বাঙালির প্রাণের উৎসব। অসাম্প্রদায়িক চেতনার বর্ষবরণ উৎসব এবারও নতুন দিনের নতুন পথচলায় আমাদের জাতীয় জীবন আলোকিত করার জন্য এসেছে। প্রতিটি নতুন বছর আসে নতুন বার্তা নিয়ে। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ পাবি’ লালনের শাশ্বত বাণী। লালন এই বাংলার এক অসাম্প্রদায়িক, মানবিক চেতনার বৈশ্বিক প্রতীক। তার গান বৈশ্বিক, অসাম্প্রদায়িক জাগতিক সর্বোপরি মানবকল্যাণের এক অবিনাশী সত্তার জয়গান। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে মোঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন বলে বেশিরভাগ পণ্ডিত মনে করেন। ওই সময় বঙ্গে শক বর্ষপঞ্জি ব্যবহৃত হতো, যার প্রথম মাস ছিল চৈত্র। বাংলা বর্ষপঞ্জি প্রথমে ‘তারিখ-ই-এলাহী’ বা ‘ফসলি সন’ নামে পরিচিত ছিল। ১৫৮৪ সালের ১০ বা ১১ মার্চ তারিখে এটি ‘বঙ্গাব্দ’ নামে প্রচলিত হয়। এ নতুন সালটি সম্রাট আকবরের রাজত্বের ২৯তম বর্ষে প্রবর্তিত হলেও তা গণনা করা হয় ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৫ নভেম্বর থেকে। সপ্তম শতাব্দীর প্রারম্ভে শশাঙ্ক বঙ্গদেশের রাজচক্রবর্তী রাজা ছিলেন। আধুনিক ভারতের বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার অধিকাংশ এলাকা তার সাম্রাজ্য ছিল। অনুমান করা হয়, জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের সোমবার ১২ এপ্রিল ৫৯৪ এবং গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সোমবার ১৪ এপ্রিল ৫৯৪ বঙ্গাব্দের সূচনা হয়েছিল। দ্বিতীয় মত অনুসারে, মধ্যযুগে বাংলা সনের প্রচলনের আগে কৃষি ও ভূমি কর বা খাজনা আদায় করা হত ইসলামিক হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসারে। কিন্তু চাষাবাদ করা হত সৌর বছর অনুযায়ী। হিজরি বর্ষপঞ্জি চান্দ্রমাস নির্ভর বলে সবসময় কৃষি কর্মকাণ্ড অর্থবর্ষের সঙ্গে মিলত না। আমাদের ইতিহাস কৃষিজ ইতিহাস। তাই বাংলা বর্ষবরণের সঙ্গে কৃষিমাতৃক বাংলার নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। বাঙালির প্রতিটি নতুন বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে সম্প্রতি কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। এ বছর যেন এইসব গ্লানি অপমান মুছে আমরা নতুন দিনের যাত্রাকে উদ্ভাসিত করতে পারি, নতুন বছরে এই হোক আমাদের শপথ। সকলকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা।