দেড় যুগ আগে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার মামলায় দণ্ডিত সাতজনকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
হাইকোর্টের দেয়া জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর চেম্বার আদালত সাতজনের জমিন স্থগিত করে বিষয়টি রোববার আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর। আর জামিন আবেদন কারীদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
এই মামলায় দণ্ডিত ১৮ জনের জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে গত মঙ্গলবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ সাতজনকে জামিন দিয়েছেন। এছাড়া জামিন প্রশ্নে রুল জারি করে নিম্ন আদালতকে আপিল নিষ্পত্তি করতে বলেন। হাইকোর্টের জামিন আদেশ পাওয়া সাতজন হলেন, আইনজীবী আবদুস সাত্তার, আইনজীবী আব্দুস সামাদ, গোলাম রসুল, জহুরুল ইসলাম, রাকিব, শাহাবুদ্দিন ও মো. মনিরুল ইসলাম।
ঘটনার বিবরণ থেকে জানা যায়, ধর্ষণের শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখতে ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে যান তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সড়ক পথে ঢাকায় ফেরার সময় কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে তার গাড়ি বহরে হামলা হয়। বোমা বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়া হয়। সে সময় শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাসহ স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাংবাদিকরা আহত হন। ওই ঘটনায় কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দিন কলারোয়া থানায় মামলা করতে গেলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তখন সাতক্ষীরার আদালতে নালিশি অভিযোগ করেন কলারোয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার মোসলেম উদ্দিন। আদালত অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করতে সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দেয়।
এক পর্যায়ে ওই মামলা খারিজ হয়ে যাওয়ার পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়। তদন্ত শেষে পুলিশ বিএনপির সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। হত্যাচেষ্টা, বিস্ফোরক দ্রব্য ও অস্ত্র আইনের পৃথক ধারায় দেওয়া তিনটি অভিযোগপত্রের মধ্যে হত্যাচেষ্টা মামলার রায় হয় গত ৪ ফেব্রুয়ারি। ওই রায়ে ৫০ আসামির সবাইকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন। এর মধ্যে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব এবং বিএনপিকর্মী আরিফুর রহমান ও রিপনকে দশ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া কলারোয়া উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের বাচ্চুকে নয় বছরের কারাদণ্ড এবং বাকি ৪৬ জনকে চার থেকে ছয় বছরের সাজা দেন আদালত।