৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ পালন করেছে আওয়ামী লীগ। আর ওইদিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উল্লেখ করে ৭ জানুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চেয়েছিলো বিএনপি। তবে, অনুমতি মেলেনি। এবারই যে বিএনপি সমাবেশের অনুমতি পেলো না, এমন নয়। অতীতেও এরকম ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকারের এ আচরণই প্রমাণ করে যে তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুলিশ ঘিরে রাখা অবস্থায় এক ব্রিফিংয়ে সারাদেশে রোববার বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আজকের কর্মসূচিতে বাধা ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় ‘বর্বরোচিত হামলা’ এবং ‘কালো পতাকা মিছিল ও কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচিতেও বাধা’র অভিযোগ এনেছেন। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে অতীতে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে নাশকতার ঘটনা ঘটেছে, হামলা-ভাঙচুর হয়েছে; কিছু ক্ষেত্রে অরাজক পরিস্থিতিও আমরা দেখেছি। কিন্তু, এটাও ঠিক যে সমাবেশ কর্মসূচি ছাড়াও এরকম ঘটনা ঘটেছে। সেটা কখনো হয়েছে হরতালের নামে, কখনো অবরোধের নামে, কখনো অন্য কোন কর্মসূচির নামে। সেক্ষেত্রে সমাবেশ কর্মসূচি থেকেই বরং এরকম ঘটনা ঘটেছে কম। আর যদি জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাবের কথা বিবেচনা করি, তাহলে বলতে হয় নিকট অতীতেই আমরা রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনের শোভাযাত্রা দেখেছি, ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবসে’ও সরকারি দলের রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে তীব্র যানজট হতে দেখেছি। সুতরাং, এটা বলা যায় না যে সরকার সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিজনিত কোন কারণ থাকলে সেটা পুলিশকে স্পষ্টভাবে বলতে হবে। এরকম যদি হয় যে সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি বা অন্য কোন দলের কেউ কোন ষড়যন্ত্র করছে এবং গোয়েন্দাদের সেটা জানা তাহলে ‘অপরাধ সংঘটনের অভিপ্রায়ে’ তাদেরকে গ্রেফতার করা হোক, মানুষকে জানতে দেয়া হোক। না হলে সরকারের বিরুদ্ধে একনায়কতন্ত্র কায়েম চেষ্টার যে অভিযোগ সেটাই প্রমাণ হয়। অতীত নৈরাজ্যের জন্য সরকার বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে, মামলাগুলো চলছে, সময়মতো রায় হবে। রায়ের জন্য সরকারি দল নিশ্চয়ই অপেক্ষায় আছে। কিন্তু, বিরোধীদল এবং বিরুদ্ধ মত ও পথকে দলন করে গণতন্ত্র বিকশিত হয় না। সমাবেশের অনুমতি না দিয়ে নিজেদেরকে গণতান্ত্রিক প্রমাণ করা যায় না। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে বিরোধীদলকে যেমন দেয়ালের বাইরে কথা বলতে দিতে হবে, তেমনি তাদের কোন দাবি যৌক্তিক হলে সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে। গত নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি কতোটুকু ভুল করেছে না করেছে, সেটা তাদের নিজস্ব পর্যালোচনা এবং আত্মসমালোচনার বিষয়; সরকারি দলের নেতারা বারবার এ ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে তাদেরকে মতপ্রকাশ থেকে দূরে রাখতে পারেন না। দেশে এখন সামরিক শাসনামলের মতো ঘরোয়া রাজনীতি নেই যে সরকার বড় একটি রাজনৈতিক দলকে ময়দানে সমাবেশ করতে দেবে না। সমাবেশের অনুমতি না দেয়ার সংস্কৃতি যতো দ্রুত শেষ হবে ততোই তা দেশ, সরকার এবং গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গল।