টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার হাতিবান্ধা এলাকার এক কলেজ ছাত্রীকে পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে ৬ মাস ১৭দিন আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগে দূর সম্পর্কের চাচা বাদল মিয়ার বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীর ভাই বাদী হয়ে সখিপুর থানায় মামলা করেছে।
ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর ভাই বলেন, ধর্ষক বাদল তাদের দূর সম্পর্কের চাচা। তিনি স্থানীয় ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের’ সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ায় প্রভাব বিস্তার করে রেখেছিলো।মামলা দায়ের হলেও এখন পর্যন্ত ধর্ষককে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
কলেজ ছাত্রী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এক ছেলের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। আমি ওই ছেলেকে বিয়ে করতে চাচা বাদল মিয়ার সাহায্য চাই। তার ক্ষমতাবলে ওই ছেলের সঙ্গে আমার বিয়ে করিয়ে দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। পরে গত ১১ জানুয়ারি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে সকালের দিকে তিনি আমাকে তার জঙ্গলের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে যেতে বলে। তার কথা মতো আমি ওই বাড়িতে গেলে আমাকে ঘরে আটকে রেখে সন্ধ্যায় ছেলেটিকে সাথে নিয়ে আসবেন বলে চলে যায়। পরে সন্ধ্যার দিকে কিছু খাবার নিয়ে এসে আমাকে জানায় অর্ধেক কাজ হয়েছে বাকী কাজ কাল হবে, তাই আজ রাত এখানেই থাকতে হবে। তার কথামতো আমি থেকে যাই এবং তার আনা খাবার খাই। ওই খাবার খাওয়ার পর আমার আর কিছু মনে নেই।
‘পরের দিনও একই কথা বলে রাতে এসে খাবারের সাথে নেশা জাতীয় জিনিস মিশেয়ে আমাকে অচেতন করে রাখতো। আমার কথা বলা ও নড়াচড়া করার কোন শক্তি থাকতো না। প্রথম দিকে নিয়মিত আসলেও পরে কয়েকদিন পর পর খাবার দিতো আর খাবারের সাথে নেশা জাতিয় দ্রব্য মিশিয়ে অচেতন করে ধর্ষণ করতো। সর্বশেষ পাঁচ দিন না খেয়ে থাকার পর কিছুটা চেতনা ফিরে আসে। এসময় প্রতিবেশিরা ঘরের তালা ভেঙ্গে অর্ধমৃত অবস্থায় আমাকে উদ্ধার করে। পরে স্বজনদের জানালে তারা আমাকে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।’
তার মামা বলেন, ‘নিখোঁজের পর থানায় জিডি করতে গেলে বাদল প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা তার সহযোগিতা নেই। পরে বাদল আমাদের সখিপুর থানার সামনে বসিয়ে রেখে ভিতর থেকে ফিরে এসে জানায় জিডি করতে হবে না। মেয়েটি কোথায় আছে আমি তা জানি। এখন জিডি করলে তার ক্ষতি হতে পারে এবং নতুন সংসার ভেঙ্গে মেয়েটি কলঙ্কিত হতে পারে। সংসারে মেয়েটির আপন মা না থাকায় আর সে পালিয়ে বিয়ে করে ভাল আছে জেনে আর জিডি করা হয়নি। অথচ তাকে ঘরে আটকে রেখে সে দিনের পর দিন নাটক করেছে।’
টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার ডা. জাকিয়া রশিদ (শাফি) জানান, ‘ওই ছাত্রীকে হাসপাতালে আনার পর তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে রিপোর্ট পেলে আরো বিস্তারিত জানা যাবে।’
টাঙ্গাইল পুলিশ সুপার মো. মাহবুব আলম বলেন, ‘এ ঘটনায় অভিযুক্ত বাদলের বিরুদ্ধে সখিপুর থানায় ধর্ষিতার ভাই বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। ঘটনার পক্ষে-বিপক্ষে নানান তথ্য উপাত্ত আমাদের হাতে এসেছে। ধর্ষককে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’