যে বটবৃক্ষদের ছায়ায় আমরা থাকি, তাদের একজনের আজ জন্মদিন। শুভ জন্মদিন প্রাণপ্রিয় সিরাজ ভাই। আপনি শুধু আমাদের না, বাংলাদেশের কৃষক এবং অর্থনীতির চালিকাশক্তি কৃষিরও বটবৃক্ষ।
মানুষ জনপ্রিয় হতে চায়। অথচ সিরাজ ভাই অকপটে বলে দেন একদম চোখের দিকে চোখ রেখে। হয়তো যে মানুষটিকে বা যে গোষ্ঠীকে বলছেন, তাদের কাছে তিনি অজনপ্রিয় হয়ে উঠবেন। কি যায় আসে? দিন শেষে ওই মানুষ বুঝতে পারে তারা ভুল করেছিল। ভুল বা অন্যায় করেছিল বলেই অন্যায়ের মুখোমুখি হয়ে হয়েছিল। কিন্তু মিথ্যে নয় নিজেকে শুধরে তার সামনে গেলেই মুহূর্তে একফালি হাসি দিয়ে অন্যকোনো বিষয়ের কথা বলবেন এতো সহজ করে যে, সেই মানুষগুলো ভুলেই যাবে যে কখনো সিরাজ ভাই কঠিনভাবে কিছু বলেছিলেন বা সিরাজ ভাই কঠিন করে কথা বলেন।
মন্ত্রী, সচিব বা আমলা বিষয় দুটির সাথে আমরা খুব পরিচিত। আমলাদের বলা হয় ‘ব্যুরোক্র্যাট’। সিরাজ ভাই আমলা প্রকৃতির। মন্ত্রীরা জনপ্রিয়তার জন্য অনেক আপোষ করেন। কিন্তু আমলারা শক্তভাবে ধরে রাখেন। জনপ্রিয়তার ভারে যেন উল্টে না যায়। সিরাজ ভাই নৌকার বৈঠা শক্ত করে ধরে রাখা একজন মানুষ। যত ঝড়ই আসুন তিনি ক্লান্ত হন না।
মানুষ এখন নিজের ছোট পরিবার নিয়ে একা থাকতে ভালোবাসে। অথচ সিরাজ ভাই নিজের পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত ভিটায় এখনও ভাইদের, পুত্রদের, তাদের বধূদের এক ছাদের নিচে রেখে একান্নবর্তী পরিবার প্রথা পারিবারিক বন্ধনকে অটুট রেখেছেন। কাজটা কি সহজ? যারা একসময় একান্নবর্তী পরিবারের সদস্য ছিলেন চেষ্টা করে দেখেন তো আবার ফিরে যেতে! কিংবা কেন একান্নবর্তী পরিবারে থাকতে পারলেন না ভেবে বলুনতো কাজটা কি এত সহজ? শুধু কি ভয় দেখিয়ে সবাইকে এক ছাদের নিচে রাখা যায়? না! ভয় নয় বরং অন্যরকম একটা ঘোর, অন্যরকম একটা মায়া তৈরি করে সবাইকে আচ্ছন্ন করে রেখেই হয়তো এখনো কেউ কেউ একান্নবর্তী পরিবারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সিরাজ ভাই। তিনি এই সময়ের জন্য ব্যতিক্রম।
অনেকে বলবেন ব্যাকডেটেড! কিন্তু আমি আমার মাথা ছুঁয়ে বলবো এর চেয়ে আনন্দের আর আর কিছুই নেই। যদি আমি আমার জীবনে আবার ফিরে পেতাম সেই মা-বাবা, দাদা-দাদী, নানা-নানি আত্নীয়স্বজন দিয়ে ঘেরা একান্নবর্তী পরিবার। আমি আর যেতে পারবো না জানি, তবে যিনি পেরেছেন বা পারছেন তাকে স্যালুট! স্যালুট সিরাজ ভাই!
করোনাকালে কত লেখক হাত গুটিয়ে রাখলেন অথচ সিরাজ ভাই লিখে ফেললেন ‘করোনাকালের বহতা জীবন’। করোনাকালে বইটি আমি পড়লাম এবং বইটি সম্পর্কে আমি বলবো করোনাকালের অর্ধসম্পন্ন একটি দলিল। এই যে অর্ধসম্পন্ন শব্দটি ব্যবহার করলাম এখানেই লেখকের স্বার্থকতা। সম্পূর্ণ হয়ে গেলে রেশ থাকে না।
অর্ধ বলেই এই রেশ থেকে যায়। আমার পড়া দেশ বিদেশের অনেক বড় বড় লেখকের চেয়েও সিরাজ ভাইয়ের লেখা ‘করোনাকালে বহতা জীবন’ আমাকে স্পর্শ করেছে। রেখে দিয়েছে রেশ। আমি এই লেখকের ভক্ত। এই লেখক যদি হৃদয়ে মাটি ও মানুষের কথা গুলো লেখেন, আমরা পড়বো। এই লেখক যদি তার জীবনের শুরুর দিককার কথা লেখেন আমরা পড়বো। এই লেখক যদি বন্ধুত্বের বন্ধনের কথা লেখেন আমরা পড়বো। এই লেখক যদি তার একান্ত দুঃখের কথা লেখেন আমরা পড়বো। এই লেখক যদি তার সুখ অনুভূতির কথা লেখেন আমরা পড়বো। এই লেখক যদি তার প্রেমের কথা লেখেন আমরা পড়বো। এই লেখক যদি তার সংসারের কথা লেখেন আমরা পড়বো। এই লেখক যদি রেখে যান এমন কোনো দিকনির্দেশনা আমাদের জন্য, আমরা পড়বো। শুধু আমরা নয়, আমি জানি তার এই লেখা পড়বে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। শুধুমাত্র একজন সিরাজ ভাই বেঁচে যাবে সহস্র বছর। লিখুন ভাই! আপনার আরও লেখা চাই।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)