চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আদ্যোপান্ত

কে হচ্ছেন দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি? বর্তমান রাষ্ট্রপতিই কি টানা দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হচ্ছেন? নাকি নতুন কোনো মুখ আসছে এই পদে? এসব প্রশ্নগুলো নিয়ে গত কয়েকদিন সব মহলে চলছে বহুমাত্রিক আলোচনা, গুঞ্জন। যে আলোচনা, গুঞ্জনের পরিসমাপ্তি ঘটবে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি। কারণ ওইদিনই জানা যাবে নতুন রাষ্ট্রপতির নাম।

চ্যানেল আই অনলাইনের পাঠকদের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ঘটনা প্রবাহ ও এই পদের সাংবিধানিক নানা তথ্য তুলে ধরা হলো:

বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল। এক্ষেত্রে সংবিধানের ১২৩ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে উক্ত পদ শূন্য হলে মেয়াদ-সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী ৯০ হতে ৬০ দিনের মধ্যে শূন্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’

সে অনুযায়ী গত ২৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষণগণনা। এই দিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার যে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সে আলোকে গত ২৫ জানুয়ারি তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। সেখানে ১৮ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিন ঠিক করা হয়েছে।

তফসিল অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ৭ ফেব্রুয়ারি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ১০ ফেব্রুয়ারি বিকেল চারটা। রাষ্ট্রপতি পদে একক প্রার্থী হলে ভোটের প্রয়োজন হবে না। তবে একাধিক প্রার্থী থাকলে ১৮ ফেব্রুয়ারি বেলা দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত জাতীয় সংসদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় সংসদের সদস্যরা নির্বাচনে ভোট দেবেন। দুজন সংসদ সদস্যের মৃত্যুর কারণে এ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ৩৪৮ জন।

বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রপতি:
সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, (১) বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকিবেন, যিনি আইন অনুযায়ী সংসদ-সদস্যগণ কর্তৃক নির্বাচিত হইবেন। (২) রাষ্ট্রপ্রধানরূপে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্য সকল ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করিবেন এবং এই সংবিধান ও অন্য কোন আইনের দ্বারা তাহাকে প্রদত্ত ও তাহার উপর অর্পিত সকল ক্ষমতা প্রয়োগ ও কর্তব্য পালন করিবেন। (৩) এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্টপতি তাহার অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করিবেন। তবে শর্ত থাকে যে, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোন পরামর্শদান করিয়াছেন কি না এবং করিয়া থাকিলে কি পরামর্শ দান করিয়াছেন, কোন আদালত সেই সম্পর্কে কোন প্রশ্নের তদন্ত করিতে পারিবেন না। (৪) কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হইবার যোগ্য হইবেন না, যদি তিনি- (ক) পঁয়ত্রিশ বৎসরের কম বয়স্ক হন; অথবা (খ) সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইবার যোগ্য না হন; অথবা (গ) কখনও এই সংবিধানের অধীন অভিশংসন দ্বারা রাষ্ট্রপতির পদ হইতে অপসারিত হইয়া থাকেন। (৫) প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় ও পররাষ্ট্রীয় নীতি সংক্রান্ত বিষয়াদি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত রাখিবেন এবং রাষ্ট্রপতি অনুরোধ করিলে যে−কোন বিষয় মন্ত্রিসভায় বিবেচনার জন্য পেশ করিবেন।

সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে বলা আছে, কোন আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যে−কোন দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যে−কোন দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে। আর ৫০ অনুচ্ছেদে বলা আছে (১) এই সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ হইতে পাঁচ বৎসরের মেয়াদে তাঁহার পদে অধিষ্ঠিত থাকিবেন। তবে শর্ত থাকে যে, রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তাহার উত্তরাধিকারী-কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন। (২) একাদিক্রমে হউক বা না হউক-দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতির পদে কোন ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকিবেন না। (৩) স্পীকারের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে রাষ্ট্রপতি স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন। (৪) রাষ্ট্রপতি তাহার কার্যভারকালে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইবার যোগ্য হইবেন না, এবং কোন সংসদ-সদস্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হইলে রাষ্ট্রপতিরূপে তাহার কার্যভার গ্রহণের দিনে সংসদে তাহার আসন শূন্য হইবে।

