বাঙালীর গর্বের, গৌরবের মাস মার্চ। এই মাসেই ঘোষিত হয় বাঙালীর স্বাধীনতা, বাংলাদেশ নামের একটি নতুন দেশের স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাঙালী ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তির মরণপণ লড়াইয়ে।
গোপনে পাকিস্তানে পালিয়ে যান ইয়াহিয়া খান, আর যাবার আগে নির্দেশ দিয়ে যান নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর সশস্ত্র হামলার। মধ্যরাতেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুমন্ত বাঙালীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানী হানাদারদাররা।
রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ গোটা ঢাকা নগরীর ওপর এদিন ঝাঁপিয়ে পড়ে নরপিশাচ পাকিস্তানী হানাদাররা। চালায় মধ্যযুগীয় পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ।
২৫ মার্চ রাতে গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। তার আগেই ইপআিরএর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, বাংলার অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জাতিকে পাকিস্তানী সেনাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বলেন, মাঝে মাঝে আলাপ-আলোচনা হয় দেশ কবে স্বাধীন হলো, কে স্বাধীনতা ঘোষণা দিলো এটার তো কোনো মানে নাই।
চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে ট্যাংক ও মর্টার নিয়ে পাকিস্তানী বেলুচ রেজিমেন্ট আক্রমন চালায় ২ হাজার বাঙ্গালী অফিসার ও সৈনিকদের ওপর। হত্যা করে হাজার হাজার বাঙ্গালীকে।
রাত ৯টার পর পরই পাহাড়তলীতে পাকিস্তানী বাহিনীর কমিউনিকেশন ঘাটির পতন ঘটান ক্যাপ্টেন রফিক। সে রাতের কথা এখনো মনে পড়লে আতকে উঠে তাজউদ্দিন আহমদের ঘনিষ্ট সহযোগী ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম।
তিনি বলেন, ২৫ মার্চ রাতের বেলায় চলে আসলো পাকিস্তানি মিলিটারি। পাকিস্তানীরা সেদিন ঝাঁপিড়ে পড়লো ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর। কোনো কিছু টের পাওয়ার আগেই সমস্ত ঘড়-বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। হাজার হাজার লোক যতো দূর চোখ যায় শুধু দেখেছি অসহায় মানুষের মিছিল।
দেশের অন্যান্য জায়গায় নির্বিচারে গণহত্যা চালালেও যুদ্ধের জন্য মানসিকভাবে তৈরী থাকায় চট্টগ্রামে পাকিস্তানী সৈন্যরা ঘুমন্ত অবস্থায় পায়নি বাঙ্গালী সৈন্যদের।
উল্টো ইপিআর সদরে বাঙালী সৈন্যদের আক্রমণের মুখে পড়ে পাকিস্তানী সৈন্যরা। একাত্তুরের কাল রাতের সেই নৃশংস, বর্বর হত্যাযজ্ঞ বাঙালী ও বিশ্ববাসীর কাছে চরমভাবে ঘৃণিত।