করোনাকালের শুরু থেকেই যেন একের পর এক দুঃসংবাদ। প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল। এরমধ্যে ছিল সুপার সাইক্লোন আম্পান। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো আরও একটি দুর্ঘটনা। নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণ। এখানেও ক্ষণে ক্ষণে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এলাকা স্বজনহারাদের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠছে। এখন পর্যন্ত বিস্ফোরণের ঘটনায় ১৮ জন মারা গেছেন। এখনও অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তাতে অর্ধশত মানুষ দগ্ধ হয়। যাদের মধ্যে গুরুতর ৩৬ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিটিউটে ভর্তি করা হয়েছিল। এশার নামাজের সময় ঘটা ওই বিস্ফোরণে দগ্ধদের উদ্ধার করে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় তাদেরকে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিটিউটে ভর্তি করা হয়।
বিস্ফোরণে মসজিদের ভেতর আগুন জ্বলে উঠে এবং কাঁচ ভেঙে মুসল্লিরা আহত হয়। মসজিদের ভেতরের ৬টি এসি দুমড়ে মুচড়ে গেছে। ২৫টি সিলিং ফ্যানের পাখা বাঁকা হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে মসজিদের এসি থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধারণা করা হলেও পরে ফায়ার সার্ভিস জানায়, ওই মসজিদের নিচ দিয়ে যাওয়া গ্যাস পাইপ লিকেজের কারণে বিস্ফোরণ ঘটে।
দুঃখজনক হলেও এটাই বাস্তব সত্য যে, এদেশে যেকোন দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো যতটা তৎপর হয়ে ওঠে, দুর্ঘটনার আগে তেমনটা দেখা যায় না।
এখানেও স্থানীয়রা গণমাধ্যমকে যেসব তথ্য দিয়েছেন তা রীতিমত গতানুগতিক। ওই মসজিদের নিচে দিয়ে যাওয়া গ্যাসের পাইপ লিকেজের কথা আগে জানানো হলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আমলে নেয়নি বলে অভিযোগ। এই দায়িত্বহীনতার কারণেই এমন দুর্ঘটনা আর এত প্রাণহানি।
মসজিদে বিস্ফোরণ কেন হলো, তা তদন্তে ইতোমধ্যে একাধিক কমিটি করা হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ হয়তো এসব কমিটি খুঁজে বের করবে। সঙ্গে থাকতে পারে কিছু সুপারিশ। কিন্তু আগের মতো সেসব সুপারিশ ফাইলবন্দী থাকবে না বলেই আমরা বিশ্বাস করতে চাই। কেন এমন দুর্ঘটনা ঘটলো তার প্রকৃত কারণ জেনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ভবিষ্যতে কোথাও যেন এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা না ঘটে তা-ও নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের শিথিলতা প্রদর্শন করা যাবে না।
এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের গভীর শোক ও সমবেদনা। আর আহতদের সুস্থতা কামনা করছি। একইসঙ্গে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে যার যার অবস্থান থেকে সচেতন হতে আমরা সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।