সংবিধানের ৫১ অনুচ্ছেদে বলা আছে, (১) এই সংবিধানের ৫২ অনুচ্ছেদের হানি না ঘটাইয়া বিধান করা হইতেছে যে, রাষ্ট্রপতি তাহার দায়িত্ব পালন করিতে গিয়া কিংবা অনুরূপ বিবেচনায় কোন কার্য করিয়া থাকিলে বা না করিয়া থাকিলে সেইজন্য তাহাকে কোন আদালতে জবাবদিহি করিতে হইবে না, তবে এই দফা সরকারের বিরুদ্ধে কার্যধারা গ্রহণে কোন ব্যক্তির অধিকার ক্ষুণ্ন করিবে না। (২) রাষ্ট্রপতির কার্যভারকালে তাঁহার বিরুদ্ধে কোন আদালতে কোন প্রকার ফৌজদারী কার্যধারা দায়ের করা বা চালু রাখা যাইবে না এবং তাঁহার গ্রেফতার বা কারাবাসের জন্য কোন আদালত হইতে পরোয়ানা জারী করা যাইবে না।

৫২ অনুচ্ছেদে বলা আছে, (১) এই সংবিধান লংঘন বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসিত করা যাইতে পারিবে; ইহার জন্য সংসদের মোট সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের স্বাক্ষরে অনুরূপ অভিযোগের বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়া একটি প্রস্তাবের নোটিশ স্পীকারের নিকট প্রদান করিতে হইবে; স্পীকারের নিকট অনুরূপ নোটিশ প্রদানের দিন হইতে চৌদ্দ দিনের পূর্বে বা ত্রিশ দিনের পর এই প্রস্তাব আলোচিত হইতে পারিবে না এবং সংসদ অধিবেশনরত না থাকিলে স্পীকার অবিলম্বে সংসদ আহবান করিবেন।

(২) এই অনুচ্ছেদের অধীন কোন অভিযোগ তদন্তের জন্য সংসদ কর্তৃক নিযুক্ত বা আখ্যায়িত কোন আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা কর্তৃপক্ষের নিকট সংসদ রাষ্ট্রপতির আচরণ গোচর করিতে পারিবেন। (৩) অভিযোগ বিবেচনাকালে রাষ্ট্রপতির উপস্থিত থাকিবার এবং প্রতিনিধি প্রেরণের অধিকার থাকিবে। (৪) অভিযোগ বিবেচনার পর মোট সদস্য-সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে অভিযোগ যথার্থ বলিয়া ঘোষণা করিয়া সংসদ কোন প্রস্তাব গ্রহণ করিলে প্রস্তাব গৃহীত হইবার তারিখে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হইবে। (৫) এই সংবিধানের ৫৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্পীকার কর্তৃক রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকালে এই অনুচ্ছেদের বিধানাবলী এই পরিবর্তন সাপেক্ষে প্রযোজ্য হইবে যে, এই অনুচ্ছেদের (১) দফায় স্পীকারের উল্লেখ ডেপুটি স্পীকারের উল্লেখ বলিয়া গণ্য হইবে এবং (৪) দফায় রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হইবার উল্লেখ স্পীকারের পদ শূন্য হইবার উল্লেখ বলিয়া গণ্য হইবে; এবং (৪) দফায় বর্ণিত কোন প্রস্তাব গৃহীত হইলে স্পীকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনে বিরত হইবেন।

সংবিধানের ৫৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে, (১) শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতিকে তাহার পদ হইতে অপসারিত করা যাইতে পারিবে; ইহার জন্য সংসদের মোট সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের স্বাক্ষরে কথিত অসামর্থ্যের বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়া একটি প্রস্তাবের নোটিশ স্পীকারের নিকট প্রদান করিতে হইবে। (২) সংসদ অধিবেশনরত না থাকিলে নোটিশ প্রাপ্তিমাত্র স্পীকার সংসদের অধিবেশন আহবান করিবেন এবং একটি চিকিৎসা-পর্ষদ (অতঃপর এই অনুচ্ছেদে “পর্ষদ” বলিয়া অভিহিত) গঠনের প্রস্তাব আহ্বান করিবেন এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তাব উত্থাপিত ও গৃহীত হইবার পর স্পীকার তৎক্ষণাৎ উক্ত নোটিশের একটি প্রতিলিপি রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণের ব্যবস্থা করিবেন এবং তাহার সহিত এই মর্মে স্বাক্ষরযুক্ত অনুরোধ জ্ঞাপন করিবেন যে, অনুরূপ অনুরোধ জ্ঞাপনের তারিখ হইতে দশ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি যেন পর্ষদের নিকট পরীক্ষিত হইবার জন্য উপস্থিত হন। (৩) অপসারণের জন্য প্রস্তাবের নোটিশ স্পীকারের নিকট প্রদানের পর হইতে চৌদ্দ দিনের পূর্বে বা ত্রিশ দিনের পর প্রস্তাবটি ভোটে দেওয়া যাইবে না, এবং অনুরূপ মেয়াদের মধ্যে প্রস্তাবটি উত্থাপনের জন্য পুনরায় সংসদ আহ্বানের প্রয়োজন হইলে স্পীকার সংসদ আহ্বান করিবেন। (৪) প্রস্তাবটি বিবেচিত হইবার কালে রাষ্ট্রপতির উপস্থিত থাকিবার এবং প্রতিনিধি প্রেরণের অধিকার থাকিবে। (৫) প্রস্তাবটি সংসদে উত্থাপনের পূর্বে রাষ্ট্রপতি পর্ষদের দ্বারা পরীক্ষিত হইবার জন্য উপস্থিত না হইয়া থাকিলে প্রস্তাবটি ভোটে দেওয়া যাইতে পারিবে এবং সংসদের মোট সদস্য-সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে তাহা গৃহীত হইলে প্রস্তাবটি গৃহীত হইবার তারিখে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হইবে। (৬) অপসারণের জন্য প্রস্তাবটি সংসদে উস্থাপিত হইবার পূর্বে রাষ্ট্রপতি পর্ষদের নিকট পরীক্ষিত হইবার জন্য উপস্থিত হইয়া থাকিলে সংসদের নিকট পর্ষদের মতামত পেশ করিবার সুযোগ না দেওয়া পর্যন্ত প্রস্তাবটি ভোটে দেওয়া যাইবে না। (৭) সংসদ কর্তৃক প্রস্তাবটি ও পর্ষদের রিপোর্ট (যাহা এই অনুচ্ছেদের (২) দফা অনুসারে পরীক্ষার সাত দিনের মধ্যে দাখিল করা হইবে এবং অনুরূপভাবে দাখিল না করা হইলে তাহা বিবেচনার প্রয়োজন হইবে না) বিবেচিত হইবার পর সংসদের মোট সদস্য-সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে প্রস্তাবটি গৃহীত হইলে তাহা গৃহীত হইবার তারিখে রাষ্ট্রপতি পদ শূন্য হইবে।

আমাদের সংবিধানের ৫৪ অনুচ্ছেদে বলা আছে, রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে ক্ষেত্রমত রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কিংবা রাষ্ট্রপতি পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্পীকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করিবেন।

সংবিধানের ১২৩ এর (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী  রাষ্ট্রপতি-পদের মেয়াদ অবসানের কারণে উক্ত পদ শূন্য হইলে মেয়াদ-সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী নব্বই হইতে ষাট দিনের মধ্যে শূন্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে। তবে শর্ত থাকে যে, যে সংসদের দ্বারা তিনি নির্বাচিত হইয়াছেন সেই সংসদের মেয়াদকালে রাষ্ট্রপতির কার্যকাল শেষ হইলে সংসদের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত অনুরূপ শূন্য পদ পূর্ণ করিবার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে না, এবং অনুরূপ সাধারণ নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম বৈঠকের দিন হইতে ত্রিশ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির শূন্য পদ পূর্ণ করিবার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে। ১২৩ এর (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মৃত্যু, পদত্যাগ বা অপসারণের ফলে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হইলে পদটি শূন্য হইবার পর নব্বই দিনের মধ্যে, তাহা পূর্ণ করিবার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আইন ও বিধিমালা:
বর্তমানে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পরিচালনার জন্য “রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৯১” এবং “রাষ্ট্রপতি নির্বাচন বিধিমালা, ১৯৯১” রয়েছে। কিন্তু ১৯৯১ সালের আগ পর্যন্ত সাধারণ ভোটারদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হত। তখন “রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অধ্যাদেশ, ১৯৭৮” এবং “রাষ্ট্রপতি নির্বাচন বিধিমালা ১৯৭৮” অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন তার সচিবকে রিটার্নিং অফিসাররা নিজ নিজ আওতাভুক্ত উপজেলা/থানা পর্যায়ের কর্মকর্তাকে সহায়ক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করতেন।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ইতিহাস:
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি পদে ১০ বার নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ ভোটারদের ভোটে ৩ বার  রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে তৎকালীন গণপরিষদের স্পীকার মোহাম্মদ মোহাম্মদউল্লাহ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হন।

