করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ট্রেনের টিকিট অনলাইনে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। টিকিটের কোনো ভাড়া বাড়ানো হবে না বলেও জানান তিনি।
শনিবার রেলভবনের সম্মেলন কক্ষ যমুনায় করোনা পরবর্তী ট্রেন চলাচলের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দুই মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর আগামীকাল থেকে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, ‘অন্যান্য গণপরিবহন অর্ধেক যাত্রী নেবে তাই ভাড়া বাড়ছে। তবে আমরা রেলের ভাড়া বাড়াচ্ছি না। রেলে একটু বেশি ভিড় হবে। তাই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে আমরা পুরো টিকেট অনলাইনে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আগামীকাল থেকে প্রাথমিকভাবে ৮ জোড়া ট্রেন চলাচল করবে। এগুলো হচ্ছে- ঢাকা-চট্টগ্রাম লাইনে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, ঢাকা-সিলেট লাইনে কালনী, সিলেট-চট্টগ্রাম লাইনে পাহাড়িকা বা উদয়ন এক্সপ্রেস।
এছাড়া ঢাকা-রাজশাহী লাইনে বনলতা এক্সপ্রেস, ঢাকা-খুলনা লাইনে চিত্রা এক্সপ্রেস, ঢাকা-পঞ্চগড় লাইনে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, ঢাকা-লালমনিরহাট লাইনে লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন পরিচালনা করা হবে।’
নূরুল ইসলাম বলেন, ‘এছাড়া দ্বিতীয় ধাপে আগামী ৩ জুন থেকে আরও ১১ জোড়া ট্রেন চলাচল শুরু করবে। এগুলো হচ্ছে- ঢাকা দেওয়ানগঞ্জবাজার রুটে তিস্তা এক্সপ্রেস, ঢাকা-বেনাপোল রুটে বেনাপোল এক্সপ্রেস, ঢাকা-চিলাহাটি রুটে নীলসাগর এক্সপ্রেস, খুলনা-চিলাহাটি রুটে রূপসা এক্সপ্রেস, খুলনা-রাজশাহী রুটে কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস, রাজশাহী-গোয়ালন্দ ঘাট রুটে মধুমতি এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে মেঘনা এক্সপ্রেস, ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটে কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, ঢাকা-নোয়াখালী রুটে উপকূল এক্সপ্রেস, ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা রুটে ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস এবং কুড়িগ্রাম-ঢাকা-কুড়িগ্রাম রুটে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস।’
তিনি বলেন, ‘আগের নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী এসব ট্রেন চলাচল করবে। যাত্রী পরিবহনে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে আমরা কাজ করব। ভিড় কমাতে আমরা সব স্টেশনের টিকিট কাউন্টার বন্ধ রাখছি। অর্থাৎ সব টিকিট বিক্রি হবে অনলাইনে। এছাড়া আগামীতে আমরা ট্রেনে খাবার ব্যবস্থা রাখছি না। বিশেষ কেবিনে আমরা এখন থেকে ট্রেনে আর বালিশ-কাথা সরবরাহ করব না। যাত্রা শুরুর পাঁচদিন পূর্বে টিকেট সংগ্রহ করা যাবে। টিকেট ছাড়া কেউ স্টেশনে প্রবেশ করতে পারবেন না। ট্রেন ছাড়ার এক ঘণ্টা আগে যাত্রীকে স্টেশনে পৌঁছাতে হবে।’
রেলপথমন্ত্রী বলেন, ‘যাত্রী সাধারণকে আবশ্যিকভাবে মাস্ক পরিহিত অবস্থায় স্টেশন এলাকায় বা ট্রেনে প্রবেশ করতে হবে। ট্রেনের অভ্যন্তরে যাত্রীদের নির্দিষ্ট আসনে অবস্থান করতে হবে। ট্রেনে আরোহণ এবং অবতরণের জন্য নির্দিষ্ট দরজা ব্যবহার করতে হবে।’
নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘যাত্রীদের প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পানীয় সঙ্গে নিতে হবে। তাপমাত্রা পরিমাপের সুবিধার্থে যাত্রীদের ট্রেন ছাড়ার কমপক্ষে ৬০ মিনিট পূর্বে স্টেশনে পৌঁছাতে হবে। কোনো অবস্থাতেই টিকেট ছাড়া প্লাটফর্মে প্রবেশ করা যাবে না। দর্শনার্থী/প্লাটফর্ম টিকিট বিক্রয় বন্ধ থাকবে। স্বল্প দূরত্বের যেমন- ঢাকা বিমানবন্দর, জয়দেবপুর, নরসিংদীতে কোনো ট্রেন থামবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা, মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী দেশে করোনাভাইরাসে এখন পর্য আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪ হাজার ৬০৮জন। করোনাক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬১০ জন। সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ৩৭৫ জন।