বিশ্ব চলচ্চিত্রে দুই ভাইয়ের যৌথ পরিচালনায় বহু ফিকশন, নন-ফিকশন নির্মিত হয়েছে। এই সময়েও কোয়েন ব্রাদার্স, ফ্যারেলি ব্রাদার্স, রুশো ব্রাদার্সরা একসঙ্গে নির্দেশনা দিচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ের বাংলায় দুই ভাইয়ের যৌথ পরিচালনার ঘটনা বিরল। তবে এবার সামনে এলো নতুন ব্যতিক্রম!
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। দেশের প্রতিষ্ঠিত নির্মাতা। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ভাই-ব্রাদার্স সঙ্গে নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। তবে এবার নতুন ব্যতিক্রম ঘটালেন মেধাবী এই নির্মাতা। প্রথমবারের মতো সহোদর গোলাম কিবরিয়া ফারুকীকে সঙ্গে নিয়ে নির্মাণ করলেন ‘অনির্বাণ ২০১৯’ নামের একটি ডকু-ফিকশন। যার ইংরেজি নাম ‘রাইজ অব ঈগল’।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অনলাইনে মুক্তি পাওয়ার পর প্রশংসায় ভাসছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী নিবেদিত এই ডকু-ফিকশনটি। গেল শনিবার রাতে বাংলাদেশে টেলিভিশনেও প্রচারিত হয় এটি। তবে অনলাইনেই বেশি প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন ‘ফারুকী ব্রাদার্স’! বিমান বাহিনীর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ, ছবিয়ালের অফিশিয়াল পেইজ থেকে মুহূর্তেই ছড়িয়ে যায় ‘অনির্বাণ ২০১৯’। শুধু তাই নয় নামি, বেনামি ফেসবুক ও ইউটিউবে লাখ লাখ ভিউসহ দর্শকের সরাসরি প্রশংসা পাচ্ছেন দুই নির্মাতা।
কী আছে ‘অনির্বাণ ২০১৯’-এ?
গোলাম কিবরিয়া ফারুকী বলেন: চল্লিশ মিনিটের একটি ডকু-ফিকশন ‘অনিবার্ণ ২০১৯’। ইন্তেখাব নামের একজন দুর্বল চিত্তের ক্যাডেটের মাধ্যমে দেখানো হয় যে, কীভাবে বাংলাদেশ এয়ারফোর্স একাডেমি দুর্বল চিত্তের একজনকে দৃঢ় মনোবলের দক্ষ পাইলট হিসেবে গড়ে তুলে।
‘অনিবার্ণ ২০১৯’ নিয়ে অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে গোলাম কিবরিয়া বলেন: এটা যদিও ফিল্ম না কিন্তু আমরা এটাকে ফিল্ম হিসেবে শুট করেছি। যেহেতু সরয়ার (মোস্তফা সরয়ার ফারুকী) ভাইয়ের নামটা এখানে জড়িত, আর ভাইয়ের সাথে আমারও যেহেতু এটি প্রথম কো-ডিরেকশন! সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি কাজটা শেষ করতে। রীতিমত জান দিয়ে দেয়ার মতো ঘটনা আরকি!
এই প্রজেক্টের সাথে আপনি যুক্ত হলেন কীভাবে?
এই প্রজেক্টটি নিয়ে সরয়ার ভাই যখন প্রথম বললেন, তখন কোনো কিছু না ভেবেই কিন্তু আমি রাজি হয়ে যাই। তিনি আমার ভাই বলে বলছি না, যেহেতু তিনি এখন ইন্ডাস্ট্রিতে একজন প্রতিষ্ঠিত নির্মাতা। ডিরেক্টর হিসেবে তাকে রেসপেক্ট করি, তাছাড়া তিনি আমার মেন্টর।
ফারুকী পরীক্ষিত একজন নির্মাতা। তার সঙ্গে যৌথ-পরিচালনা করতে গিয়ে কখনো কি মনে হয়েছে যে, আপনি কমফোর্ট পাচ্ছেন না?
এর আগেও উনার প্রজেক্টে কাজ করে অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার, কিন্তু এটাই প্রথম কো-ডিরেকশন। ২/৩ বছর আগে যদি সরয়ার ভাই কো-ডিরেকশনের এমন প্রস্তাব দিতেন হয়তো আমি রাজি হতাম না ভয়ে। আমার হয়তো মনে হতো, কো-ডিরেকশনে গেলে উনার কথায় কী আমাকে সবসময় শুনতে হবে? নাকি তিনি আমাকে স্পেস দিবেন? কিন্তু ‘অনিবার্ণ ২০১৯’ কাজটি করতে গিয়ে দেখলাম যে, না। তিনি অন্য এক মানুষ। দেখলাম, তিনি শুটিংয়ে খুবই লিবারেল, আমাকে স্পেস দিচ্ছেন। নিজের মত শুট করতে পারা, এডিট করতে পারা কিংবা পোস্ট প্রোডাকশনের কাজগুলো করতে পারার ফ্রিডম দিচ্ছেন। আর এসব কারণে কাজ শেষ হওয়ার পর মনেই হয়নি যে আমি মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ভাইয়ের সাথে কাজ করেছি!
ছোট ভাই হিসেবে কোনো সুবিধা কি পেয়েছেন?
কাজের ক্ষেত্রে সরয়ার ভাইয়ের কাছে ভাইয়ের টাইম নাই! যখন তিনি কাজে নামেন তখন তিনি খুবই স্ট্রিট ফরওয়ার্ড। আমাদের মিটিং থেকে শুরু করে প্রি-প্রোডাকশন, শুটিং, পোস্ট-প্রোডাকশনে সমস্ত কাজ টাইম টু টাইম আমাদের করতে হয়েছে। এসব কাজে এক মিনিট দেরি করলে কোন ছাড় নাই। তিনি আমার ভাই, এই এক্সিউজ দিয়ে আমি এক মিনিট পরে যাবো, এটাতে তিনি কখনোই ছাড় দেবেন না।
দুই ভাই মিলে যৌথ-পরিচালনা করেন, এই মুহূর্তে বিশ্ব সিনেমায় অনেক নামকরা পরিচালক আছেন। আমরা কি চলচ্চিত্র পরিচালনাতেও ‘ফারুকী ব্রাদার্স’কে সামনে পাবো?
যেহেতু কো-ডিরেকশন আমরা প্রথমবারের মত দিলাম, তো সামনে আরো এরকম সুযোগ আসলে অবশ্যই আমরা যৌথভাবে কাজ করব। ব্যক্তিগতভাবে আমার তো অবশ্যই ইচ্ছা আছে সরয়ার ভাইয়ের সাথে কাজ করার, ডিরেকশন দেয়ার। কারণ ওনার সাথে কাজ করলে অনেক কিছু শেখা যায়, ‘অনিবার্ণ ২০১৯’-এ কাজ করে দেখলাম সহ-পরিচালককেও তার নিজস্ব ভাবনা চিন্তার স্পেস দেন। যেটা আমার জন্য খুব জরুরী। সেই জায়গা থেকে বললে যদি আবার কখনো সুযোগ আসে আমাদের একসাথে ডিরেকশন দেয়ার, তাহলে আমি কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে যাবো।
নির্মাতা হিসেবে ‘অনির্বাণ ২০১৯’ নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট?
গেল বছরের মাঝামাঝি সময়ে এটার শুট করি। কিন্তু তার আগে এর প্রি-প্রোডাকশন করেছি প্রায় এক মাসের মত। পুরোপুরি ফিচার ফিল্ম-এর মত করে আমরা এর প্রোডাকশন গুছিয়েছি। যে পরিশ্রম আমরা করেছি, আমার মনে হয় তার ফলাফল এটা রিলিজের পর থেকে পেতে শুরু করেছি। এতো এতো মানুষ এই কাজটির প্রশংসা করছেন, নিজেরাই স্বউদ্যোগী হয়ে কাজটি সোশাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে দিয়েছেন। মানুষের এই প্রশংসায় বলতে পারি, এই প্রজেক্টটি নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। পুরো প্রজেক্টটি বাস্তবায়নে আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন বাস্তবায়নে ছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন সৈয়দ ফকরুদ্দিন মাসুদ, উইং কমান্ডার মুস্তারী দিলশাদ ও ফ্লাইং অফিসার আবীর মাহমুদ খান। ডকু-ফিকশনটির বিভিন্ন চরিত্রে ছিলেন এয়ার কমোডর সাইফ সিদ্দিকী (অবসরোত্তর ছুটি), এয়ার কমোডর মো. বদরুল, এয়ার কমোডর হায়দার আবদুল্লাহ, উইন্ড কমান্ডার ওয়াসিম মুস্তাক, স্কোয়াড্রন লিডার মো. রোকনুজ্জামান, স্কোয়াড্রন লিডার সরওয়াত পারভীন, ফ্লাইং অফিসার তানভীর ইবনে আজীজ জীম ও ফ্লাইং অফিসার লাবীব।
খুব দুর্দান্ত কাজ করছেন আমাদের সিনেমাটোগ্রাফার গোলাম মাওলানা নবীর ও দ্বিতীয় ক্যামেরা পারসন রফিকুল ইসলাম। দুজনই খুব পরিশ্রম করেছেন এই প্রোডাকশন এর জন্য। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।