চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

অনন্য উচ্চতায় শেখ হাসিনা

শেখ হাসিনাকে নিয়ে লেখা বা তাঁকে মূল্যায়ন করা আমার মত ক্ষুদ্র মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব ব্যাপার । সমসাময়িক কালের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির অঙ্গনের অন্যতম প্রধান ও প্রবীণ রাজনীতিকের নাম শেখ হাসিনা। একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে টানা চল্লিশ বছরের পথচলার পাশাপাশি প্রায় দুই দশকের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার শীর্ষে থেকে দেশ পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে শেখ হাসিনা পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষ নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত। তিনি শুধু এই উপমহাদেশে একজন সিনিয়র রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, যা তাঁর প্রধান পরিচয়।

রাজনীতিতে তিনি আজ অনন্য উচ্চতায় পৌঁছিয়েছেন। একটি দেশের প্রতিষ্ঠাতার কন্যা হিসেবে শেখ হাসিনার জন্য যেমন গৌরব ও সম্মানের তেমনি পিতার আদর্শ, সততা, সাহস নিয়ে নিরবিচ্ছিন্ন পথ চলাও বেশ কষ্টসাধ্য।কারণ সবকিছুতেই তখন প্রত্যাশার পরিমাণ থাকে অনেক বেশী। শেখ হাসিনা যখন আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেন তখন তাঁর বয়স ছিল চৌত্রিশ। আওয়ামী লীগের মতো একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো বয়েস সেটা আক্ষরিক অর্থেই ছিল না । তারপরে তখনকার পরিবেশ ছিল খুবই ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ। একদিকে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের দুঃশাসন কাল,অন্যদিকে তার পৃষ্ঠপোষকতায় জাতির জনকের খুনিদের আস্ফালন, সব মিলিয়ে রাজনৈতিক পথ ছিল ভীষণ কন্টাকময়। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট ভাগ্য গুনে বেঁচে যাওয়া শেখ হাসিনাকে সব সময় ধাওয়া করে গেছে কোনো না কোনো বুলেট বোমা। কিন্তু ভরসার জায়গা ছিল দেশের মানুষ ও তাদের অফুরন্ত ভালোবাসা এবং আল্লাহ পাকের অশেষ রহমত । মানুষের ভালোবাসাকে সম্মান করেই পনেরই আগস্ট এর বিয়োগান্তক বেদনাকে বুকে ধারণ করে শোককে শক্তিতে পরিণত করে বাংলাদেশের মানুষের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন লড়াই-সংগ্রাম করে গেছেন শেখ হাসিনা।

 

সামরিক শাসক জিয়া ছয়টি বৎসর তাঁকে দেশেই আসতে দেয়নি। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার দেশে আগমন করার পর থেকেই অমানিশার অন্ধকার পথ কাটতে শুরু করেছিল। বাংলাদেশের মানুষ আবার আশায় বুক বেঁধেছিলো। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছিল বাংলাদেশের মানুষ, সেই সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে শেখ হাসিনাকে উনিশ বার মৃত্যুর মুখে পতিত হতে হয়েছে । আল্লাহর রহমতে মানুষের দোয়া ও ভালবাসায় প্রতিবারই তিনি বেঁচে গেছেন।

বঙ্গবন্ধু সিকি শতাব্দী ধরে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে জেল জুলুম নিপীড়ন নির্যাতন সহ্য করে এই ভূখণ্ডকে স্বাধীন সার্বভৌম করে দিয়ে গিয়েছেন। মাত্র সাড়ে তিন বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকে বাংলাদেশের যে ভিত্তিমূল তিনি রচনা করে দিয়ে গিয়েছিলেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। কিন্তু পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে সেই অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছিল । পরবর্তীকালে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন তারপর থেকে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পাদন করার জন্য নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষে পঁচাত্তর-পরবর্তী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম তিনি শুরু করেছিলেন তা এখনো অব্যাহত আছে।

সেই সংগ্রামের প্রথম পর্যায়ের সামরিক জান্তা জিয়া-এরশাদের দুঃশাসনকে মোকাবেলা করে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে তিনি যে সংগ্রাম করে চলছেন তার দ্বিতীয় পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে নেতৃত্ব এখনো তিনি দিয়ে চলেছেন। এই যে লম্বা পথচলা তা একজন পোড়খাওয়া দেশ প্রেমিক রাজনীতিকেরই পরিচয় বহন করে। তিনি পিতার আদর্শ বহন করে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালি করার জন্য, দেশের মানুষকে একটি উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশের নাগরিকে পরিণত করতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তার এই কাজের শক্তির উৎস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনিই যে তাঁর সকল কর্ম এবং উদ্দীপনার সাহস ও প্রেরণা তাতে কোন সন্দেহ নাই। তিনি যোগ্য পিতার যোগ্য উত্তরসুরী।

শেখ হাসিনার বড় গুণ হচ্ছে সততা, সাহস যা তিনি তাঁর পিতার কাছ থেকে পেয়েছেন। তিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কারণ তিনি সবসময় জনগণের সাথে সম্পৃক্ত থেকে জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর মতো অসীম সাহস তাঁকে তাঁর রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত প্রতিকূল পরিবেশ পাড়ি দিতে সহায়তা করেছে ।১৯৮১ সালে সব হারিয়ে দেশে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের যখন হাল ধরেন তখন পথটা খুব কঠিন ছিল । অবৈধ ক্ষমতা দখলদার জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় বসে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে আওয়ামী লীগের পথচলাকে খুবই কঠিন করেছিল । পিতা মাতা ভাই ভাবী আত্মীয় স্বজন হারানোর শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে দেশের মানুষের ভালোবাসা নিয়ে শেখ হাসিনা সেই অন্ধকার পথ পাড়ি দিয়েছেন।

এ পথ ছিল কাঁটা বিছানো, প্রতি পদে পদে হায়েনাদের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে, পড়তে হয়েছে মৃত্যুমুখে, কোন কিছুই দমাতে পারেনি শেখ হাসিনাকে । নিজের দুটি শিশু বাচ্চাকে বিদেশে রেখে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার ও মানুষের ভোট ভাতের অধিকার রক্ষা করার জন্য সেই যে সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিলেন তার প্রাথমিক পরিসমাপ্তি হয়েছিল ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে । এই পথ পাড়ি দিতে শেখ হাসিনাকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। একদিকে সামরিক জান্তার রক্তচক্ষু তার পাশাপাশি তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ৭৫ এর খুনিদের বিরামহীন উদ্ধত্য। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি চক্রান্ত, মিথ্যাচার ও অপপ্রচারে জর্জরিত আওয়ামী লীগকে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতীকে পরিণত করতে দিনরাত নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন।

সারা দেশের আনাচে-কানাচে প্রতিটি জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে সফর করেছেন । ৭১ ও ৭৫ খুনীদেরকে পরাজিত করতে এবং তৎকালীন সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে তাকে একাধিকবার মৃত্যুমুখে পতিত হতে হয়েছে । তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী তাকে রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে বার বার দমন করতে চেয়েছে, হত্যা করতে চেয়েছে কিন্তু শেখ হাসিনার দুর্নিবার সাহস ও মানুষের ভালোবাসা তাঁকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন এবং তিনি বিজয়ী হয়েছেন।

 

শেখ হাসিনা তার পিতা বঙ্গবন্ধুর মতোই দয়ালু মনোভাব ও মানুষকে ভালোবাসার বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী । তিনি যেমন প্রান্তিক মানুষের দুঃখে নিজে কষ্ট পান ঠিক তেমনি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের নানা কষ্ট দুঃখের ভাগিদার হয়ে মমতার হাত নিয়ে পাশে দাঁড়ান। তিনি জীবন যাপনে যেমন সাধারণ, ব্যাক্তিত্বে, নেতৃত্বে তেমনই অসাধারণ । বঙ্গবন্ধুর মতোই গ্রামের খেটেখাওয়া অসহায় নিরীহ মানুষকে তিনি অবলীলায় বুকে টেনে নিতে পারেন, গ্রামের জীর্ণশীর্ণ ময়লা কাপড় পরা কোন হতভাগা নারীকে মায়ের বা বোনের পরম মমতায় বুকে টেনে নিয়ে তাদের কষ্ট লাঘব করতে পারেন। একইভাবে দলীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে তিনি সমানভাবে অন্তর দিয়ে ভালবাসেন,সহায়তা করে থাকেন,তাদের সাহস যোগান শক্তি যোগান। কি সরকারি দল কি বিরোধীদলে কতশত পরিবারকে যে নীরবে-নিভৃতে শেখ হাসিনা তাদের সংসার খরচ, পড়াশোনার খরচ, চিকিৎসার খরচ বহন করেন তা হয়তো আমরা দেশের অনেক মানুষই জানি না। মানুষের প্রতি ভালোবাসা ক্ষেত্রবিশেষে এই বেশি ভালোবাসা বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে পাওয়া ।

বঙ্গবন্ধু মানুষকে খুব ভালোবাসতেন সাধারণ মানুষের ভালবাসাই ছিল বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। মানুষের ভালোবাসাই তিনি বঙ্গবন্ধু এবং জাতির পিতা হয়েছেন। তাঁর কন্যা হিসেবে শেখ হাসিনাও মানুষের দোয়া ও ভালোবাসায় আজও দেশের মানুষের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। মানুষের এই ভালবাসার কাছে সমস্ত অপশক্তি আজ পরাজিত ।

পনেরই আগস্টে ভাগ্য গুনে বেঁচে যাওয়া শেখ হাসিনাকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে শেষ করে দেয়ার চক্রান্ত করেছিল বিএনপি ও খালেদার সরকার। কিন্তু মানুষের ভালোবাসায় দোয়ায় আল্লাহর রহমতে তিনি বার বার বেঁচে গেছেন। মানুষের দোয়া এবং ভালোবাসা নিয়ে তিনি তাঁর পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তা একদিন পূরণ হবেই। মানুষের ভালোবাসার কাছে আবার পরাজিত হবে চক্রান্ত কারীরা। নানা সময়ে দলের লোকদের দাড়াও বাধাগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকেই দুঃসময়ে বেইমানি করেছেন, দূরে সরে গিয়েছেন। আবার ভুল বুঝে ফিরেও এসেছেন। মোস্তাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দেয়া নেতাদেরও ক্ষমা করে দলে বড় জায়গা দিয়েছেন। আবার তাঁর নিজের সাথেও যারা বেইমানি করেছেন তাদেরকেও ক্ষমা করে দিয়ে কাছে টেনে নিয়েছেন। নিজেই বলেছেন তিনি নীলকণ্ঠী, বিষ খেয়েও হজম করতে পারেন। এটাও তাঁর নেতৃত্বের একটি বিরাট গুন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন দেশের মানুষের কাছে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে জাতির পিতা বা বঙ্গবন্ধু হিসেবেই অধিক আপন বা শ্রদ্ধেয় । তেমনই শেখ হাসিনাও প্রধানমন্ত্রীর অসনকে টপকিয়ে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বিশ্বে এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা হিসেবে বা আপা হিসেবে দেশের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছেন এটাই শেখ হাসিনার অর্জন। কন্যা হিসেবে তিনি সফল, পিতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় এনেছেন এবং তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে দেশকে অনেক উন্নত ও সমৃদ্ধ করেছেন। মা হিসেবেও গর্ব করার মত একজন মা, যাঁর দুই সন্তানকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে সুসন্তান রূপে গড়ে তুলেছেন, যাদের কিনা ক্ষমতা ও বিত্তবৈভব স্পর্শ করতে পারেনি।

একইভাবে একাত্তরের ঘাতকদের বিচার করাও শেখ হাসিনার মত নেতা ছিল বলেই সম্ভব হয়েছে। শহীদদের আত্না শান্তি পেয়েছে। দল ও সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা ঈর্ষণীয় ভাবে সফল। দলকে চারবার ক্ষমতায় নেয়া এবং দেশকে উন্নতির উচ্চ শিখরে নিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের ফল। বার বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা শেখ হাসিনা মানুষের দোয়া ও ভালোবাসায় সুস্থভাবে শত বছর বেঁচে থাকুক জন্মদিনে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে এই প্রার্থনা। শুভ জন্মদিন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)