গ্রামের বধূ, সহজ সরল মুখ, ভিখারী, ভ্যানচালক, কখনোবা গার্মেন্টস কর্মীর বেশে দেখা মেলে তাদের। তবে সাধারণ মানুষের পক্ষে তাদের দেখে বোঝার উপায় নেই যে, ছদ্মবেশী এই নারীরাই র্যাবের বাঘা বাঘা কর্মকর্তা। অপরাধী ধরতে একেক সময় একেক বেশ ধারণ করেন তারা। বড় বড় অপরাধী ধরতে সিদ্ধহস্ত এসব নারী কর্মকর্তারা। অপরাধী ধরতে ছুটে চলেন দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। তাদের ক্লান্তি নেই, নেই অবসাদ। নারী বলে পেশাগত দায়িত্ব পালনে বিন্দুমাত্র পিছিয়ে নেই তারা, দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ তারা।
চ্যালেঞ্জিং ক্ষেত্র র্যাবেও নারীরা তাদের মেধাশ্রম দিয়ে পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলছেন। ছোট-ভারি অস্ত্র চালনা থেকে শুরু করে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন।
বর্তমানে র্যাবে এডিশনাল ডিআইজি পদে নারী আছেন ১ জন। মেজর পদে রয়েছেন ১ জন, এডিশনাল এসপি পদে ২ জন, এএসপি পদে ৭ জন, এসআই পদে ৩ জন ও এএসআই পদে ২ জন। এছাড়া বর্তমানে সারাদেশে র্যাবে নারী কনস্টেবল আছে ১৮৪ জন। প্রত্যেকেই সুচারুরুপে পালন করছেন তাদের দায়িত্ব।
![](https://i0.wp.com/www.channelionline.com/wp-content/uploads/2018/03/rab-1.jpg?resize=800%2C533&quality=100&ssl=1)
র্যাব ৩ এর কোম্পানি কমান্ডার এডিশনাল এসপি বীনা রানী দাস। ২০১৬ সালে নিয়োগ পান তিনি। চ্যানেল অাই অনলাইনকে সেসময়ের কর্মজীবনের স্মৃতিচারণ করে এ কর্মকর্তা বলেন, সেসময় পাবনা জেলা ছিলো চরমপন্থীদের দখলে। আমি যেদিন কাজে যোগদান করি তার দু’দিন আগে এক চরমপন্থি নেতা ও তার ৮০ বছরের মা’কে গলা কেটে হত্যা করে আরেক চরমপন্থী নেতা। সেসময় সমগ্র পাবনা জেলা চরমপন্থীদের ভয়ে কাঁপতো। সাধারণ মানুষের ঘুম হারাম করে দিয়েছিলো চরমপন্থীরা। পরবর্তীতে গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় তাদের ধরতে সক্ষম হই।
![](https://i0.wp.com/www.channelionline.com/wp-content/uploads/2024/02/Channeliadds-Reneta-16-04-2024.gif?fit=300%2C250&ssl=1)
শুধু এ অভিযান নয়, জঙ্গি বিরোধী অভিযানসহ নানা অভিযানের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এ নারী কর্মকর্তা।
র্যাব ৭ এর সিনিয়র এএসপি শাহেদা সুলতানা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ‘র্যাবের মত একটি চ্যালেঞ্জিং সেক্টরে দায়িত্ব পালন করতে পেরে আমি গর্বিত। তবে এখানে কাজ করতে যেয়ে নিজেকে কখনো নারী মনে হয়নি। অভিযানগুলোতে যখন যাই তখন চারপাশে দেখা যায় সবাই পুরুষ সহকর্মী তাদের মধ্যে আমি একাই নারী। কিন্তু এটা কখনো আলাদা কিছু মনে হয়না। একাজে একজন পুরুষ ঠিক যতটা দক্ষ একজন নারীও ঠিক ততোটাই দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারে।’
![](https://i0.wp.com/www.channelionline.com/wp-content/uploads/2018/03/saheda-7.jpg?resize=800%2C532&quality=100&ssl=1)
চ্যালেঞ্জিং এসব কাজে নারী কর্মকর্তাদের দাপট চোখে পড়ার মতো। সাহসিকতামূলক কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ মিলছে নানা পুরস্কারও। এ পেশায় নারীরা পর্যায়ক্রমে তাদের কাজের দক্ষতা দেখিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের সারিতে। মেধা, যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতায় কোন অংশেই তারা কম না পুরুষের থেকে। ঘর থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র সকল জায়গায়ই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও সব বাঁধাকে জয় করে এগিয়ে চলছেন তারা। তবে ঝুঁকিপূর্ণ এ পেশায় কারো কারো পরিবারের পক্ষ থেকে কিছুটা বাঁধা আসলেও সেক্ষেত্রেও মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন তারা। সামনের সারিতে থেকে থেকে নেতৃত্বদান, কাজের প্রতি একন্ষ্ঠিতা, একাগ্রতা সাহসিকতা ও কর্মদক্ষতায় মুগ্ধ তাদের পুরুষ সহকর্মীরাও। নারীদের কাজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা শোনা গেছে তাদের কণ্ঠে।
![মোহাম্মদ মুফতি মাহমুদ খান](https://i0.wp.com/www.channelionline.com/wp-content/uploads/2018/03/mufti.jpg?resize=415%2C235&quality=100&ssl=1)
র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ মুফতি মাহমুদ খান চ্যানেল অাই অনলাইনকে বলেন: ‘শুধু র্যাব না। বর্তমানে নারীরা সবক্ষেত্রেই পুরুষের পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন ফোর্সে কাজ করছে। মিশনে যাচ্ছে। বিভিন্ন অভিযানে যাচ্ছে। নেতৃত্ব দিচ্ছে অভিযানের। সবক্ষেত্রেই নারীরা এখন পুরুষের সাথে সমানতালে এগিয়ে চলছে।’
‘র্যবের ক্ষেত্রে যদি বিশেষভাবে বলি তাহলে বলতে হবে, এক্ষেত্রে নারী সদস্যরা তাদের কর্মসম্পাদন করছে দক্ষতার সাথে। রাষ্ট্রের প্রতি তারা তাদের দায়িত্বটা খুব ভালোভাবেই পালন করছেন।’
চ্যালেঞ্জিং এ পেশায় নারীরা এতটাই দক্ষ যে এক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্যের কোন অবকাশ নেই বলেও উল্লেখ করেন এ কর্মকর্তা।
র্যাবের অ্যাডিশনাল এসপি আব্দুল করিম এ বিষয়ে চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ‘তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে র্যাবের উচ্চপদে কাজ করছেন নারীরা। কর্মক্ষেত্রে তাদের একাগ্রতা ও সাহসিকতা প্রশংসার দাবিদার উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘র্যাবের মত একটি চ্যালেঞ্জিং সেক্টরে তাদের অবদান পুরুষের থেকে কোন অংশেই কম নয়।’
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়ন (র্যাব) বাংলাদেশের আভ্যন্তরিণ সন্ত্রাস দমনের উদ্দেশ্যে গঠিত এক চৌকস বাহিনী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত এই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ গঠিত হয় এবং একই বছরের ১৪ এপ্রিল (পহেলা বৈশাখ) তাদের কার্যক্রম শুরু করে। বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে র্যাব গঠিত হয়।