চট্টগ্রাম থেকে: যাদের বিপক্ষে ম্যাচ সেই গোকুলম কেরালা এফসির কোনো খোঁজখবরই নেই। সোমবার সকালে চট্টগ্রামে নামার কথা থাকলেও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি এশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন ট্রফি ডুরান্ড কাপের চ্যাম্পিয়নদের। কিন্তু তাতে কী গা হেলে বসে থাকা যায়! বসুন্ধরা কিংসের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজেন শিষ্যদের সেই সুযোগটা দিতে চাইলেন না। বন্দর স্টেডিয়ামে কড়া রোদের মাঝেই দলকে করিয়েছেন কঠোর অনুশীলন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় ভারতের গোকুলম কেরালা এফসির বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ মিশন। দুদলই প্রথমবারের মতো খেলতে নামছে আসরে। গোকুলম টুর্নামেন্ট নিয়ে কী ভাবছে সেটা জানার সুযোগ হয়নি, কিন্তু বসুন্ধরার অনুশীলন দেখেই বোঝা গেল আসরকে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে তারা।
গত মৌসুমে ঘরোয়ায় অংশ নিয়েই প্রিমিয়ার লিগসহ দুই শিরোপা জিতেছে বসুন্ধরা। এবারও তাদের লক্ষ্য সাফল্য ধরে রাখা। প্রাক-মৌসুমের প্রথম টুর্নামেন্টে শিরোপাক্ষুধা ধরে রাখার চাপ তো আছেই, সঙ্গে নতুন একঝাঁক তরুণদের পরীক্ষা করারও সুযোগ পাচ্ছেন কোচ অস্কার। যদিও শিরোপার দিকে আগেই চোখ দিতে চান না স্প্যানিশ ভদ্রলোক। তার প্রাথমিক লক্ষ্য আগে ভালো খেলা।
‘আমার চোখে আমার দলের জন্য প্রতিটা ট্রফি জেতাই খুব কষ্টসাধ্য। ট্রফি জেতা কখনোই মুখ্য লক্ষ্য হতে পারে না। এখানে আমাদের চ্যালেঞ্জ আগের মৌসুমের সাফল্য ধরে রাখা। বসুন্ধরা আগের মৌসুমে দারুণ ফুটবল খেলেছে। গতবারের সেই দলটার সঙ্গে এই দলটার পার্থক্য হল, এবারের দলটা অনেকবেশি মানসম্পন্ন।’
নতুন মৌসুমে জাতীয় দলের তারকা খেলোয়াড় দিয়ে স্কোয়াড সয়লাব করে ফেলেছে বসুন্ধরা। ভারতের বিপক্ষে খেলা জাতীয় দল থেকে আছেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম, বিপলু আহমেদ, মাহাবুবুর রহমান সুফিলরা। ডিফেন্ডারদের মধ্যে আছেন ইয়াসিন খান, সুশান্ত ত্রিপুরা, বিশ্বনাথ ঘোষেরা। জাতীয় দলে মূল গোলরক্ষক হিসেবে সুযোগ না পাওয়া আনিসুর রহমান জিকো এবারও প্রস্তুত বসুন্ধরার জাল অক্ষত রাখতে।
জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের পাশাপাশি বসুন্ধরার বিদেশিরাও বেশ মানসম্পন্ন। এবার দলটিকে নেতৃত্ব দেবেন কোস্টারিকার হয়ে বিশ্বকাপ খেলা ফরোয়ার্ড ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস। লেবানন জাতীয় দলের মোহাম্মদ জালালকে রাখা হয়েছে দলে। কিরগিজস্তানের বখতিয়ার দুশানবে আগের মৌসুম থেকেই আছেন। আক্রমণভাগে এলিটা কিংসলে এবারও ভরসা কিংসদের।
এতসব মানসম্পন্ন খেলোয়াড়দের নিয়ে দল সাজাতে গিয়ে মধুর সমস্যায় অস্কার ব্রুজেন। ‘কাকে ধরি, কাকে ছাড়ি’ সমস্যায় পড়া কোচ এখন বাজিয়ে দেখতে চান সব খেলোয়াড়দেরই।
‘দলে এতসব ভালো খেলোয়াড় যে একাদশ তৈরি করতে গেলেই আমি খেই হারিয়ে ফেলছি। খেলোয়াড়দের মান নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এই খেলোয়াড়রা খুব দ্রুত তৈরি হয়ে যাচ্ছে। আমরা ওদের আরও কঠিনসব অনুশীলন দিয়ে তৈরি করতে চাই। বেশিরভাগ ফুটবলারই তরুণ। কিন্তু ওরা বেশ পেশাদার ও মানসম্পন্ন।’
বসুন্ধরার জন্য গোকুলম অজানা প্রতিপক্ষ হলেও অস্কার ভালোই করে চেনেন তার প্রতিপক্ষকে। স্পোর্টিং গোয়ার কোচ থাকাকালীন সময়ে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে দলটিকে। তাই গোকুলমকে ভয়ঙ্কর আখ্যা দিয়ে শিষ্যদের প্রস্তুত করছেন সেভাবেই।
‘গোকুলম কেরালা বেশ শক্তিশালী এক প্রতিপক্ষ হতে যাচ্ছে। ওরা গত তিনমাস ধরে অনুশীলন করে যাচ্ছে। ডুরান্ড কাপের চ্যাম্পিয়নও তারা। সেমিফাইনাল-ফাইনালে ওরা ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের মতো প্রতিপক্ষকে হারিয়েছিল। তাতেই বোঝা যাচ্ছে ওরা কতটা শক্তিশালী। ডুরান্ড কাপে ওদের ম্যাচ আমরা দেখেছি। ভিডিও দেখে অনুশীলন করছি। নিচের দিকে ওদের দুজন ফুলব্যাক খেলে। ওদের খেলার ধরণ আমরা বুঝতে পেরেছি। আমাদের কাজ হবে এ দুই ফুলব্যাককে অকার্যকর করে রাখা। তাহলে আমরা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবো।’
‘আমি ওদের ভালোই জানি। ওরা কেমন খেলে সে সম্পর্কে আমার ভালো একটা ধারণা আছে। ওদের খেলা বিশ্লেষণ করেছি, ভিডিও দেখেছি। আমরা গুরুত্বের সঙ্গেই এ টুর্নামেন্টকে নিচ্ছি।’
এই টুর্নামেন্টের পরপরই শুরু হয়ে যাবে বাংলাদেশের ঘরোয়া লিগ মৌসুম। ফেডারেশন কাপ, স্বাধীনতা কাপ ও প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে দলগুলো। বাংলাদেশ লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বসুন্ধরা কিংস এবার অংশ নেবে এএফসি কাপেও। সেই লক্ষ্য ধরেই প্রাক-মৌসুমে বিদেশি দলগুলোর বিপক্ষে নিজেদের ঝালাই করে নিতে চান কিংস অধিনায়ক কলিন্দ্রেস।
‘আশা করি ভালো একটা প্রাক-মৌসুম যাবে আমাদের। অনেকগুলো বিদেশি দলের বিপক্ষে খেলতে পারবো। এবার আমরা এএফসি কাপেও অংশ নিচ্ছি। আশা করি এখানে খেলার অভিজ্ঞতা আমাদের কাজে লাগবে।’