চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

৯০ কোটি ভোটারের ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় নির্বাচন’ বৃহস্পতিবার

ভারতে ১৭তম লোকসভা নির্বাচনে প্রথম দফায় ১৮টি রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত দুইটি অঞ্চলে ভোটগ্রহণ শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার। প্রথম দফায় লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ৯১টি আসনে ভোটাররা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন।

১১ এপ্রিল থেকে ১৯ মে পর্যন্ত মোট ৭ দফায় ভোটগ্রহণ হবে ‘বিশ্বের সর্ববৃহৎ নির্বাচন’ খ্যাত এই জাতীয় নির্বাচনে। ভারতের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে তারা।

এবারের নির্বাচনে সাত দফায় মোট ৯০ কোটি ভোটার অংশ নেবেন। এর মধ্যে দেড় কোটি নতুন ভোটার রয়েছেন।

১৭তম লোকসভা নির্বাচনকে ঘিরে গত এক মাস ধরেই সরগরম ছিল ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গন। সরকার ও বিরোধীদের একের পর এক আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে উত্তপ্ত ছিল প্রচারণা। দিল্লি দখলের লড়াইয়ে বৃহস্পতিবার থেকে ভোটাররা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন।ভারতের লোকসভা নির্বাচন-নির্বাচনে

এবারের নির্বাচনে প্রধান প্রতিপক্ষ ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং কংগ্রেস। প্রথম দফায় ১৮টি রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত দুইটি অঞ্চলের ৯১টি আসনের জন্য ভোট নেয়া হবে। এসব আসনে ১ হাজার ২৮৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।ভারতের লোকসভা নির্বাচন-নির্বাচনে

বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের ২টি আসন ছাড়াও অন্ধ্রপ্রদেশ, উড়িশ্যা, সিকিম এবং অরুণাচল প্রদেশে বিধানসভার ভোটগ্রহণ হবে। এদিকে নির্বাচনের একদিন আগেই বুধবার আমেথি থেকে মনোনয়ন জমা দেবেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী।

এবারের লোকসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, লোকদল, তৃণমূল কংগ্রেস, তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি, তেলেগু দেশম, আম আদমি পার্টির মতো আঞ্চলিক দলগুলোও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সাত ধাপের ভোট
ভারতের লোকসভা নির্বাচন-নির্বাচনেভোটে প্রভাব ফেলবে যে বিষয়গুলো
মঙ্গলবারই প্রথম দফার নির্বাচনের প্রচারাভিযান শেষ হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নতুন ভোটারদের প্রতি পাকিস্তানের বালাকোটে জঙ্গি শিবিরে ভারতের অভিযান এবং পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় নিহত সেনাদের প্রতি তাদের ভোট উৎসর্গ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তবে কংগ্রেস ও বিরোধী দলগুলো সেনা সদস্যদের জীবন নিয়ে বিজেপির রাজনীতির প্রতিবাদ জানিয়েছে।

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এসেছিলেন ভারতের অর্থনীতিতে বিরাট সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে। কিন্তু সেই থেকে দেশটিতে বেকারত্বের হার কমেনি, বরং বেড়েছে। সমালোচনা-বিতর্কে জড়িয়েছে বড় বড় নীতিমালাগুলো। হয়তো সে কারণেই ক্ষমতা ধরে রাখতে তার বিজেপি এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় জাতীয়তাবাদকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

ধারণা করা হচ্ছে, এবারের লোকসভা নির্বাচনে মূল কিছু ইস্যু ফল নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে। এর মধ্যে অবশ্যই রয়েছে বেকারত্ব ও কর্মসংস্থান ইস্যুটি। কেননা এবারের নির্বাচনে দেড় কোটিই নতুন ভোটার।

এছাড়াও অনেক বড় ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে বর্ণপ্রথা ও ধর্মীয় বিভেদপূর্ণ ধারণা। ভারতের প্রায় ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তাই মোদি ও তার দল বারবারই হিন্দু জাতীয়তাবাদকে উসকে দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

পাকিস্তান বিরোধী প্রচারণাকেও এ কাজে লাগানো হচ্ছে। এখানেই চলে আসে কাশ্মীর প্রসঙ্গ। কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সাম্প্রতিক হামলার ঘটনার মধ্য দিয়ে বিজেপির হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রচারণার পালে হাওয়া লাগছে।

পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত লাগোয়া ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় অংশগুলোতে পাকিস্তানবিরোধী মনোভাব সেই ১৯৪৭ সাল থেকেই বেশ শক্তিশালী। কেননা এই অঞ্চলগুলোতে দেশবিভাগ থেকে শুরু করে পরবর্তী আরও তিনটি যুদ্ধে ব্যাপক প্রাণহানী হয়েছে।ভারতের লোকসভা নির্বাচন-নির্বাচনে

কিন্তু এর পাশাপাশি মুসলিমবিরোধী মনোভাবও এখন দিন দিন ভারতে বেশ স্বাভাবিক একটি বিষয়ে পরিণত হচ্ছে, বিশেষ করে এই উত্তরাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে। ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ বিষয়টি প্রকট হচ্ছে। গত ৫ বছরে ভারতে শুধু বেআইনিভাবে গরু সরবরাহ ও গরুর মাংস খাওয়া বা বিক্রির সন্দেহের ওপর ভিত্তি করে হিন্দু কট্টরপন্থি বেশ কিছু সহিংস দল ও গোষ্ঠীর আক্রমণে অন্তত ৪০ জন মুসলিম নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

একই সঙ্গে উঁচু ও নিচু বর্ণের ভিত্তিতে কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা সুবিধার বিপুল ব্যবধান রাখার বিষয়টি উচ্চবর্ণে প্রশংসিত হলেও অন্যান্য বর্ণের জনগোষ্ঠীর জন্য তা হয়ে উঠেছে ক্ষোভের কারণ।

এছাড়া রাজনৈতিক জটিলতা বেশি এবারের লোকসভা নির্বাচনে। গতবারের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত রাজ্যগুলোর মধ্যে কংগ্রেস, বিজেপিসহ স্থানীয় দলগুলোর প্রতি যে বিশেষ অনুরাগ বিদ্যমান ছিল, বেশকিছু রাজ্যে গত বিধানসভা নির্বাচনেই এর মাঝে দেখা দিয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। সেই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা সাত ধাপের লোকসভা নির্বাচনেও থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে ছয় সপ্তাহব্যাপী এ নির্বাচন শুরু হওয়ার পর শেষ হতে হতে আপাতদৃষ্টিতে প্রায় গুরুত্বহীন অনেক ছোট ছোট বিষয়ও শেষ পর্যন্ত বড় হয়ে দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে।