আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর অভিযোগ, তাদের অফিস সিলগালাসহ এক সহকর্মীকে গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়ে রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট জোরপূর্বক স্বীকারোক্তিমূলক সাক্ষর গ্রহণ করেছেন।
এছাড়াও আসক বলছে: দুই লাখ টাকা জরিমানা ও কার্যালয় ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ নিয়ম বহির্ভূত। আদালতের সার্বিক কার্যকলাপ এবং এমন আদেশ উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
একইসঙ্গে এমন পরিস্থিতিতে প্রচলিত আইন অনুযায়ী সকল ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তারা।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর লালমাটিয়ায় আসক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত আসককে দুই লাখ টাকা জরিমানা এবং দুই মাসের মধ্যে কার্যালয় ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজকের এই সংবাদ সম্মেলন।
আসকের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন: বৃহস্পতিবার আসক কার্যালয়ের ভবন মালিকের রাজউকের নকশা বহির্ভূত গ্যারেজের অংশে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার আসক কার্যালয়ে এসে আবাসিক এলাকায় অফিস পরিচালনার কারণ জানতে চান। আসকের পক্ষ থেকে তখন সকল তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করা হয় এবং জানানো হয়, ভাড়াটিয়া হিসেবে সকল শর্ত মেনেই আসক অফিস পরিচালনা করছে।
তিনি বলেন: সারা দেশে আসকের একটিই কার্যালয় এবং এখানে শুধু দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। আসক কোন ধরনের আর্থিক কিংবা ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে না। বাংলাদেশ এনজিও ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের অনুমোদন নিয়েই আসক দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করে আসছে।
‘সবকিছু জানানোর পরেও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমারত নির্মাণ আইন ১৯৫২ এর ৩(ক) ধারা মতে, আসককে আগামী ২ মাসের মধ্যে কার্যালয় ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনার পাশাপাশি দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন। অথচ আইনের ওই ধারাটি ভবন মালিক, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আসক শুধুমাত্র ভাড়াটিয়া হিসেবে ভবনটি ব্যবহার করছে। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালত বিষয়গুলো আমলে না নিয়ে জরিমানা বহাল রাখেন এবং জরিমানা আদায় করেন।’
শীপা হাফিজ অভিযোগ করে বলেন: ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন ২০০৯ অনুযায়ী, অভিযুক্ত কর্তৃক অভিযোগ অস্বীকার করে বিচারিক আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত এসব যুক্তি না মেনে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তিমূলক স্বাক্ষর আদায় করেন। এমনকি আসকের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করলে ম্যাজিস্ট্রেট অফিস সিলগালাসহ কর্মীদের গ্রেপ্তারের হুমকি দেন।
বিশেষ কী উদ্দেশ্যে ইমারত নির্মাণ আইনে আসককে জরিমানা করা হয়েছে? এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন: আদালত পরিচালনার শেষ পর্যায়ে আদেশের কপি আসককে প্রদানের অনুরোধ করলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অপারগতা প্রকাশ করেন। এমনকি লিখিত আবেদন করলেও তিনি আদেশের কপি প্রদান করেননি।
আদালতের উদ্দেশ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন: আমরা বিষয়টি সেভাবে জানি না। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের পদক্ষেপ আইন অনুযায়ী মনে হয়নি। তিনি আমাদের গ্রেপ্তারের হুমকি দিচ্ছিলেন, এমনকি আমার এক সহকর্মীকে পুলিশ প্রহরায় একটি কক্ষে আবদ্ধ করে রাখেন। এতে মনে হয়েছে কেউ না কেউ বিশেষভাবে আসকের উপর ক্ষুব্ধ, জানি না তারা কারা। এছাড়া, ভ্রাম্যমাণ আদালত আসলে এলাকার বিভিন্ন ভবনে যান। কিন্তু তিনি শুধু আমাদের ভবনেই অভিযান চালিয়েছেন।
তিনি বলেন: আমরা প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে বুঝানোর চেষ্টা করেছি, ইমারত নির্মাণ আইনের সঙ্গে ভাড়াটের সংশ্লিষ্টতা নেই। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট যে মানসিকতা নিয়ে এসেছেন, আমাদেরকেই ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছেন। বাড়িওয়ালা সামনে বসা থাকলেও তাকে প্রশ্ন না করে আমাকে করেছেন। এতে মনে হয়েছে তাদের কোনো উদ্দেশ্য ছিল।
আসকের নির্বাহী কমিটির মহাসচিব তাহমিনা রহমান বলেন: ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে যে অর্ডার দেওয়া হয়েছে এটিকে আইনানুগ বলে মনে করছি না। এটা আমরা একেবারেই মেনে নিচ্ছি না। আইন অনুযায়ী যে পদক্ষেপের রাস্তা খোলা রয়েছে, সাংবিধানিকভাবে যে পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেই অনুযায়ী আমরা সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। এ বিষয়ে আমরা শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেবো। তবে যাই করবো সচ্ছতার সঙ্গে করব।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর লালমাটিয়ায় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) কার্যালয়ে অভিযান চালায় রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত। আবাসিক এলাকায় কার্যালয় পরিচালনা করায় এই মানবাধিকার সংগঠনটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে আগামী দুই মাসের মধ্যে কার্যালয় ছেড়ে দিতে বলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার, অথরাইজড অফিসার নুরুজ্জামান জাহিদ ও পরিচালক শাহ আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়।