মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার একটা সরাসরি প্রস্তাব। আসুন আগামী ১৬ ডিসেম্বর আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে আসা সকল রোহিংগাদের নিয়ে মিয়ানমার অভিমুখে লংমার্চ শুরু করি। বিশ্ববাসীকে এ বার্তাটি জানিয়ে দেই। আপনি একটা সময় বেঁধে দিতে পারেন। এর আগে যদি মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফেরত নেয় তো ভালো তা না হলে লংমার্চের ঘোষণা দিয়ে দিতে পারেন আপনি। এর আগে যদি তারা আপনার আহবানে সাড়া দেন তো ভালো, না হলে আপনার ডাকে আমরা মানে ১৮ কোটি মানুষ হবো সেই লংমার্চের অংশীদার।
চাইলে বিশ্ব নেতা, বন্ধু প্রতীম রাষ্ট্র এবং বিশ্বজুড়ে যারা হত্যা, নির্যাতন, সহিংসতা রোধে কাজ করছেন তারাও আমাদের এই লংমার্চে যোগ দিতে পারেন, অংশীদার হতে পারেন। বিশ্বকে জানান দেই, বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা কখনো অন্যায়ের কাছে, সন্ত্রাসের কাছে, নির্যাতনের সাথে, ষড়যন্ত্রের কাছে মাথা নত করেনি, করবেও না। বরং সোচ্চার ছিলো তখনো, এখনো আছে এবং সোচ্চার থাকবে ভবিষ্যতেও। আর এ জানান দেয়ার জন্য ১৬ ডিসেম্বরের চেয়ে শুভ তারিখ আমার মাথায় আসছে না। ১৬ ডিসেম্বরে বিজয় এসেছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে। তিনি হয়েছিলেন উপমহাদেশের অবিসংবাদিত নেতা। আর আমি চাই ওই একই তারিখে এই লং মার্চের ডাক দিয়ে আপনি হয়ে উঠুন বিশ্বমানবতার জীবন্ত কিংবদন্তী।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে আরো একবার উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার এটা একটা সুযোগ হিসেবে নিতে পারেন। শাপে বর যাকে বলে। যারা বাংলাদেশের ভাবমুর্তি কিংবা আপনাকে বিব্রত করতে চেয়েছেন বা চাচ্ছেন তাদের প্রতি মোক্ষম জবাব হবে এই লং মার্চ। যারা রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশের অভিশাপ বানাতে চেয়েছিল, তাদেরকেই অাশীর্বাদ হিসেবে পরিগণিত করতে পারেন আপনি। অবশ্যই আপনার নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই।
নিজ ভুমের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের জন্য লড়াই করে সকলেই। কিন্তু অপরের জন্য জীবন বাজী রাখে কয়জন? কয়জন অন্যের মঙ্গল চিন্তায় নিজ দেশের নিরাপত্তাকে শীথিল করে? বিশ্বের আর কোন দেশে এমন মহৎপ্রান নেতা আছে কি না আমার সন্দেহ আছে। আপনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। ঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘আমার বড় শক্তি হলো আমি বাংলার মানুষকে ভালোবাসি, বাংলার মানুষ আমাকে ভালোবাসে। একইভাবে আমার বড় দুর্বলতা হলো আমি বাংলার মানুষকে ভালোবাসি এবং বাংলার মানুষ আমাকে ভালোবাসে।’ আমি দেখেছি, আপিনও তার ব্যতিক্রম নন। হেন সংবাদ নেই যা আপনার চোখে পড়ে না এবং সেই সংবাদের ভিত্তিতে আমজনতার মনের মতো সিদ্ধান্ত নিতে কখনো দ্বিধান্বিত দেখিনি আপনাকে।
আমি মুজিব সরকারকে দেখিনি, দেখেছি হাসিনা সরকারকে। দেখেছি তার আত্মসম্মানবোধ, তার দৃঢ়চেতা মানসিকতাকে। সাহস আর উদ্যোমের কথা নাইবা বললাম। আমি দেখেছি, মানুষের হাসিমাখা মুখ দেখে কিভাবে আপ্লুত হন আপনি, দেখেছি আর্ত-নিপীড়িত মানুষের জন্য কিভাবে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন! তাই বলছি নেতৃত্ব দিতে হবে আপনাকে। কারণ যে দেশের নাগরিকরা নিজ দেশেই নির্যাতিত সে দেশের নাগরিকদের জন্য লড়াই করার মানসিকতা আছে কেবল আপনারই। নিজেকে উজাড় করে দিয়ে কিভাবে অন্যকে ভালোবাসতে হয় তা বিশ্ববাসী শিখুক আপনার কাছে। আর্ত-মানবতার সেবাই যে আপনার ব্রত এবং সেটা যে, দেশ-জাতি ভেদাভেদ ভুলে তা জানুক বিশ্ববাসী। বিশ্বের মানুষ জানুক, আমরা কতটা উদার, কতটা সহানুভূতিপ্রবণ এবং একতাবদ্ধ জাতি।
