চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

২৮ বছর পর খুলল হত্যা মামলার বন্ধ দুয়ার

দীর্ঘ ২৮ বছর পর অবশেষে সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলার বিচারকাজ আবার শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ১৯৯২ সালে উচ্চ আদালতের এক আদেশে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ মামলার বিচারকাজ স্থগিত ছিল।

বুধবার ২৮ বছর আগের জারি করা সেই রুল খারিজ করে রায় দিয়েছেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।

সেই সাথে হাইকোর্ট তার রায়ে এ মামলাটির অধিকতর তদন্ত ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন। এবং তদন্ত শেষে ৯০ দিনের মধ্যে এ মামলাটির বিচার শেষ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ রায় ঘোষণার সময় হাইকোর্ট বলেন, ‘২৮ বছর পর আবার এ মামলার অধিকতর তদন্ত হলে এবং এরপর রায় হলে কি হবে তা কেবলই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই জানেন। ২৮টা বছরে এ মামলার ভিকটিমকে আমারা কি দিতে পারলাম? সামগ্রিকভাবে এটা আমাদের ব্যর্থতা।’

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ। অন্যপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ন ও ব্যারিস্টার মোতাহার হোসেন।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়: ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সগিরা মোর্শেদ সালাম ভিকারুননিসা নুন স্কুল থেকে তার মেয়েকে আনতে যাচ্ছিলেন।  বিকাল ৫টার দিকে সিদ্ধেশ্বরী রোডে পৌঁছামাত্র মোটরসাইকেলে আসা ‘ছিনতাইকারীরা’ সগিরা মোর্শেদ সালামমের হাতে থাকা স্বর্ণের চুড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।  এ সময় তিনি নিজেকে বাঁচাতে দৌঁড় দিলে তাকে গুলি করা হয়।

এরপর হাসপাতালে নেওয়ার পথে সগিরা মোর্শেদ সালাম মারা যান। ওইদিনই রমনা থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের স্বামী সালাম চৌধুরী। সগিরা মোর্শেদ সালাম কে গুলি করার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা রিকশাচালক দুজনকে শনাক্ত করলেও অজ্ঞাত কারণে মিন্টু ওরফে মন্টু ওরফে মরণের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয় ডিবি পুলিশ।

এরপর ১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি আসামি মন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু বকর সিদ্দীক। সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয় সাতজনের। সাক্ষ্যে বাদীপক্ষ থেকে বলা হয়, এ মামলার তদন্তকালে আসামি মন্টু এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকটাত্মীয় মারুফ রেজা গ্রেপ্তার হন। কিন্তু মারুফ রেজার নাম বাদ দিয়েই চার্জশিট দেওয়া হয়।

সাক্ষ্যে মারুফ রেজার নাম আসায় অধিকতর তদন্তের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর ওই বছরের ২৩ মে অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন বিচারিক আদালত। পরে ওই অধিকতর তদন্তের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন মারুফ রেজা।

এ রিভিশন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালের ২ জুলাই হাইকোর্ট এ মামলার অধিকতর তদন্তের আদেশ ও বিচারকাজ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। সেই সঙ্গে তদন্তের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে। এরপর ১৯৯২ সালের ২৭ আগস্ট হাইকোর্ট তার রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার বিচারকাজ স্থগিত থাকবে বলে আরেকটি আদেশ দেন। 

এ মামলার সর্বশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা সম্প্রতি বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের নজরে আনলে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্রপক্ষ।

এরপর বিষয়টি বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তোলা হয়। আজ হাইকোর্ট এ হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিত করে জারি করা রুল খারিজ করে রায় দেন।