শিশু রাকিব-রাজন হত্যার বিচার দ্রুততম সময়ে হওয়ার কারণ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস সোশ্যাল মিডিয়া ভূমিকা বড় করে দেখলেও ভিন্ন মত পোষণ করছেন মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির।

রোবায়েত ফেরদৌস চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘এটা খুবই সত্য কথা যে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকার কারণেই শিশু রাকিব-রাজন হত্যার দ্রুত সময়ে বিচার সম্ভব হয়েছে। আমরা বিচারহীনতার এমন এক সমাজে বসবাস করছি যখানে, প্রতিনিয়ত হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। কিন্তু কতোটা মমলার বিচার হচ্ছে? ঠিক মতো চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে? আর কতো জনকেই গ্রেফতার বা সাজা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে?
‘সেখানে এতো দ্রুত সময়ের মধ্যে শিশু রাকিব-রাজন হত্যার বিচারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকাকে আমাদের স্বীকার করে নিতেই হবে।’
এক্ষেত্রে ভিন্ন মত পোষণ করে খুশি কবির বলেন, আমি বলবো না সোশ্যাল মিডিয়ার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। এটা নিয়ে প্রিন্ট-ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া থেকে শুরু করে সব জায়গায় আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ রাস্তায় নেমেছে।
পহেলা বৈশাখে নারী লাঞ্ছনার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, পহেলা বৈশাহে নারী লাঞ্ছনার পর সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিলো। সিসি টিভির ফুটেজ থাকলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এখানে তো সোশ্যাল মিডিয়া কিছু করতে পারেনি।
অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার কারণেই খুনি কামরুলকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার ত্বরান্বিত হয়েছে বলে মন্তব্য করে রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, তবে আমাদের মনে রাখতে হবে শুধু মাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনায় হলেই বিচার কাজ দ্রুত হবে এমন সংস্কৃতি যেনো আমাদের মধ্যে গড়ে না ওঠে।
তবে প্রশাসন চাইলে সব সম্ভব উল্লেখ করে খুশি কবির বলেন, একই সময়ে দেশের দুই স্থানে দুই শিশু নির্যতন করে হত্যায় বর্হি:বিশ্বে দেশের ইমেজ খারাপ হয়ে পড়েছিলো। তাই সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে কামরুলকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার সম্পূর্ণ করলো। আসলে প্রশাসন চাইলে সব পারে। এই ঘটনায় তারই প্রমাণ করে।
শিশু রাকিব-রাজন হত্যার রায়ের পর জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অাহ্বান জানিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার। তার ফেসবুক লেখেন: সাবাস জনতা, সাবাস বাংলাদেশ। এভাবেই আইনের শাসনের পথে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। কোনো অপরাধের সাথেই আপোষ নয়, বরং আসুন গর্জে উঠি একসাথে। আমরা ঐক্যবদ্ধ হলে কেউ আমাদের হারাতে পারবে না।’
গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয় ১৩ বছরের শিশু সামিউল আলম রাজনকে। সেই নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী তা আলোচনার সৃষ্টি করে। এর এক মাসের ব্যবধানে, ৩ আগস্ট খুলনা মহানগরীর টুটুপাড়া সেন্ট্রাল রোডে শরীফ মটরসে কম্প্রেসার মেশিন দিয়ে রাকিবরে শরীরে হওয়া ঢুকিয়ে এবং নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়।
রোববার চাঞ্চল্যকর ওই দুটি হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। দুই মামলায় মোট ৬ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। এরমধ্যে রাজন হত্যা মামলায় চারজনের এবং খুলনায় শিশু রাকিব হত্যা মামলায় দুইজনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত।