চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে লড়াই জমিয়ে তুলেছিল মিনিস্টার ঢাকা। শেষ ৬ বলে ৯ রানের সমীকরণ অবশ্য মেলাতে পারেননি ঢাকার দুই স্বীকৃত ব্যাটার তামিম-নাঈম। আসরে দুর্দান্ত শুরু করে খেই হারানো চট্টগ্রাম দ্বিতীয়বার অধিনায়ক পরিবর্তন করে ফিরেছে জয়ে। ৩ রানের জয়ে জিইয়ে রাখল শেষ চারের আশা।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শেষ দুই ওভারে ২০ রানের সমীকরণে পড়েন তামিম ইকবাল-নাঈম শেখ। ১৯তম ওভারে ১১ রান আসলে শেষ ওভারে দরকার পড়ে ৯ রান। মৃত্যুঞ্জয়ের উত্তেজনা ছড়ানো বোলিংয়ে ৫ রান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় ঢাকাকে।
আসরে টিকে থাকতে জয়ের বিকল্প ছিল না চট্টগ্রামের। হারলেই বাদ— এমন ম্যাচে বদল করা হয় অধিনায়ক। মিরাজের অধিনায়কত্ব নিয়ে বেশ নাটকের পর নাঈমকে নেতা ঘোষণা করেছিল দলটি। সিলেট পর্বের প্রথম ম্যাচে অধিনায়ক নাঈম একাদশেই নেই, তরুণ আফিফ হোসেনকে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরিয়ে দেয় বন্দরনগরীর দলটি।
তিন রানের রোমাঞ্চকর জয়ে ৯ ম্যাচে চট্টগ্রামের সংগ্রহ ৮ পয়েন্ট। ৭ পয়েন্ট তোলা ঢাকাকে পাঁচে নামিয়ে আফিফের দল উঠেছে সেরা চারে। সবার উপরে ১১ পয়েন্ট নিয়ে বরিশাল। দুইয়ে ৯ পয়েন্ট নিয়ে কুমিল্লা। তিনে চট্টগ্রামের সমান পয়েন্ট নিয়ে মুশফিকুরের খুলনা।
মঙ্গলবার দিনের প্রথম ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে ভালো শুরু পায়নি আফিফের দল। দ্বিতীয় ওভারে ভাঙে চট্টগ্রামের ওপেনিং জুটি। বাঁহাতি আফগান পেসার ফজলহক ফারুকীর দারুণ এক বলে বোল্ড হন জাকির হাসান।
উইল জ্যাকসের সঙ্গে পরে ৪০ রানের জুটি গড়েন আফিফ। মিরাজকে সরিয়ে নাঈম ইসলামকে দায়িত্ব দেয়ার পর ফের পরিবর্তন করে আফিফের কাঁধে দেয়া হয় নেতৃত্ব। সাবেক বনে যাওয়া অধিনায়ক নাঈম বাদ পড়েছেন একাদশ থেকেই।
২৪ বলে ৩ চারে ২৬ রান করে জ্যাকস ফেরেন। আরাফাত সানির বলে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন। অষ্টম ওভারে কেবল দুই রান করা মেহেদী হাসান মিরাজের উইকেট তুলে নেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। পুল শট খেলা মিরাজ ডিপস্কয়ার লেগে নাঈম শেখের হাতে ধরা পড়েন।
পরের ওভারে ঢাকার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের শিকার হন আফিফ। ২৪ বলে ৪ চারে ২৭ রান করে ডিপ মিড উইকেটে নাঈমের তালুবন্দি হন তিনি। ৮৪ রানের মাথায় পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে ক্রিজ ছাড়েন আকবর আলী। যুব বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ৯ রান করার পর কায়েস আহমেদের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লংঅনে শুভাগত হোমের হাতে ধরা পড়েন।
ষষ্ঠ উইকেটে বেনি হাওয়েলকে নিয়ে দ্রুত ৫৮ রান যোগ করেন শামীম। শেষ ওভারে ইবাদত হোসেনকে মারতে গিয়ে নাঈমের ক্যাচ হন। হাওয়েল ১৯ বলে ২ ছক্কায় ২৪ রানে অপরাজিত থাকেন। চট্টগ্রাম ৬ উইকেটে করে ১৪৮ রান।
জবাবে তামিমের ব্যাটিং দৃঢ়তা এবং শুভাগতের ঝলক দেখাচ্ছিল জয়ের আশা। কিন্তু শেষ ওভারের রোমাঞ্চে মৃত্যুঞ্জয়ের তোপে হার মানতে হয় ঢাকাকে। পরিসংখ্যানের খেরোখাতায় সমাধান টানতে ব্যর্থ হন নাঈম শেখ ও তামিম ইকবাল। ১৪৮ রানের লক্ষ্যে তারা থামেন ১৪৫ রানে।
লক্ষ্যে নেমে ভালো শুরু পায়নি ঢাকা। তৃতীয় ওভারে শরিফুলের শিকার হন শেহজাদ। কদিন আগে বিসিবির তিরস্কার পাওয়া আফগান করে যান ৮ বলে ৭ রান। বেশি সময় থাকতে পারেননি তিনে নামা ইমরান। উপরের দিকে ব্যাট করতে আসা মাশরাফী হন ব্যর্থ। কোনো রান না করেই ফেরেন মৃত্যুঞ্জয়ের শিকার হয়ে।
চাপে পড়া দলকে অপর পাশ থেকে একাই টানেন তামিম ইকবাল। টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট থেকে ছয় মাসের বিরতি নেয়া ওপেনার খেলেন ৫৬ বলে ৭৩ রানের ইনিংস। অবশ্য তামিম এদিন নায়ক হতে পারতেন, ফিনিশিংয়ে ব্যর্থতা তাকে সেই স্থানে বসতে দেয়নি।
শেষ ওভারে ৫ বলে দুই রান করে ম্যাচ ছিটকে দেন জাতীয় দলের ওপেনার নাঈম শেখ, এদিন অবশ্য তিনি ক্রিজে আসার সুযোগ পান অষ্টম ব্যাটার হিসেবে।
উত্তেজনা ছড়ানো ম্যাচে দুটি উইকেট নিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। ১ বলে ৬ রানের সমীকরণে নো বল দেয়া তরুণ পেসার মৃত্যুঞ্জয় ছিলেন আরও বেশি দুর্দান্ত। ৪ ওভারের কোটা সমাপ্ত করেছেন ২১ রান দিয়ে। নিয়েছেন দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। একটি করে উইকেট নিয়েছেন কিপটে বোলিং করা নাসুম ও মিরাজ।
প্রথম ইনিংসে চট্টগ্রামের হয়ে ফিফটি হাঁকানো শামীম হোসেন হয়েছেন ম্যাচ সেরা।