চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

এবারের বাজেট ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ’মাইলফলক’: মোস্তফা জব্বার

ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের উদ্দেশ্যপূরণে বর্তমান সরকারের এবারের বাজেটকে ‘মাইলফলক’ বলে মনে করেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সদ্য সাবেক সভাপতি তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার।

প্রযুক্তি পণ্য আমদানিকারক দেশ থেকে প্রযুক্তি পণ্য রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রূপান্তর নিশ্চিত করতে এমন বাজেটই প্রত্যাশা করেছিলেন বলে জানান তিনি।

এবারের বাজেটে দেশের প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনে বিশেষ ছাড় দেয়াকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের নতুন পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন এই তথ্যপ্রযুক্তিবিদ।

চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন,‘প্রধানমন্ত্রী দেশেই প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনে জোর দিয়েছেন। এবারের বাজেটে তাই এব্যাপারে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে। দেশীয় হার্ডওয়্যার-সফটওয়্যারের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাবনা ব্যাপক আশা জাগাচ্ছে। আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে দেশের মানুষ দেশে উৎপাদিত প্রযুক্তিপণ্য কিনতে পারবে।’

মোস্তফা জব্বার

এই সুবিধা দেশের প্রযুক্তিখাতকে সম্প্রসারিত করবে জানিয়ে তিনি বলেন,‘এর ফলে দেশে ডিজিটাল পণ্যের উৎপাদন বাড়বে, সেই সঙ্গে বাড়বে বিনিয়োগ। কর্মসংস্থানের বিশাল ক্ষেত্র তৈরি হবে। বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আমদানিমুখি বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতাটাও ভারসাম্যপূর্ণ হবে।’

বাজেটগুলোতে ক্রমান্বয়ে বরাদ্দ বৃদ্ধিকে সময়োপযোগী বলেই মনে করেন তিনি। বলেন,‘ গত বছর তথ্যপ্রযুক্তিখাতে বাজেটে বরাদ্দ ছিলো ১৮’শ কোটি টাকা। এবারের বাজেটে তা দ্বিগুণ হয়ে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ পেয়েছে। গত বছর ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ ছিলো ৮ হাজার কোটি টাকা এবারের বাজেটে তা বৃদ্ধি করে ১১ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ স্লোগান বাস্তবায়নে বাজেটে বরাদ্দকে অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন মোস্তফা জব্বার।

তিনি বলেন,‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার ওপর ভিত্তি করে তথ্য-প্রযুক্তির মহাসড়কে অনেকটা পথ হেঁটেছে বাংলাদেশ। এবার সেই পথ আরও বিস্তৃত করার পালা। দেশজুড়ে হাইটেক পার্ক গড়ে তুলে তথ্য-প্রযুক্তি উদ্যোক্তা সৃষ্টির পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলে তথ্যপ্রযুক্তির সেবা পৌঁছে দিতে এবারও বরাদ্দ বেড়েছে এই খাতে।’

তবে এবারের বাজেটে কয়েকটি প্রত্যাশা নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা,প্রস্তাব না থাকায় কিছুটা আক্ষেপ রয়েছে বলে জানান তিনি। বলেন,‘ইন্টারনেট ডিজিটাল বাংলাদেশের মহাসড়ক। তবু ইন্টারনেটের দাম মাত্রাতিরিক্ত। আমরা ইন্টারনেটের দাম কমানো উচিৎ এটাই সরকারকে যেনো বোঝাতেই পারছি না।’

সফটওয়্যারসহ দেশীয় প্রযুক্তিপণ্য বিদেশে রপ্তানিতে বরাবরই নগদ সহায়তা চায় দেশীয় উদ্যোক্তারা। কিন্তু অন্যান্য রপ্তানি পণ্যের মতো দেশের প্রযুক্তি পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তার আশা এবারের বাজেটে ও পূরণ হয়নি।

তবে হতাশ নন জানিয়ে তিনি বলেন,‘দেশে উৎপাদিত প্রযুক্তি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে অন্যান্য রপ্তানি পণ্যেও মত নগদ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী,অর্থমন্ত্রীও এই ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। তারপরও এবার নগদ সহায়তার বিষয়ে স্পষ্ট করে কোনো নির্দেশনা-প্রস্তাবনা না পাইনি। তবে এটা অচিরেই পাবো বলে আশা করি।’

আজ বেলা দেড়টায় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় গত বাজেটের মতো এবারও সরকার তথ্য-প্রযুক্তিখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে বলে জানান তিনি।

অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেন,‘ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা আমাদের সরকারের অন্যতম উন্নয়ন কৌশল। এ লক্ষ্যে ১৯৯৬ সন হতে আমরা তথ্য প্রযুক্তি খাতের অধিকাংশ পণ্যের আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও কর রেয়াতি সুবিধা দিয়ে আসছি। ফলে এ প্রযুক্তি দেশে ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। প্রচুর সম্ভাবনাময় আইসিটি খাত রূপকল্প ২০২১ এবং ২০৪১ বাস্তবায়নে বিশেষ অবদান রাখবে। এ খাতে প্রয়োজনীয় শুল্ক-কর প্রণোদনা এবং নীতি সহায়তা প্রদানের জন্য মোবাইল, ল্যাপটপ, আইপ্যাড এর স্থানীয় সংযোজন ও উৎপাদনকে উৎসাহিত করারলক্ষ্যে এখাতের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য উপকরণ আমদানিতে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শুল্ক রেয়াতি সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করছি।’

২০১৬-১৭ অর্থবছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য বরাদ্দ ছিলো ৮ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা যা ছিলো মোট বাজেটের দুই দশমিক ৪৪ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতের জন্য বরাদ্দ ছিলো ছয় হাজার ১’শ ৭ কোটি টাকা। সে হিসেবে সদ্য বিদায় নেয়া অর্থবছরে বাড়তি দুই হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ পেয়েছিলো এ খাত।

আগের অর্থবছরের তুলনায় বিদায়ী অর্থবছরে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের জন্য ৬’শ ২২ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এই খাতে বিদায়ী বছরে আইসিটি ডিভিশনের জন্য এক হাজার আটশ ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিলো এক হাজার দুইশ ১০ কোটি টাকা। বিদায়ী বাজেটে টেলিকম খাতেও বরাদ্দ বেড়েছিল। ওই অর্থবছরের জন্য টেলিকম খাতের জন্য দুই হাজার পাঁচশ ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে যা ছিলো দুই হাজার একশ ১৮ কোটি টাকা।