যাবজ্জীবনের পরিবর্তে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আজ অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। জাতীয় সংসদের অধিবেশন না থাকায় মূলত ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০২০’ সংশোধন করে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২০’নাম দিয়ে ওই অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
আমরা জানি, সম্প্রতি সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীকে কেড়ে নিয়ে ধর্ষণ, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের পাশাপাশি আরও কিছু ঘটনা মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাশাপাশি তাদের বড় একটা অংশ এমন পাশবিক আর বিভৎস নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে। সারাদেশের সেই আন্দোলনে নারীদের সাথে রাজপথে সামিল হয় পুরুষরাও।
বলতে গেলে, ওই আন্দোলনের আঁচেই অনেকটা তাড়াহুড়ো করে ধর্ষণে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করে সরকার। যদিও সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ এমনটা মানতে নারাজ। তাদের দাবি, কোনো দাবির মুখে নয়, নারী নির্যাতন বন্ধের জন্যই এমন কঠোর পদক্ষেপ।
অধ্যাদেশ জারি হয়ে যাওয়ার পর এমন বিতর্ক আসলে অর্থহীন। এখন মানুষের কাছে বড় প্রশ্ন- এতে কি ধর্ষণ কমবে? কেউ কেউ আবার প্রশ্ন করছেন, এতে নিরপরাধ মানুষকে ফাঁসানো হবে না তো? এসবের বাইরে গিয়ে কিছু মানুষের দাবি, এই কঠিন শাস্তিতেও ধর্ষণ কমবে না। তাদের যুক্তি; বিদ্যমান পদ্ধতিগত জটিলতা আর পারিপার্শ্বিক নানান বাধায় ধর্ষণের শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। সেগুলো দূর করা না গেলে পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হবে না।

নারী অধিকারকর্মী, সিনিয়র আইনজীবী, অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং সমাজকর্মীদের অনেকের শঙ্কা- মৃত্যুদণ্ডেও কমবে না ধর্ষণ। তাদের মতে, বেশিরভাগ ধর্ষণের ঘটনার পেছনে থাকে ক্ষমতাসীনরা। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ায় তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ জোগাড় করা কঠিনতম কাজ।
আমরা জেনেছি, এরই মধ্যে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এমন অবস্থানে নিশ্চয়ই আরও কোনো কোনো সংগঠন যাবে? তার মানে, ধর্ষণ নিয়ে এবং তার বিচারের ক্ষেত্রে শঙ্কাটা রয়েই গেল।
আমরা মনে করি, এই শঙ্কা, অবিশ্বাস দূর করার দায়িত্ব সরকারের। জনগণের মাঝে যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে, তা ফিরিয়ে আনতে কাজ করতে হবে।
