চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

অধ্যাপক তাহের হত্যা: ‘রায়ে স্বস্তি, কার্যকর হলেই সন্তুষ্টি’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাহের হত্যায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত দু’জনের মৃত্যুদণ্ড ও দু’জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহালের রায়ে স্বস্তি প্রকাশ করে তার পরিবার বলছেন এ রায় কার্যকর হলেই মিলবে পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি।

বাবা হত্যায় আপিল বিভাগের দেয়া রায়ের পর মেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া এই রায়টি যখন কার্যকর হবে, তখনই আমাদের সন্তুষ্টির জায়গা তৈরি হবে। তবে এখন কিছুটা হলেও স্বস্তি পাচ্ছি। কারণ, বিগত ১৬ বছর ধরে বিচারের সংগ্রামটা করেছি।’

আজকের রায়ের পর অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ বলেন, ‘আমার বাবাকে নৃশংসভাবে হত্যার বিচারে সবাই আমাদের সাপোর্ট করেছেন। আমরা সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা চাই রায়টা দ্রুত কার্যকর হোক।’

অধ্যাপক ড. এস তাহেরের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ রায়ের পর বলেন, ‘১৬ বছর তো অনেক সংগ্রাম করেছি। অনেক দুঃখ- কষ্ট ভোগ করেছি। আজ রায়টা হলো, এই রায়টা কার্যকর হলে পরিপূর্ণ সন্তুষ্ট হবো।’

এদিকে অধ্যাপক তাহের হত্যাকাণ্ডকে দেশের ইতিহাসে জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আজকের এই রায়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অন্যদের কাছে এই বার্তা যাবে যে এধরণের কাজ করলে আদালতের কাছ থেকে সর্বোচ্চ শাস্তি পেতে হবে।’

অন্যদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিকী বলেছেন, ‘আসামিরা চাইলে এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করা হবে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যায় হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যে দুই আসামির সাজা সর্বোচ্চ আদালত আজ বহাল রাখেন তারা হলেন, একই বিভাগের তৎকালীন সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম। আর সাজা কমিয়ে মো. নাজমুল আলম ও আব্দুস সালামকে হাইকোর্টের দেয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন সর্বোচ্চ আদালত।

এর আগে হাইকোর্টের দেয়া রায়ে বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের করা আপিল শুনানি শেষে মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বিভাগ এই রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতে অধ্যাপক ড. এস তাহেরের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ, ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ এবং মেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। তাদের সাথে ছিলেন  সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অবন্তী নুরুল ও মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। আসামী পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, এসএম শাহজাহান ও ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিকী। আর অধ্যাপক ড. তাহেরের পরিবারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথি।

২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

সে মামলায় ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত ৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ২ জনকে খালাস দেন। পরবর্তীতে হাইকোর্ট দুই আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে অন্য দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা দুই আসামি হলেন একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম। আর সাজা কমিয়ে হাইকোর্ট নাজমুল আলম ও আব্দুস সালামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল করেন। অন্যদিকে সাজা কমিয়ে দু’জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। সে সব আপিলের শুনানি শেষে আজ রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত।