আমাদের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নানা সময়ে নানা ধরণের বক্তব্য দিয়ে আলোচিত হয়েছেন। তার সবচেয়ে আলোচিত শব্দ হচ্ছে ‘রাবিশ’, আরেকটি হচ্ছে ‘বোগাস’। সবচেয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন সর্বশেষ সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ড নিয়ে বক্তব্য রেখে।
এর আগে গত বাজেট এর সময় সংসদে তোপের মুখে পড়েছিলেন নিজ দলের সাংসদ আর মন্ত্রীদের কাছে। প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাট আর ব্যাংকের ট্যাক্স কাটা নিয়ে কথা বলে। দেশব্যাপী আলোচনায় ছিলেন এই বয়স্ক মানুষটি তখন। পরে অবশ্য তা ব্যালেন্স করা হয়েছে। আরেক ডাকসাইটে মন্ত্রী ও নেতা তার পক্ষে কথা বলে তাকে সে যাত্রা রক্ষা করেছিলেন।
এবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক-আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে দেশের একটি দৈনিকের সাংবাদিকের মুখোমুখি হয়ে বললেন নিজ দলের সাংসদদের সম্পর্কে। রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমি খুবই আশাবাদী যে বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নেবেন। তিনি অংশ না নিলেও তার দলের অন্যরা অংশ নেবেন। মনে হয় না তার দলের অন্যরা অংশ না নেওয়ার মত অত বোকার কাজ করবেন। অংশ নেওয়াটাই ভাল হবে। তখন একটা প্রতিযোগিতা হবে। প্রতিযোগিতা হলেই আমাদের অনেক এমপিকে পাস করতে বেগ পেতে হবে। কারণ আমাদের অনেক এমপি অত্যাচারী, অসৎ। তারা মানুষের কাছ থেকে নানা ধরনের টাকাপয়সা আদায় করেন। একে ঠিক ঘুষ বলব না।’
এরপর সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেছেন, ‘সবাই এ কাজ করেন?’ উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘বেশ অনেকজন। সংখ্যাটা কম না। আমিই জানি কয়েকজনের কথা। নির্বাচনে প্রতিযোগিতা হলে তারা তখন শিক্ষা পাবেন।’
অর্থমন্ত্রীর এ কথার মানে কি? তিনি নিশ্চয়ই জেনেবুঝেই কথাটা বলেছেন বিদেশের মাটিতে বসে। এ কথা তো আর মিথ্যে নয়। অনেক সাংসদের কাজ কারবার নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরেও অসন্তোষ রয়েছে। টাকার বিনিময়ে বহু জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীকে মামলা থেকে রেহাই দিয়েছেন। দলে ভিড়িয়ে আপাতত মামলা হামলা থেকে রক্ষা করেছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের অযথা হয়রানি করার জন্য মামলা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংসদসহ স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা। মামলা দেওয়ার পরে আবার তারাই সমঝোতা করার জন্য টাকা চেয়েছেন। নইলে নানা রকমের মামলার ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন নিরীহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে।
অর্থমন্ত্রীর ওই বক্তব্যে এ কথাই কি প্রমানিত হয় না যে, দেশের ভেতর এক অরাজকতা তৈরি করে রেখেছে সরকারি দলে কিছু সাংসদ। যারা গত নির্বাচনে জনগনের ভোট পেয়ে সাংসদ হননি। ‘কলাগাছকে দাঁড় করিয়ে দিলেও নাকি কলাগাছও সাংসদ হয়ে যেত’ -এমন গল্প সারা দেশে প্রচলিত আছে। যারা আসলেই ভাগ্যবান। কষ্ট করে জনগণের কাছে তাদের যেতে হয়নি। যেহেতু কষ্ট করে জনগণের কাছে ভোট ভিক্ষা করতে হয়নি তাই জনগনের সেবা তারা কেন করবেন? ঢাকায় বসে বিভিন্ন কাজের বাহানা দিয়ে কামিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। নিজের এলাকায় জনগণের দুর্ভোগের বিষয়ে তাদের কোনো চিন্তা নেই। মানুষ তাদের কাছে অসহায় আজ। কোনো বিচার নেই। বিচার চাইতে গেলে উল্টা হয়রানির শিকার হতে পারে, এই ভয়ে মানুষ আজ বোবা হয়ে আছে। শুধু সুষ্টু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অপেক্ষায় আছে তারা। উচিত জবাবটা তখনই দিয়ে দেবে। জনগণের মনে এখন সন্দেহ. সুষ্টু নির্বাচন হবে তো?
অর্থমন্ত্রীর ওই সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেছেন, শিক্ষাটা তখনই পাবেন? তার আগে নয়? উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেছেন,‘ তার আগেও পাবেন। নেত্রী নিজেও খোঁজ-খবর রাখছেন। তাদের অনেকেই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না। আমার মনে হয় আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে অনেক নতুন মুখ আসবে।’
অর্থমন্ত্রীর শেষের এ কথায় আবার আশায় বুক বাধার মত অবস্থা তৈরি হয়। নেত্রী, মানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই সাংসদদের ব্যাপারে ঠিকই খোঁজ রাখেন। তাদেরকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার ব্যাপারে ইঙ্গিত করেছেন অর্থমন্ত্রী। এখন সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন কি জাগতে পারে না, কেন প্রধানমন্ত্রী এখনই ওই সাংসদদের ব্যাপারে কঠোর হচ্ছেন না। কেন তাদের বিচারের মুখোমুখি করাচ্ছেন না। জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন না। কোথায় সমস্যা? তিনি তো দলের কাণ্ডারি। সব পারেন। একটা দুষ্টু ক্ষত যত দ্রুত সরানো যায় শরীরের জন্য ততই মঙ্গল। নইলে পুরো শরীরে সেই দুষ্টু ক্ষত বাসা বাঁধতে পারে। তখন আর সরানো কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।
আমরা চাই একটা সুন্দর বাংলাদেশ। যেখানে গণতন্ত্র থাকবে। যেখানে জবাবদিহিতা থাকবে। মানুষ তার মৌলিক অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার হতে ভয়ে কুঁচকে থাকবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই তা সম্ভব, বিএনপি সেই নির্বাচনে আসবে, সব দলের অংশগ্রহণে সেই নির্বাচনের মাধ্যমে জাতি পাবে গণতান্ত্রিক সরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের অপেক্ষায় থাকলাম।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)