চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘অনলাইন সংবাদমাধ্যমে নৈতিকতার চর্চা প্রয়োজন’

বনানীতে ‘ধর্ষণের শিকার’ দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মধ্যে একজনের জবানবন্দি প্রকাশে নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, চলচ্চিত্র এবং ফটোগ্রাফি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভুঁইয়া।

শনিবার দুপুরে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলাট্রিবিউনের ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ‍উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

অধ্যাপক শফিউল আলম ভুঁইয়া বলেন, যারা ‘ধর্ষণের শিকার’ হয়েছেন তাদের জবানবন্দি আমরা যখন প্রকাশ করে দিলাম, আমার মনে হয় এটা স্বচ্ছতার প্রশ্ন নয়, এটা নৈতিকতার প্রশ্ন।

বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় সূত্রবিহীন খবরের প্রকাশ সম্পর্কে তিনি বলেন, সংবাদপত্র এবং অনলাইন পত্রিকাগুলোর রিপোর্ট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় অনেক জায়গায় নির্ভরযোগ্য কোন সূত্র নেই। ওই প্রতিবেদনের অধিকাংশই জানা গেছে, শোনা গেছে জাতীয় শব্দে ভর্তি।

অনলাইনে যখন কোন সংবাদ প্রকাশিত হয় তখন তার কোন সীমানা থাকে না বলে অন্য সব সংবাদমাধ্যম থেকে অনলাইন পত্রিকাগুলোর দায়িত্ব অনেক বেশি বলে মনে করেন তিনি।

সকলের নৈতিকতা চর্চার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে সাপ্তাহিক এর সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা বলেন, ‘আমাদের সরকারের চরিত্র এমন যে, অনলাইন সংবাদপত্রের নীতিমালা করতে গেলে গলা চেপে ধরবে। রাজনৈতিক কারণে সাংবাদিকরাও বিভক্ত। আমলাতন্ত্রের ওপর দায় চাপিয়ে আমার দায় এড়িয়ে যেতে চাই। সকলের ঐক্যবদ্ধভাবে নৈতিকতার চর্চা প্রয়োজন।’

অনলাইনের সংবাদপত্রের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তুলনা চলে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সাংবাদিকতার জন্য লাইসেন্স দেয়া জরুরি বলে মন্তব্য করে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক বলেন, অনলাইন একটি বিশাল পরিসর। এখানে তিন ধরনের দায়বদ্ধতা আমি দেখি- প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতা, রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা ও কমিউনিটির দায়বদ্ধতা।

‘সাময়িক হিট পাওয়ার জন্য নিউজ করলেও সামগ্রিভাবে পাঠকের বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যাবে। নীতিমালার কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু এখনও হয়নি। সাংবাদিকতাকে দায়বদ্ধতার মধ্যে আনার জন্য রাষ্ট্রের ভূমিকা প্রয়োজন।’

শেষ বিচারে পাঠকই সব মন্তব্য করে দৈনিক প্রথম আলোর বিদেশ সংস্করণের সম্পাদক সেলিম খান বলেন, পাঠকরা কোথায় সঠিক খবর পাবেন, সেটা তারাই বিচার করেন।

‘প্রথমে ভুল খবরে বিভ্রান্ত হতে পারেন পাঠকরা। কিন্তু সবশেষে পাঠকরা বুঝে নেন কোথায় সঠিক খবর পাবেন।’

বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমের হেড অব নিউজ মাহমুদ মেনন খান বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখনও অনলাইন মিডিয়ার ধারণা বিষয়ে এখনও পরিষ্কার হয়নি। ফলে মূল ধারার সঙ্গে একটি নাম সর্বস্ব অনলাইনকে মিলিয়ে ফেলেন।’

অনলাইন সংবাদমাধ্যমের কারণে সারাবিশ্বে সাংবাদিকতার ধরন পাল্টে গেছে বলেও মত দেন তিনি।

সাংবাদিকতায় নৈতিকতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বিডিনিউজের হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স গাজি নাসিরুদ্দিন আহমেদ খোকন বলেন, সাংবাদিকতা করতে সাংবাদিকতার উপর ডিগ্রি করার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। তবে নৈতিকতার প্রয়োজন রয়েছে। অনলাইনের নীতিমালা যদি দরকার হয়, তবে ইন্ড্রাস্ট্রির লোকেরা করবে।

সংবাদমাধ্যমকে পাঠকের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের উপর জোর দিতে হবে বলেও মত দেন তিনি।

এছাড়া বিনোদনের চেয়ে মূল ধারার সংবাদই অনলাইন সংবাদমাধ্যমে বেশি গুরুত্ব পেয়ে এসেছে বলে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বক্তব্য দেন নাট্যাভিনেত্রী ও বাংলা ট্রিবিউনের হেড অব মার্কেটিং বন্যা মির্জা।

আলোচনায় বিষয়ের ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বাংলা ট্রিবিউনের প্রধান প্রতিবেদক উদিসা ইসলাম। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির হেড অব নিউজ হারুন উর রশীদ।

‘অনলাইন সাংবাদিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা’ শীর্ষক সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাপ্তাহিক সম্পাদক গোলাম মোর্তজা, প্রথম আলোর বিদেশ সংস্করণ সম্পাদক সেলিম খান, বিডিনিউজের হেড অব নিউজ গাজী নাসিরুদ্দিন খোকন, ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক, বাংলা নিউজের ২৪ এর হেড অব নিউজ মাহমুদ মেনন খান, বাংলা ট্রিবিউনের হেড অব মার্কেটিং বন্যা মির্জা প্রমূখ।