ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের ধারিয়া বেলসাড়া গ্রামের ভ্যান চালক আফতাবুর রহমান। অভাবের সংসারে নানা টানাপোড়েন তার। তবে অভাবের সংসারে তার রঙ্গীন স্বপ্নের ডানা মিলেছে। এই ভ্যান চালকের মেয়ে আলপনা আক্তার এ বছর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছেন।
এক খণ্ড জমি আর একটি মাটির ঘর ও একটি ভ্যান তার এক মাত্র সম্বল। মেয়ে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ যেন তার ভাঙ্গাচোরা ঘরে খুশির চাঁদ হয়ে উঠেছে।
অদ্যম ইচ্ছা শক্তি আর বাবা-মায়ের উৎসাহে এই সাফল্য বলে দাবি ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া আলপনা আক্তারের।
আলপনা আক্তার বলেন, পরিবারে আর্থিক সমস্যা থাকলেও তারা পিতা কখনও সেটা বুঝতে দেয়নি।ভবিষ্যতে একজন মানবিক ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে তিনি বলেন, তার এ্রলাকার যারা অসহায়, একজন ভালো ডাক্তার হয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই।
তার মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পেছনে যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি তার পিতা-মাতা এবং শিক্ষকরা। পরিবার এবং শিক্ষকদের আন্তরিকতা এবং উৎসাহের ফলেই আজকের অবস্থানে এসেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
কারও সহযোগিতা পেলে আগামী চলার পথটা অনেকটাই সহজ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে আলপনা।
আলপনার পিতা আফতাবুর রহমান জানান, আর্থিক সমস্যা থাকায় সন্তানের লেখাপড়ার খরচ মেটানোর জন্য বিক্রি করেছেন নিজের থাকা অল্প জমিটুকুও।
তিনি বলেন, ছেলে মেয়ের প্রচেষ্টা এবং তার পরিশ্রমের ফলে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাই বড় ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদালয়ে এবং মেয়ে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। ছেলে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার পথটা আরো সহজতর করার জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।
আলপনার এ সাফল্যে এলাকাবাসী তাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, আলপানার পিতার একটি ভ্যান ছাড়া আর কোনও সম্বল না থাকায় খুব কষ্ট করে ছেলে মেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছেন। সরকারের সহযোগিতা পেলে পরিবারটির অসহায়ত্ব কিছুটা হলেও লাঘব হবে বলে মনে করেন তারা। এবং আলপনা যেন ডাক্তর হয়ে গরীব মানুষের পাশে দাঁড়ায় সেই আশা ব্যক্ত করেছেন এলাকাবাসী।
ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ জিন্নাত আরা বেগম বলেন, ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে এবছর ১০ জন সরকারি মেডিকেলে চান্স হয়ে পেয়েছেন। যারা চান্স পেয়েছে প্রত্যেকেই মেধাবী তবে আলপানার বিষয়টি আলাদা কারণ তার এ পথটুকু আসতে করতে হয়েছে অনেক সংগ্রাম। একটি অত্যন্ত দরিদ্র্য পরিবারে জন্ম নেওয়া আলপনার এ অবস্থা থেকে মেডিকেলে চান্স পাওয়াকে অনেক বড় করে দেখছেন তিনি।
ছোটবেলা থেকে পড়াশুনায় অত্যন্ত মনযোগী আলপনা। অদম্য ও কঠোর পরিশ্রমী আলপনা পিএসসি থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন।