ভালো নেই রিক্সাচালক থেকে কণ্ঠশিল্পী বনে যাওয়া আকবর। অসুস্থতা নিয়ে ঈদের পরদিন পিজি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকলেও দিনে দিনে তার শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হয়েছে। হাসপাতালের বিছানায় থেকেই এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে আকবর তার একমাত্র মেয়ে অথৈকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
পাশাপাশি শারীরিক অবস্থার উন্নতি কামনায় দোয়া চেয়ে বাঁচার আকুতিও জানান ‘তোমার হাত পাখার বাতাসে’ খ্যাত এই শিল্পী।
সোমবার বিকেলে আকবরের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, দুইদিন শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছিল। ওই পরিস্থিতি এখনও বিরাজমান। তিনি বলেন, আকবরের সারা শরীর কাঁপছে। শরীরে লবণ, পটাশিয়াম নিচের দিকে। এজন্য সবসময় তাকে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। তার হার্টেও সমস্যা। শরীরে জ্বালা পোড়ায় কাতরাচ্ছে। ডাক্তার সবসময় দেখাশুনা করলেও বলছেন, যে কোনো সময় খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে। আল্লাহকে ডাকুন। দোয়া করুন।
এদিকে, আকবর হাসপাতালের বেডে শুয়ে চাইছেন তিনি সুস্থ হয়ে আবার গানে ফিরবেন। তবে তার শরীর টানছে না। ভয় পাচ্ছেন, তার যদি কিছু হয় তবে একমাত্র মেয়ে অথৈ-এর কী হবে! কান্নায় ভেঙে পড়ে আকবর বলেন, আমার একটাই মা। এই মা ছাড়া আমার রক্তের আর কেউ। আমি চলে গেলে আমার মাকে কে দেখবে! আমার মা লেখাপড়ায় ভালো। নিজ যোগ্যতায় আমার মা ভালো স্কুলে পড়তে পারবে। আমার মা একেবারে অবুঝ শিশুর মতো। এই মায়ের জন্য হলেও আমি বাঁচতে চাই। প্রধানমন্ত্রী আমার মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছেন। তাকে বলেছিলাম, আমার মা বঙ্গবন্ধু নিয়ে গান গাইতে পারে। তাকে আপনি একটু দেখবেন। দেশের মানুষদেরও বলছি, আমি যদি না থাকি আমার এই মাকে আপনারা দেখবেন।
বলতে বলতে মেয়ে অথৈকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ‘ইত্যাদি’র মাধ্যমে দেশ বিদেশে গায়ক হিসেবে পরিচিতি পাওয়া আকবর। যিনি আগে যশোর শহরের অলিগলিতে রিকশা চালাতেন। খুলনার পাইকগাছায় জন্ম হলেও আকবরের বেড়ে ওঠা যশোরে। টুকটাক গান করতেন। তবে গান নিয়ে ছোটবেলা থেকে হাতেখড়ি ছিল না। আকবরের ভরাট কণ্ঠের গানের কদর ছিল যশোর শহরে। সে কারণে স্টেজ শো হলে ডাক পেতেন। ২০০৩ সালে যশোর এম এম কলেজের একটি অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন আকবর। সেবার বাগেরহাটের এক ভদ্রলোক আকবরের গান শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন।
তারপর তিনি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে চিঠি লেখেন আকবরকে নিয়ে। এরপর ইত্যাদির টিম আকবরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই বছরই ইত্যাদিতে ‘একদিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে, ফিরবে না সেতো আর কারও আকাশে’- কিশোর কুমারের এ গানটি গেয়ে রাতারাতি পরিচিতি পেয়ে যান। এরপর আকবরকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি গায়ক পরিচয়ে পরিচিতি পান। পরে আকবরের ‘তোমার হাত পাখার বাতাসে’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
বর্তমানে শারীরিক নাজুক অবস্থা আকবরকে চেনার উপায় নেই। তার সারা শরীরে কালো দাগ। নানাভিদ রোগ আর ঘা থেকে আকবরের পুরো শরীরে এই দাগ। জানা যায় আকবর যখনই অসুস্থ হন, এসব ঘা এবং দাগ ফুটে উঠে।
আকবর কাঁদো কাঁদো গলায় দেশের মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, আমার গান যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে আমার জন্য একটু দোয়া করবেন, যেন সুস্থ হয়ে আবার গান করতে পারি। আমাকে নিয়ে কেউ বাজে মন্তব্য করবেন না। বাজে মন্তব্য দেখলে আমি অনেক কষ্ট পাই। কাউকে নিয়ে বাজে কথা বলার আগে ভেবে চিন্তে বলা উচিত। তিনি বলেন, দেশের বড় বড় শিল্পীরা সবাই চলে যাচ্ছে। আপনারা অবহেলা কইরেন না। আপনাদের দোয়া পেলে আমাদের ভালো লাগে।
তিনি বলেন, শিল্পীরা সবাই খারাপ না। সবাই খারাপ হলে এই পৃথিবী থাকতো না। আমি আকবর মানুষটা খারাপ না। আমি খুনি না, কোনো দোষ করিনি। রাস্তায় চলেছি, গান করেছি কিন্তু। কখনো কারও ক্ষতি করিনি। দয়া করে আমাকে কেউ খারাপ কথা বলবেন না। আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছে অনেকদিন গান করি। আবার মানুষের মধ্যে গিয়ে গান করি।