখানাটির নিরাপত্তাকর্মীরা বের হয়ে আসতে বাধ্য করেন।
শুধু এম ইয়ো গার্মেন্টস নয়। শ্রমিক নেতারা বলছেন, বেতন-বোনাস না পাওয়ার কারণে অনেক গার্মেন্টসের কর্মীর ঈদ উৎসব অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
সরকার ও মালিকপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১০ জুলাই বেতন ও ১৪ জুলাই ছিলো বোনাস দেওয়ার শেষ দিন। কিন্ত শ্রমিক এবং শ্রমিক নেতারা অভিযোগ করেছেন, পোশাক শিল্পের অনেক শ্রমিক বেতন এবং ঈদ বোনাস পাননি।
মালিকপক্ষ অবশ্য দাবি করেছে, দুয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া ৩৫ লাখ গার্মেন্টস কর্মীর সকলেই সময়মতো বেতন এবং ঈদ বোনাস পেয়েছেন। সরকারের প্রণোদনা তহবিলের ৮৭৫ কোটি টাকা সময়মতো ছাড় হওয়ায় বিষয়টি সহজ হয়েছে বলে তারা মন্তব্য করেছেন।
তবে গার্মেন্টস শ্রমিক ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সরকার শুধু নির্ধারিত তারিখের মধ্যে বেতন-বোনাস দেয়ার ঘোষণা দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে।
‘আমাদের হিসাব মতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ শতাংশ গার্মেন্টসের বেতন বাকি। আর বোনাস! সে তো সোনার হরিণ,’ এমন মন্তব্য করে মোশরেফা মিশু বলেন, সরকার যদি সক্রিয় ভূমিকা নিতো তা হলে এমনটি হতো না।’
কিন্তু মোশরেফার মিশুর দাবি নাকচ করে বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমই) এর সহ-সভাপতি মনসুর আহমেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, মোটামুটি সব কারখানায় ১০ তারিখে বেতন এবং ১৫ তারিখে বোনাস দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) জানিয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ ছোট ও মাঝারি এক হাজার ৩১৬টি কারখানা তারা মনিটরিং করেছেন। এর মধ্যে এক হাজার ৩১৪টি সময়মতো বেতন এবং এক হাজার ৩০৮টি বোনাস দিয়েছে। বাকি আটটি কারখানা যে বোনাস দিতে পারবে না তা শ্রমিকরা আগে থেকেই জানতো বলে বিজিএমইএ দাবি করেছে।
তাদের মতে, বুধবারের মধ্যে সব মিলিয়ে ৯৯ শতাংশ কারখানা বেতন পরিশোধ করেছে। বাকি দুয়েকটা কারখানা ছুটির আগেই পরিশোধ করবে বলে দাবি করেছে বিজিএমইএ সচিবালয়।
বিজিএমইএ সহসভাপতি রিয়াজ বিন মাহমুদ বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রামে সরকারের সহযোগিতায় সব কারখানায় বেতন বোনাস আমরা সময়মতো পরিশোধ করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে টাকাটা ছাড় হয়েছে সেটা অবশ্যই বেতন বোনাস পরিশোধে উপকার হয়েছে।
কিন্তু বিজিএমইএ’র বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে মোশরেফা মিশু বলেছেন: বিজিএমইএ কয়েকদিন আগে বলেছিলো, ৮০ ভাগ গার্মেন্টসে বেতন বোনাস দেওয়া হয়েছে। আবার দুই দিন আগে বলেছিলো, শতভাগ শ্রমিককে বেতন ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্ত বাস্তবতা ভিন্ন। ঈদ এলে বিজিএমইএ সবসময়ই এমন টালবাহানাই করে।
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিনও একইরকম অভিযোগ করছেন। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, শ্রমমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ১০ তারিখের মধ্যে বেতন ও ওভারটাইমের টাকা পরিশোধ করার কথা। কিন্ত তারা দেয় নাই। ১৪ তারিখের মধ্যে বোনাস পরিশোধ করার কথা। সেটাও তারা দেয় নাই। আমাদের হিসাবমতে, ৩৫ শতাংশ গার্মেন্টস কারখানা ঠিক সময়ের মধ্যে বেতন পরিশোধ করেনি, ৩০ শতাংশের মতো গার্মেন্টস নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বোনাস দেয়নি।
সময়মতো গার্মেন্টসগুলোতে বেতন বোনাস না হওয়ার জন্য তিনি সরকার, বিজিএমইএ এবং ট্রেড ইউনিয়নের দুর্বলতাকে দায়ী করেছেন। ‘আমরা যারা ট্রেড ইউনিয়নে আছি, তারা তো সব গার্মেন্টেসের খোঁজ নিতে পারি না। যদি প্রত্যেক কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন থাকতো তবে আমাদের ক্ষেত্রে মনিটরিং করা সহজ হতো,’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ’র সদস্য প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কারখানা। এর মধ্যে তিন হাজার বিজিএমইএ এবং দেড় হাজার নীটওয়্যার উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএ’র। গার্মেন্টস খাতে মোট শ্রমিক-কর্মচারি প্রায় ৩৫ লাখ।