চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

৫৭ ধারার ব্যবহার-অপব্যবহার আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?

ধর্ষণ বিষয়ে সমালোচনামূলক একটি লেখাকে কেন্দ্র করে আজ (বৃহস্পতিবার) নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল একই ধারার মামলায় আটক করা হয়েছিল তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সফল উদ্যোক্তা ফাহিম মাশরুরকে, পরে অবশ্য অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে বিতর্ক চলছে দীর্ঘদিন ধরে। ওই আইনের ধারার অপপ্রয়োগে সাংবাদিকসহ নানা পেশার মানুষ হয়রানির শিকার হতে থাকলে ধারাটি বাতিলের দাবি ওঠে। গত ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিল করে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন- ২০১৮’ এর খসড়া অনুমোদন পেয়েছে। যেহেতু ৫৭ ধারা এখনও পুরোপুরি বাতিল হয়নি, সেজন্য এর ব্যবহার চলছেই। সামাজিক মাধ্যমে নানা উষ্কানিমূলক, বিতর্কিত ও ক্ষতিকর মন্তব্য/পোষ্টের কারণে এ ধরণের আইন প্রয়োজন হলেও এ আইনের অপব্যবহার করে হয়রানি ও মুক্তমত প্রকাশের বাধার কারণে আইনটি নিয়ে এতো বিতর্ক-সমালোচনা। সামাজিক মাধ্যমসহ তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্র যেভাবে এগিয়েছে, সে তুলনায় অপরাধের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলনায় আমাদের দেশের আইন সেরকম উপযোগী না বলে অনেকে অভিযোগ করে থাকেন। বিষয়টি আমাদের কাছেও বেশ জটিল বলে মনে হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটেই ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন- ২০১৮’ আইন হচ্ছে, তা নিয়েও শুরু হয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ এ আইনের ৩২ ধারাসহ কয়েকটি বিতর্কিত অংশ নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন। দোষ-ত্রুটি ধরে সমালোচনা, বহুমতের বিকাশে ব্যাখ্যা ও গঠনমূলক আলোচনা যখন করা হয়, তখন তা কোনো না কোনো পক্ষের বিপক্ষে যায়। এখন সেক্ষেত্রে যদি সেই সংক্ষুব্ধ পক্ষ মামলা দায়ের করে, এবং আইনপ্রয়োগকারী/প্রাথমিক তদন্তকারী সংস্থা যদি প্রেক্ষাপট ও সমস্যার জটিলতা না বুঝে মামলা নেয়া বা না নেয়ার মতো ঘটনা ঘটায়, তা হবে ক্ষতির কারণ। ৫৭ ধারার কোনো মামলার অপব্যবহার হলে অধিকাংশ সময়ে তা সরকারের ইমেজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আসলে ৫৭ ধারা বা ৩২ ধারা যাই হোক না কেন, অপরাধের প্রেক্ষাপট না বোঝা ও আইনের অপব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করা না হলে কোনো আইনই কাজে আসবে না বলে আমাদের ধারণা। রাষ্ট্রের, জনগণের নিরাপত্তা, জঙ্গি তৎরপতা দমনের জন্যে আধুনিক প্রযুক্তিগত নিরাপত্তাসহ যেকোন আইন অবশ্যই প্রয়োজন, কিন্তু আইনের দোহাই দিয়ে মুক্তচিন্তা ও অবাধ তথ্য প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে রাষ্ট্রযন্ত্রের কোনো অংশে দুর্নীতি ও পেশীশক্তির প্রদর্শন হতে পারে বলে আমাদের শঙ্কা হচ্ছে। ৫৭ ধারায় এখন পর্যন্ত যতো মামলা দায়ের হয়েছে ও বিচারাধীন রয়েছে, সেসব থেকে শিক্ষা নিয়ে আইন প্রণেতা, তদন্তকারী, মামলা গ্রহণকারীসহ বিভিন্ন পক্ষের বিষয়টি বোঝার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি। আমাদের আশাবাদ, বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহল নিশ্চয় কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।

Labaid
BSH
Bellow Post-Green View