সূর্যাস্তের পর থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি, সামরিক ব্যক্তিবর্গ, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রাপ্ত সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি ছাড়া অন্যান্য সকলের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও এর আশেপাশের এলাকায় প্রবেশ ও অবস্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪(৩) ধারায় বিধানাবলে বুধবার সন্ধ্যায় এ আদেশ জারি করেন জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন। এ আদেশের পর থেকে এখন থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনুমতি ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা রহমান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘নির্ধারিত ব্যক্তি ব্যতীত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অন্য কারও প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জেলা প্রশাসন। নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে কেউ যেনো ব্যবহার করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সংযুক্ত করতে না পারে, সেজন্য এই ব্যবস্থা।’
কেউ এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪(৩) ধারায় বিধানাবলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
উখিয়ার কুতুপালং থেকে টেকনাফের মধ্যবর্তী ২০০০ একর জায়গায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প গড়ে উঠেছে। সেখানে প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রায়শই ঘটছে নানা অনাকাঙ্খিত ঘটনা। বসবাসরত বিশাল এ জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা, ত্রাণ বিতরণে শৃঙ্খলা, দালালদের হাত থেকে রোহিঙ্গাদের রক্ষা এবং অসহায় রোহিঙ্গাদের কেউ যেনো কোনরকম নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত মারা গেছে অসংখ্য মানুষ, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে।
সেনাবাহিনীর হামলা ও সহিংসতার মাত্রার ভয়াবহতার কারণে জাতিসংঘ একে ‘পাঠ্যবইয়ে যোগ করার মতো জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।