ঢাকার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে স্থাপিত ভাস্কর্যটি অপসারণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে দেশের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতিসত্তার বিলীন হিসেবে মন্তব্য করছে।
কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ঢাকার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত ভাস্কর্যটি অপসারণের জোর দাবি জানিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার গণভবনে কওমী মাদ্রাসার আলেমদের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ভাস্কর্য সরানোর এ বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং এটা নিয়ে বিস্তর আলোচনা-পর্যালোচনা দরকার। আমরা নীতিগতভাবে ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে নই। ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা সঠিক নয়।
![](https://i0.wp.com/www.channelionline.com/wp-content/uploads/2017/04/golam-kuddus-300x200-1.jpg?resize=233%2C178&quality=100&ssl=1)
‘হাইকোর্টের সামনের ভাস্কর্যের অপসারণের বিষয়ে যা বলা হচ্ছে আমি তার সঙ্গে কোনভাবেই একমত নই।’
![](https://i0.wp.com/www.channelionline.com/wp-content/uploads/2024/02/Channeliadds-Reneta-16-04-2024.gif?fit=300%2C250&ssl=1)
তবে, ভাস্কর্যের নির্মাণশৈলী বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে তিনি বলেন, হাইকোর্টে যে ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছে তার প্রকৃত স্বরূপটি ঠিক রাখা হয়নি। এটি মূলত গ্রিসের ন্যায়বিচারের দেবীর আদলে তৈরি করা হয়েছে। যেখানে প্রকৃত মূর্তিটির গায়ে কোন শাড়ি নেই।
ভাস্কর্যের গুরুত্বের বিষয়ে গোলাম কুদ্দুছ বলেন, যে কেউ চাইলেই ভাস্কর্য নির্মাণ করতে পারে না। একটা ভাস্কর্য নির্মাণের সময় এর পূর্ব-পশ্চাৎ, সময়কাল এবং এ নিয়ে পরবর্তী প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে তার সামগ্রিক বিষয়টা বিবেচনা করা উচিৎ।
একজন শিল্পীর শিল্পকর্ম কখনোই নির্দিষ্ট কোন জাতিধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় উল্লেখ করে উদীচী সভাপতি সফিউদ্দিন আহমদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘শিল্পীর শিল্পকর্ম ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য। এটি সার্বজনীন । এটা অবৈধ হলে এতদিন পর কেন? আরও অাগেই হতে পারত।’
![](https://i0.wp.com/www.channelionline.com/wp-content/uploads/2017/04/safiuddin-ahmod-2.jpg?resize=300%2C175&quality=100&ssl=1)
বর্তমান সরকার দেশ-ধর্ম বিরোধী জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করে এমন একটি পদক্ষেপ নিচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সফিউদ্দিন আহমদ বলেন, এর মাধ্যমে আমার সাম্প্রদায়িক শক্তিকে শুধু প্রশ্রয়ই দিচ্ছিনা বরং আমরা এই অপশক্তির কাছে আমাদের জাতিসত্তা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিলীন করে দিচ্ছি।
ভাস্কর্য অপসারণের বিষয়টি অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল শক্তির মধ্যে একধরণের বিভ্রান্তি তৈরি করছে উল্লেখ করে জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি ড. মুহাম্মাদ সামাদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশগুলো যেমন মিশর, ইরান, সিরিয়া, তুরস্কে ভাস্কর্য রয়েছে। সেটি যদি ইসলামবিরোধী না হয়, তাহলে আমাদের দেশে কেন?’
‘এই ভাস্কর্য আরও অাগে থেকে থাকা দরকার ছিল। নতুন করে স্থাপন করায় এ নিয়ে এত দ্বন্দ্ব সংঘাত। খোদ সরকারি দলের মধ্যেই এ নিয়ে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।’’
স্থাপনের পর থেকেই হেফাজতে ইসলাম সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ভাস্কর্যটি অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছিল। এই ভাস্কর্য স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভূতিতে আঘাত করা হচ্ছে দাবি করে সংগঠনটির অামির আহমদ শফি বলেছেন, ‘এটি বাংলাদেশের মানুষের আদর্শিক চেতনার বিপরীত।’
![](https://i0.wp.com/www.channelionline.com/wp-content/uploads/2017/04/samad.jpg?resize=300%2C175&quality=100&ssl=1)
গ্রিক দেবীর গায়ে শাড়ি পরিয়ে এটিকে বাংলাদেশের ঐতিহ্য প্রমাণের অপচেষ্টা চলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মঙ্গলবার রাতে গণভবনে ভাস্কর্যের বিরোধিতাকারী ওলামাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটি সরাতে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলবেন তিনি।