সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন অনলাইন শপের পেজ থেকে দৃষ্টিনন্দন পোশাক, গহনা কিংবা মোবাইল ফোন কিনলে ক্রেতারা কুরিয়ারের মাধ্যমে পাচ্ছেন সাবান, ভিমবার, আলু, পটল আর পেঁয়াজের প্যাকেট।
বেশিরভাগ সময়ই সার্ভিস চার্জ কিংবা পণ্যের আংশিক দাম আদায় করলেও পণ্য পৌঁছায় না ক্রেতার কাছে।
নির্ধারিত পণ্যের দামেে চেয়ে কম হলেও প্রতিজনের কাছ থেকে বেশি অর্থ না নিলেও বিপুল পরিমাণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল একটি প্রতারক চক্র।
বুধবার দিনগত রাতে রাজধানীর দারুস সালাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই প্রতারক চক্রের ৭ সদস্যকে আটক করেছে র্যাব-৪। চক্রটি দীর্ঘ সাত বছর ধরে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
আটকরা হলেন- সুজন মোল্লা (২৬), হাসিবুল হাসান ওরফে চঞ্চল (৩২), জারদিস হোসেন (২০), মেহেদী হাসান (২৩), নুর ইসলাম (১৯), পারভেজ মোল্লা (১৯) ও আবু তাহের (১৯)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ১টি ল্যাপটপ, ১টি ডেস্কটপ কম্পিউটার, ১টি প্রিন্টার, ১টি রাউটার, ২৩টি মোবাইল, মানি রিসিট, ২৫০ পিস পাঞ্জাবী ও ১০ পিস পায়জামা উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির।
তিনি বলেন, তারা বিভিন্ন নামী-দামী ব্র্যান্ডের অনলাইনে দেওয়া পণ্য সামগ্রীর ছবি ডাউনলোড করে নিজেদের পণ্য হিসাবে ফেসবুক পেইজে আপ করতো। কিন্তু সেসব পণ্যের নির্ধারিত দামের চেয়ে কমদাম দেখে কেউ আকৃষ্ট হয়ে যোগাযোগ করলে চক্রটি প্রথমে সার্ভিস চার্জ গ্রহণ করতো। এরপর হোম ডেলিভারির মাধ্যমে নিন্মমানের পণ্য চালিয়ে দিতো।
ক্রেতারা কোনো পণ্য অর্ডার করলে কখনো মূল্য পরিশোধ করতে বলা হতো। কিন্তু নির্ধারিত মূল্যবান পণ্যের পরিবর্তে সাবান, ভিমবার, আলু, পেঁয়াজ, পটল প্যাকেট করে পাঠিয়ে দিতো। কখনো কোন পণ্য না পাঠিয়েই কিছু অর্থ আদায় করে পণ্য পাঠিয়েছে বলে দাবি করতো। গ্রাহক পণ্য পায়নি দাবি করলে বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসে খোঁজ নিতে বলতো এবং পণ্য না পৌঁছানোর জন্য সেসব কুরিয়ার সার্ভিসকে দায়ি করতো।
তিনি বলেন, ক্রেতারা কখনো অর্ডার করা পণ্য না পেয়ে অভিযোগ করলে তাদের চট্টগ্রামেরর অফিসে যোগাযোগ করতে বল হতো। অল্প কিছু টাকার জন্য পরবর্তিতে প্রতারিত হয়েও কোনো গ্রাহক কোথাও অভিযোগ করতেন না। এভাবে প্রতিজনের কাছ থেকে বেশি অর্থ না নিলেও বিপুল পরিমান মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিলো।
মঞ্জুরুল কবির বলেন, প্রতারকদের ব্যবহৃত ১৭টি পেইজ জব্দ করা হয়েছে। সেগুলো হল- Unique Fashion, Rose Fashion BD, Lifestyle.com, GreenXpress.Com, Gentle Fashion, Gentle Point, Fashion Point, Plus Point, Mobile Shop 24, গয়না মহল, Arifull Islam Ariean, নিলয় মাহমুদ সুজন, MD Tanvir Abutaher, Advance Electronics, Dream Fashion, Xian Rihan.
চক্রটি দীর্ঘ ২০১৩ সাল থেকে এ ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলো। তারা প্রতি গ্রাহকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা না নিলেও বিপুল পরিমাণ গ্রাহকের কাছ থেকে অল্প অল্প করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতো।
অনলাইনে পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে গ্রাহহকদের আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে র্যাব-৪ সিও বলেন: আমরা প্রাথমিকভাবে চক্রটির ১৭টি পেজ পেয়েছি। আরো পেজ রয়েছে কি না বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে।
এ সময় সেইলরের অ্যাসিস্ট্যান্ট মার্কেটিং ম্যানেজার সাইদুজ্জামান বলেন: আমাদের কপিরাইট করা ছবি ওরা কপি করে তাদের পেইজে নিজেদের লোগো বানিয়ে ডিসপ্লে করত। আমরা র্যাবকে বিষয়টি জানানোর পর তাদের আটক করে, এজন্য র্যাবকে ধন্যবাদ।