চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

অনেক উন্নত দেশেও বাংলাদেশের মতো গণমাধ্যম স্বাধীন নয়: তথ্যমন্ত্রী

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা উল্লে­খ করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন: বাংলাদেশের গণমাধ্যম যে পরিমাণ স্বাধীনতা ভোগ করে, অনেক উন্নত দেশেও এ পরিমাণ স্বাধীনতা ভোগ করে না।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘৫০ বছরে গণমাধ্যমের অর্জন ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন: যুক্তরাজ্যে একটি ভুল সংবাদ পরিবেশনের কারণে ১৬৭ বছরের পুরনো পত্রিকা ‘নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’, যেটি এক সময় বহুল প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক ছিল, সেটি বন্ধ হয়ে যায়। বিবিসিকে পৃথিবীর প্রথম সারির গণমাধ্যম হিসেবে ধরা হয়, সেখানে একজন এমপির বিরুদ্ধে অসত্য সংবাদ পরিবেশনের প্রেক্ষিতে মামলা হয়। সেজন্য বিবিসির প্রধান নির্বাহী থেকে শুরু করে পুরো ‘টিমকে’ পদত্যাগ করতে হয়েছে। কিন্তু অসত্য বা ভুল সংবাদ পরিবেশনের জন্য বাংলাদেশের কোনো সংবাদপত্র বন্ধ হয়নি।

তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, যুক্তরাজ্যে প্রতিনিয়ত ভুল সংবাদ পরিবেশনের জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমকে মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে হয়। আমাদের দেশে অসত্য সংবাদ, ভুল সংবাদ পরিবেশিত হয় না এটি কেউ বলতে পারবে না; প্রচুর হয়। কিন্তু এ অসত্য বা ভুল সংবাদ পরিবেশনের কারণে কোনো সংবাদপত্র বন্ধ হয়েছে এমন ঘটনা ঘটেনি।

আমাদের দেশে কোনো একজনের বিরুদ্ধে ভুল সংবাদ পরিবেশন করা হলে প্রতিবাদটিও সমান গুরুত্বে ছাপা হওয়া এবং টিভিতে কোনো অসত্য প্রতিবেদন হলে তার প্রতিবাদও সমগুরুত্বের সঙ্গে প্রচার হওয়ার বিষয়ে যত্নবান হওয়া আবশ্যক, উল্লে­খ করেন ড. হাছান।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ আইন সারা দেশের সবার ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য। এটি কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য নয়।

কোনো সাংবাদিকের চরিত্রহরণ করে বা তার পরিবারের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখা হলে তিনি কোন আইনের বলে প্রতিকার পাবেন?- প্রশ্ন রেখে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বিশ্ব যখন ছিল না তখন ডিজিটাল আইনের প্রয়োজনও ছিল না। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিয়ে এত কথা হচ্ছে, ডিজিটাল আইনের মতো ভারতে ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যাক্ট এবং সারা বিশ্বের এ বিষয়ে আইন রয়েছে।

তবে আইনের যেন অপপ্রয়োগ না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখা আবশ্যক-যাতে কেউ অহেতুক নিগৃহীত না হয়, আমিও আইনের অপপ্রয়োগের বিপক্ষে-বলেন ড. হাছান মাহমুদ।

দেশে গণমাধ্যমের অর্জন নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ৫০ বছরের প্রান্তে আজ গণমাধ্যমের অনেক বিকাশ ঘটেছে। গত ১২ বছরের কথা আমি বলতে চাই। ১২ বছর আগে বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ছিল সাড়ে ৪শ’। এখন দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা সাড়ে ১২শ’। ১২ বছর আগে টেলিভিশনের সংখ্যা ছিল ১০টি, প্রাইভেট টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রথমবার দায়িত্ব গ্রহণের পর। এখন সম্প্রচারে আছে ৩৪টি টিভি চ্যানেল, আরও আসার অপেক্ষায় আছে ১১টি। অনলাইন গণমাধ্যম ১২ বছর আগে হাতেগোনা কয়েকটি ছিল। এখন কয়শ’ কিংবা কয় হাজার সেটি দেখার বিষয়। তবে আমাদের কাছে ৫ হাজার আবেদন জমা পড়েছে নিবন্ধনের জন্য। আমরা ইতোমধ্যেই কিছু নিবন্ধন দিয়েছি, আরও দেওয়া হবে, প্রক্রিয়া চলছে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, শওকত মাহমুদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন বাদশা, ডিআরইউ’র স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, সদস্য সচিব এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাইদুর রহমান।

ডিআরইউ সভাপতি মুরসালিন নোমানীর সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

সভা শেষে সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত ‘সিটি ব্যাংক-ডিআরইউ ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট’ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী।