কেরালার সাবারিমালা মন্দিরে নারী প্রবেশে বহু শতাব্দী পুরনো নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের দেয়া রায়ের একমাস পরও দুই নারীর প্রথম প্রবেশে বাধা দিয়েছে সেখানে অবস্থানকারী পূণ্যার্থীরা।
কেরালার একজন ও অন্ধ্র প্রদেশের একজন নারীসহ চারজনের একটি দল পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত মন্দিরটির উদ্দেশে ট্রেকিং শুরু করলে মাত্র কয়েকশ’ মিটার এগোনোর পরই রায়ের প্রতিবাদকারী ভক্তরা তাদেরকে ফিরে যেতে বাধ্য করে।
এনডিটিভি জানায়, কেরালা থেকে যাওয়া নারী লিবি সিএস একজন সাংবাদিক। তিনি রওনা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সাবারিমালায় যাওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে তাদের বাধা দানকারী ভক্তরা ওই স্ট্যাটাস দেখেছিল।
সাবারিমালা থেকে ৪.৬ কিলোমিটার দূরে পামবা এলাকায় ভক্তদের একটি দল লিবিদের ওপর হামলা করতে এগোলে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাদের বাঁচিয়ে ফেরত নিয়ে আসে।
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কেরালার বিখ্যাত সাবারিমালা মন্দিরে ঋতুমতী নারীর (১০ থেকে ৫০ বছর বয়স) প্রবেশ একেবারেই নিষিদ্ধ ছিল। স্থানীয়দের বিশ্বাস, ওই মন্দিরের উপাস্য দেবী আয়াপ্পা একজন চিরকুমারী এবং পিরিয়ড হওয়ার বয়স হয়েছে এমন সব নারী ‘অপবিত্র’।
এ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে গিয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের দেয়া রায়ে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত নারী উপাসকদের প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হয়।
রায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, উপাসনা এবং নিবেদন কখনো লিঙ্গ বৈষম্যমূলক হতে পারে না। ঈশ্বরের কাছে সব ভক্তই সমান। দেবী আয়াপ্পাও এর বাইরে নন। প্রার্থনা-উপাসনায় সবার সমান অধিকারে পুরুষতন্ত্র কখনো বাধা হতে পারে না।
পাঁচ সদস্যের ওই বেঞ্চের একমাত্র নারী সদস্য বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রা শুধু এ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে কথা বলেছিলেন। তার বক্তব্য ছিল, আদালতের কখনো ধর্মচর্চায় হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।
এর প্রায় এক মাস পর মঙ্গলবার প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে নারী ভক্তদের জন্য বিকেল ৫টা থেকে খুলে দেয়া হয় মন্দিরের দরজা। কিন্তু মন্দিরের ভক্তরা সুপ্রিম কোর্টের এই বিচার মেনে নিতে পারছে না। মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিক থেকে মন্দিরের সব বয়সী পুরুষ ও বর্ষীয়ান নারী ভক্তরা সাবারিমালার পথ আটকে মিছিল শুরু করে।
ওই সময় পূণ্যার্থীবাহী প্রত্যেকটি বাস থামিয়ে জোর করে উঠে তারা খুঁজে খুঁজে দেখতে থাকে ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সের কোনো নারী মন্দিরে যাওয়ার চেষ্টা করছে কিনা। একই সঙ্গে সবাইকে নির্দেশনা দিতে থাকে যেন সুপ্রিম কোর্টের রায় কেউ আমলে না নেয়।
এ পর্যায়ে একটি সরকারি বাস থেকে মন্দিরগামী সাংবাদিকতা বিভাগের একদল ছাত্রীকে জোর করে টেনেহিঁচড়ে বের করে মারধর করে ফেরত পাঠিয়ে দেয় উত্তেজিত ভক্তরা। ওই সময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সংঘর্ষের পর থেকে পুরো এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বুধবার বিকেল ৫টায় আবারও মন্দির খোলা হবে।
তবে বুধবারও কোনো ‘নিষিদ্ধ’ বয়সের নারীকে মন্দিরে ঢুকতে দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ঘটনাস্থলে অবস্থানকারী ভক্তরা। আদালতের রায় জোর করে আরোপের চেষ্টা করা হলে আত্মহত্যা করার হুমকিও দিয়েছে তারা।
সাবারিমালা মন্দির বছরে মাত্র ১২৭ দিন খোলা থাকে। ঘন বনের ভেতর দিয়ে একটি মাত্র পথেই শুধু সেখানে পৌঁছানো সম্ভব। সোমবার থেকে মন্দিরটি আবারও বন্ধ থাকবে।