চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

অনিশ্চয়তায় ক্রেডিট কার্ডের নতুন সুদের হার বাস্তবায়ন

গ্রাহকদের কাছ থেকে ক্রেডিট কার্ডের সেবার বিনিময়ে উচ্চ হারে সুদ নিচ্ছে দেশের ব্যাংকগুলো। এর লাগাম টানতে প্রথমবারের মতো সুদের হার বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এখনও এই খবর জানে না অধিকাংশ ব্যাংক। অনেকে জানলেও সভা করে পরে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে কেউ কেউ। ফলে বেঁধে দেওয়া সুদের হার কবে থেকে কার্যকর হবে তাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

দেশের রাষ্ট্রায়াত্ব ও বেসরকারি খাতের কয়েকটি ব্যাংকের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গত বৃহস্পতিবারে জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এখন থেকে ব্যাংকগুলো যে সুদে ভোক্তা ঋণ দিয়ে থাকে, তাদের ক্রেডিট কার্ডে সুদের হার তার চেয়ে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ বেশি নিতে পারবে। বর্তমানে ভোক্তা ঋণের সুদ হার সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশ। আর ক্রেডিট কার্ডে ব্যাংকগুলো সুদ নিচ্ছে সর্বনিম্ন ২৪ শতাংশ থেকে ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত।

রাষ্ট্রায়াত্ব সোনালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক কামরুজ্জামান চৌধুরী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, প্রজ্ঞাপন সম্পর্কে এখনও জানিনা। তবে অর্থমন্ত্রনালয় থেকে আইন পাশ হয়েছে জানি। প্রজ্ঞাপন জারি হলেও ব্যাংক অভ্যন্তরীণ সভা ঢেকে তা সিদ্ধান্ত নেয়া হবে যে, কবে থেকে তা কার্যকর হবে।

প্রায় একই কথা জানালেন জনতা ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে আমি অফিসের বাইরে। তাই বিষয়টি এখনও জানি না। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইন করলে তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করা হবে।

না জানার তালিকায় বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকও রয়েছে।

বেসরকারি ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরামকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যক্তিগত সচিব জানান, প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে স্যার এখনও কিছু জানে না। না জেনে কথা বলবেন না।

মধূমতি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, বিষয়টি হয়তো ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলতে পারবেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান রুবেল আজিজ বলেন, আমি দেশের বাইরে ছিলাম। ক্রেডিট কার্ডের প্রজ্ঞাপন সম্পর্কে জানি না। খোঁজ নেব।

 

তবে প্রজ্ঞাপন জারির কথা শুনলেও তা বাস্তবায়নে সময় লাগবে বলে মনে করে কোনো কোনো ব্যাংক।

ঢাকা ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আব্দুল হাই শিকদার বলেন, পত্রিকায় দেখেছি। ব্যাংকগুলো তাদের সভা ডেকে হয়তো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে। সেক্ষেত্রে সময় লাগতে পারে। এটা হয়তো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হতে হতে জুলাই মাস লেগে যেতে পারে।

বেসরকারি যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল আলম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে শুনেছি। বৈঠক করে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ থেকে, নাকি ব্যাংকের বাস্তবায়নের তারিখ থেকে ক্রেডিট কার্ডের সুদ হিসেব করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, সুদ হিসেব কার্যকরের তারিখ নিয়ে খুব সমস্যা হবে না। প্রজ্ঞাপন জারি ও আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাঝামাঝি সময় থেকে হয়ত সুদ হিসেব করা হতে পারে। তবে একটু সময় লেগে যেতে পারে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান চ্যানেল আইন অনলাইনকে বলেন, এই মূহূর্তে আমি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছি। প্রজ্ঞাপন সম্পর্কে কিছুই জানি না। না জেনে মন্তব্য করতে রাজি নই। ২৩ মে বাংলাদেশে আসবো। তারপর সিদ্ধান্ত।

তবে এ বিষয়ে কঠোর রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, যেদিন থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে সেদিন থেকেই নতুন হারে সুদ ধার্য করতে হবে ব্যাংকগুলোকে। শুধু তাই-নয় ওই আদেশে সুদ হার ছাড়াও যেসব শর্ত দেয়া আছে তার সবগুলোই পরিপালন করতে হবে।

ভোক্তা ঋণ বা কনজিউমার লোন বলতে বুঝায়, সাধারনত গৃহঋণ, মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারসহ ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়ি কেনা বাবদ, চিকিৎসা এবং বিয়েসহ ব্যক্তিগত প্রয়োজনের পাশাপাশি গৃহস্থালি পণ্য কেনার জন্য প্রদত্ত ঋণ। এর পরিমাণ হতে পারে ১০ হাজার থেকে ১ কোটি টাকার বেশি। বিভিন্ন মেয়াদে পরিশোধ করার সুযোগ দেয়া হয় গ্রহীতাদের। ব্যাংকভেদে এ ঋণের সুদের হার হয় আলাদা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তফসিলভুক্ত ৫৭ টি ব্যাংকের মধ্যে ৩০টি বর্তমানে ক্রেডিট কার্ডে ঋণ সুবিধা দিয়ে আসছে।