চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

অনলাইনে সিনেমা মুক্তি নিয়ে দুই ভাগ বলিউড

ব্যবসাসফল কোনো সিনেমা মুক্তি পেলে ভারতের প্রযোজকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ঢুকে কাড়ি কাড়ি টাকা। এরপর কোন সিনেমায় অর্থ খাটানো যায় সেই পরিকল্পনা শুরু করেন তারা। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সিনেমা মুক্তি না পাওয়ায় আটকে আছে বহু প্রযোজকের টাকা। গত কয়েক মাসে সিনেমা থেকে কোনো অর্থই আয় হয়নি তাদের।

অন্যদিকে আছেন প্রদর্শকরা, যারা নির্ভর করেন এসব বড় বাজেটের ব্যবসাসফল ছবির ওপর। কোনো সিনেমা যেহেতু শিগগির মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাদেরও কাটছে কঠিন সময়। মহামারী শেষ হওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছেন তারা।

এর মাঝেই জানা গেছে ‘গুলাবো সিতাবো’, ‘শকুন্তলা দেবী’ সহ আরও বেশ কিছু প্রতীক্ষিত সিনেমা মুক্তি দেয়া হবে অনলাইনে। শোনা যাচ্ছে, অক্ষয় কুমারের ‘লক্ষ্মী বোম্ব’ও অনলাইনে মুক্তি পেতে পারে। এই খবরে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন প্রদর্শকরা। এমনকি আইনক্স, পিভিআর ও কার্নিভালের মতো বড় মাল্টিপ্লেক্স চেইনের মালিকরাও অসন্তুষ্ট হয়েছেন এই খবরে। তারা সিনেমার প্রযোজকদের উদ্দেশে খোলা চিঠি দিয়েছেন।

এই অবস্থায় বলিউড দুই ভাগ হয়ে গেছে। কেউ প্রদর্শকদের পক্ষে কথা বলছেন, কেউ প্রযোজকদের পক্ষে। এমনকি কোনো কোনো প্রযোজকও প্রদর্শকদের পক্ষে কথা বলছেন। কিন্তু কে ঠিক আর কে ভুল, সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন। কারণ এই পরিস্থিতিতে সবাই নিজের পকেটের কথা ভাবাই স্বাভাবিক।

থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নিতিন দাত্তার এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রদর্শকদের সঙ্গে প্রযোজকদের একটা অলিখিত চুক্তি ছিল যে তারা হলে মুক্তি দেয়ার আগে ওটিটি বা টেলিভিশনে ছবি মুক্তি দেবেন না। কিন্তু মহামারীর কারণে প্রযোজকরা তাদের মনে করছেন বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। একই ভাবে প্রদর্শকরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। দুপক্ষ থেকেই একটা সিদ্ধান্তে আসলে হয়তো সমাধান পাওয়া যেত।’

নিতিন আরও জানান, কোনো আয় না থাকলেও সরকারকে আয়কর দিতে হচ্ছে তাদের। এছাড়াও লাইসেন্স নবায়নের ফি, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। যখন ছোট কোনো সিনেমা মুক্তি পায় এবং ফ্লপ হয়, তখনও অনেক সময় নিজেদের পকেট থেকে এসব বিল দিতে হয়। শুধুমাত্র অমিতাভ, আমির, অক্ষয়, সালমানের সিনেমা আসলেই কিছুটা শান্তিতে থাকেন তারা।

নিতিন মনে করছেন প্রযোজকদের অন্তত দুইমাস অপেক্ষা করা উচিত ছিল। এরপর সরকারকে জিজ্ঞেস করে জানা উচিত ছিল যে সিনেমা হল কখন খোলার সম্ভাবনা আছে। যদি সরকার কোনো সমাধান না দিত, তাহলে তারা তাদের সিদ্ধান্ত নিত।

নির্মাতা আলি আব্বাস জাফর বিনিয়োগ করেছেন ‘খালি পিলি’ ছবিতে। প্রযোজক হিসেবে বলেন, ‘এই পরিস্থিতিটা খুব অনিশ্চিত, কারণ আমরা জানিনা করোনাভাইরাস কবে যাবে। কিন্তু ব্যবসা চলমান রাখা জরুরী। আমি মনে করি প্রযোজকরা যুক্তিসঙ্গত কারণেই তাদের সিনেমা অনলাইনে মুক্তি দেয়ার কথা ভাবছেন। গত কয়েক বছর ধরে তো প্রতি শুক্রবারেই দুই-তিনটি ছবি থিয়েটারে মুক্তি পেত। এখন অনলাইনে মুক্তি পায়। এখনও অনেক ছবি হলে মুক্তি দেয়ার অপেক্ষায় আছে, তাই কয়েকটি ছবি অনলাইনে মুক্তি দেয়ার বিষয়টি নিয়ে এত প্রতিক্রিয়া দেখানোর কিছু নেই।’

আলি আব্বাস জাফর মনে করেন ভবিষ্যতে সিনেমা মুক্তি দেয়ার জন্য দুটি মাধ্যমই সমান গুরুত্ব পাবে।

জনপ্রিয় ট্রেড অ্যানালিস্ট গিরিশ জোহর এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘সব বন্ধ থাকায় বক্স অফিসে ব্যবসা নেই কোনো। কোনো লাভ না থাকলেও খরচ তো থেমে নেই। বেতন দিতেই হবে সবাইকে। এছাড়াও আরও খরচ আছে। অনেক প্রযোজক সুদের বিনিময়ে ঋণ করে বিনিয়োগ করেছেন। তাদের অনেকের সিনেমা পুরোপুরি প্রস্তুত। তাই আবেগের কারণেই হোক বা অর্থনৈতিক কারণে, সিনেমা মুক্তি দেয়ার কথা তারা ভাববেনই।’

গিরিশ মনে করেন, প্রযোজকরা সবসময়েই হলে ছবি মুক্তি দেয়ার পক্ষে। কারণ হলে মুক্তি দিলে বেশি দর্শকের কাছে সিনেমা পৌঁছানো যায়। কিন্তু এই মুহূর্তে বিষয়টি ভিন্ন। এখন টিকে থাকার জন্য অনলাইনে সিনেমা মুক্তি দেয়ার কথা ভাবছেন প্রযোজকরা। -কইমই.কম