এরপর সাধারণ ভোটারদের ভোটে প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৮ সালের ৩ জুলাই। ওই নির্বাচন ১১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ২ জনের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে বাদ পড়ে। তবে তাদের একজন আপিল করলে তার আপিল গৃহীত হওয়ায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ জনে। সেই নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান।

এই পদ্ধতিতে দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর। ওই নির্বাচন ৮৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ১১ জনের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে বাদ পড়ে। বৈধভাবে মনোনয়ন প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৭২ জনে। পরে এই ৭২ জনের মধ্যে ৩৩ জন প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা হয় ৩৯ জন। এই নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার।

একইভাবে তৃতীয়বার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৬ সালের ১৫ অক্টোবর। এই নির্বাচনে ১৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ৪ জন প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হয় ১২ জন। এই নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।

১৯৯১ সালে দেশে সংসদীয় পদ্ধতিতে সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে সংসদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে আসছে। ১৯৯১ এর পর রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন; আব্দুর রহমান বিশ্বাস, বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ, প্রফেসর ডাঃ এ.কিউ.এম.বদরুদ্দোজা চৌধুরী, প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ, মোঃ জিল্লুর রহমান ও মোঃ আব্দুল হামিদ।

কে কোন সময় পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এরপর বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত তত্কালীন উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েই তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী এবং অন্য ১০ জনকে মন্ত্রী হিসেবে শপথ পড়ান।

আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৭৩ সালের ১০ এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন পরবর্তীতে তিনি পদত্যাগের করলে ১৯৭৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর মোহাম্মদ মোহাম্মদউল্লাহ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন।  ১৯৭৪ সালের ২৪ জানুয়ারি তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন এবং ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত  দায়িত্ব পালন করেন।

সংসদীয় সরকার বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার গঠন করা হলে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি আবারো রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর খোন্দকার মোশতাক রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন।

এরপর ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। এবং তিনি ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল পর্যন্ত  রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তারপর ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল লে: জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্রগ্রাম সার্কিট হাউসে সেনাবাহিনীর কিছু বিপদগামী সদস্যের হাতে প্রাণ হারান তিনি।

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিচারপতি আব্দুস সাত্তার বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত এবং পরে পূর্ণ রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৮১ সালের ২০ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন। এরপর প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এইচ এম এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৭ মার্চ বিচারপতি আবুল ফজল মোহাম্মদ আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ দেন। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এরপর লে: জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণ করেন।

১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এরশাদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করে পদত্যাগ করেন। এরপর তত্কালীন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ উপ-রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন। পরে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ১০ জন উপদেষ্টাকে শপথ পাঠ করান। ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করে প্রধান বিচারপতির পদে ফিরে যান।

১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর আব্দুর রহমান বিশ্বাস রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯৬ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের ৯ অক্টবর শাহাবুদ্দিন আহমেদ আবার রাষ্ট্রপতি হন এবং ১৪ নভেম্বর ২০০১ পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন। ২০০২ সালের ২১ জুন তিনি রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

২০০২ সালের ২১ জুন ব্যারিষ্টার জমিরউদ্দিন সরকার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণ করেন। একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রপতির পদে আসীন হন। ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের মেয়াদ ছিল ২০০৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিন্তু নবম সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ায় তার মেয়াদও দীর্ঘায়িত হয়। ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ রাষ্ট্রপতি ছিলেন।  এরপর জিল্লুর রহমান ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।২০১৩ সালের ২০ মার্চ সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন রাষ্ট্রপতি মো: জিল্লুর রহমান মারা যান।

বাংলাদেশের সাংবিধানিক প্রধান রাষ্ট্রপতিকে তার কাজে সর্বতোভাবে সাহায্যের জন্য বঙ্গভবনে একটি কার্যালয় রয়েছে। এ কার্যালয় দুটি বিভাগে বিভক্ত, সরকারি বিভাগ ও ব্যক্তিগত বিভাগ। সরকারি বিভাগের দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতিকে সাংবিধানিক, আইনগত ও নির্বাহী দায়িত্ব পালনে দাপ্তরিক সহায়তা দান।

আর ব্যক্তিগত বিভাগের দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রপতির বাসভবন সংক্রান্ত কাজকর্ম পরিচালনা ও তত্ত্বাবধান, আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম ব্যবস্থাপনা, অন্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, ভিনদেশী সম্মানিত ব্যক্তি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের অভ্যর্থনা ও ভোজ ব্যবস্থাপনা, রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিধান ও প্রতিরক্ষা কার্য সম্পাদন।