যে দায় আমাদের না, ছলে-বলে-কৌশলে সে দায় আমাদের ঘাড়েই ছাপানোর চেষ্টা করছেন মিয়ানমারসহ বিশ্ব মোড়লদের অনেকেই। আমাদেরকে বিব্রত করতে উঠে-পড়ে লেগেছেন তারা। এটা একটা বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র বলে আমি মনে করি। তাই আসুন, আপনার দৃঢ় নেতৃত্বে এই ষড়যন্ত্রকেও তছনছ করে দেই। আমার বিশ্বাস ১৮ কোটি মানুষ থাকবে আপনার সাথে।
আমি একজন সাধারণ সাংবাদিক। আমি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করি ওই গ্রুপের দুটি হাসপাতাল আছে। আছে একটি পত্রিকা ও একটি সাপ্তাহিক। আমি সেই সাপ্তাহিকের ব্যবস্থাপনা সম্পাদকের কাজ করছি। সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে কক্সবাজার উখিয়ার কুতুপালং যেতে হয়েছিল মেডিকেল টিম নিয়ে। এর আগে অব্দি রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমার ধারণা নেগেটিভ ছিলো। আমার ধারণায় ততটা পরিবর্তন হয়নি। তবে প্রকাশের ধরণে পরিবর্তন হয়েছে।
কারণ উখিয়ার কুতুপালং, বাঁশখালী কয়েকদিন ঘুরে আমি শুনেছি নবজাতকের কান্না, মায়ের আর্তচিৎকার, এক মুঠো ত্রানের জন্য কিশোর-কিশোরীর লড়াই। দেখেছি ঠিক কতটা অসহায় হলে খাবারের জন্য দুই শিশু কোলে নিয়ে কুকুরের মতো ছোটেন মা? বৃদ্ধ বাবা-মাকে কিভাবে আগলে রাখেন তার যুবক সন্তান, কাঁটা-ছেড়া পা নিয়ে স্বাস্থ্য সেবার জন্য ক্যাম্পে ক্যাম্পে ঘুরে বেড়ানো মানুষকেও কম দেখিনি। এটা তো কোন জীবন হতে পারে না। আর এই জীবন শুধু রোহিঙ্গা কেন কারো জন্যই আমরা ভাবতে চাই না।
তাই সেই ডিসেম্বর অব্দি মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে আমার কিছু পর্যবক্ষেণ এখানে তুলে ধরছি:
১) আগত সকল রোহিঙ্গারদের জন্য স্থান নির্ধারণ করা খুবই জরুরি।
২) নিবন্ধন বা তালিকাভুক্তি করা।
৩) সব ধরণের ত্রাণ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিতরণ করা। টাকা দিচ্ছেন কেউ কেউ। ভয়ংকর দৃশ্য দেখেছি টাকা বিতরণের। এটা আরো স্মুথ কিভাবে করা যায় তা ভাবা দরকার।
৪) ত্রানের ধরণ কি হতে পারে তার একটা চাহিদা নেয়া। আমার মতে অন্ন, বস্ত্র, বসার জন্য মাদুর, ত্রিপল দেয়া যেতে পারে।
৫) ভ্রাম্যমান টয়লেট প্রয়োজন। গোসলের ব্যবস্থা থাকাও জরুরি।
৬) স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে চুলকানি, ডায়রিয়া, কাঁটাছেরা, ব্যথা, বমি, দুর্বলতা, জ্বর-কাঁশির ওষুধ রাখা জরুরি।
৭) বিভিন্ন মিডিয়া কাজ করছেন যে যার মতো করে। খারাপ না, তবে কোনভাবেই যেন দেশের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ণ না হয় সেদিকটা খেয়াল রাখা।
৮) এনজিওদের ভিন্ন ভিন্ন এজেন্ডা। যেসব এনজিও কাজ করছেন তাদের কাজ মনিটরিং করা জরুরি। (কেউ কেউ উস্কে দিচ্ছেন)
স্থানীয় সরকারী কর্মকর্তারা ভীষন আন্তরিক দেখা গেছে। সরকারী সব কর্মকর্তারাই দিনরাত কাজ করছেন, ক্লান্তিহীন। কোন শুক্রবার নেই, ছুটি নেই। হাসিমুখে সবার সাথে কথা বলেছন। একজনকেও মনে হয়নি যে তিনি সহযোগিতা করছেন না। তারা ভীষন মানবিকও। সুতরাং তাদের সাথে সমন্বয় করে এইসব কাজ করতে পারলে সব সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হবে বলে আমার বিশ্বাস।
মিয়ানমারের নাগরিক, ফেরত নেবে মিয়ানমার। এটাই সত্য, এটাই বাস্তবতা, এর সাথে কোন আপোষ নাই, হতে পারে না। আমরা মানবিক তাই, সাময়িক সহায়তা করেছি। এর বেশী বাংলাদেশের পক্ষে করা সম্ভব নয়। বিশ্ব নেতারা যখন নিশ্চুপ তখন ওভার পপুলেটেড কান্ট্রি প্রধান হয়েও একমাত্র আপনিই রোহিংগাদের আশ্রয় দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সাময়িক এ সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ হলো, রোহিংগাদের নিজভূমে ফেরত পাঠানো।
তাই আসুন, এবারের ১৬ ডিসেম্বরের প্রভাত ফেরীতে যাত্রা শুরু করি আমরা। এই দিনটিকে বিশ্বের বুকে আবারো সোনার অক্ষরে লিখে দিই।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)