ভারতের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের প্রচারে অংশ নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যেই ভারতে কালো তালিকাভূক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। এবার জনপ্রিয় এই অভিনেতার মতো একই অভিযোগে অভিযুক্ত বাংলাদেশের গাজী আব্দুন নূর। যিনি তুমুল জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘রানী রাসমণি’র বাবু রাজচন্দ্র দাস হিসেবে সবার কাছে জনপ্রিয়!
খুলনা বাগেরহাটের ছোট্ট শহর মোল্লারহাটের মুক্তিযোদ্ধা মান্নান গাজীর পড়ুয়া ছেলে গাজী আব্দুন নূর। বৃত্তি নিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়েছিলেন। সেখানে থাকার সুবাদে টুকটাক অভিনয়ও শুরু করেন। কিন্তু ‘রানী রাসমণি’র মাধ্যমে ওপার বাংলায় রীতিমত হইচই ফেলে দিয়েছেন তরুণ এই অভিনেতা। কিন্তু ভাগ্যদোষে এবার হুমকির মুখে তার জলজলে ক্যারিয়ার।
পশ্চিম বাংলায় তুমুল জনপ্রিয় বাংলাদেশের নূর। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সেখানে বেশ জনপ্রিয় তিনি। কিন্তু এসব কিছুর পরেও তিনি একজন ভিনদেশি। আর ভিনদেশি হওয়ার কারণেই ভারতে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে পড়লেন বিপাকে। শুধু তাই নয়, তাকে ভারত ছাড়তে হতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে।
ভিনদেশের হয়ে ভারতের নির্বাচনী প্রচারণায় ফেরদৌসের অংশ নেয়ার অভিযোগে ইতোমধ্যে ভারতের ভিসা বাতিল ও কালো তালিকাভুক্ত হওয়ায় নূরের উপরও এমন শাস্তি নেমে আসতে পারে, এমন আশঙ্কায় প্রকট। যদিও এসব নিয়ে খুব একটা ভাবিত নন নূর।
বুধবার রাতে চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে বর্তমান প্রেক্ষিত নিয়ে কথা হয় গাজী আব্দুন নূরের। তিনি জানালেন, ‘দেখুন, আমি এখানে পড়াশোনা করেই নিজের ক্যারিয়ার নিজেই বিল্ডআপ করছি। এখানের মানুষ আমাকে চেনে, জানে। আর আমাকে যারা চেনেন, তারা জানেন যে আমি কখনো রাজনীতির সঙ্গে মিশি নাই। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। যার প্রচারণায় অংশ নিয়েছি বলে অভিযোগ, তার সাথে আমার খুব ভালো পরিচয় নেই। আমি শুধু মদন মিত্র দাদার কথায় সেখানে গিয়েছিলাম। কারণ তার সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক।’
তাহলে একই গাড়িতে মদন মিত্রের সঙ্গে তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়ের নির্বাচনী প্রচারণার যে ছবিগুলো সোশাল মিডিয়ায় ছড়াচ্ছে। সেগুলো?-এমন প্রশ্নে নূর জানালেন, সব মিডিয়াকে আগেই বলেছি, মদন মিত্র দাদার সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক। তিনি আমার মাকে সাহায্য করেছিলেন। আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ। উনার সাথে ব্যক্তিগত কাজেই সেদিন সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম, তৃণমূলের নেতা হিসেবে তার কাছে আমি যাইনি। আর ওইদিন আমার সাথে কোনো গাড়ি ছিলো না, তাই বাধ্য হয়ে দাদার সাথে গাড়িতে উঠেছিলাম। কিন্তু কোনোভাবেই নির্বাচনী প্রচারণার উদ্দেশ্যে আমি যায়নি।
নূর আরো বলেন, যদি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতেই সেদিন যেতাম তাহলে আমি কেনো বক্তব্য রাখলাম না? ফেরদৌস ভাই নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে যেভাবে বক্তব্য দিয়েছেন, আমি যদি প্রচারণায় অংশ নিতাম ই তবেতো বক্তব্য দিতাম। ভোট চাইতাম তৃণমূলের পক্ষে। লোকের উদ্দেশ্যে আমি কথা বলতে পারি না, ব্যাপারটাতো এরকম নয়।
ভোট না চাইলেও তৃণমূলের প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা গেছে নূরকে। বিজেপি তাই ফেরদৌসের মতো পরিণতি চাইছে আপনার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নূর বলেন, আমি আমার অবস্থান জানিয়ে সত্যটাই বাংলাদেশ হাইকমিশনকে বলেছি। বলেছি, রাজনীতির সাথে আমি মিশি না। কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে আমার সম্পৃক্ততা নেই। কিন্তু ভারতের সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আমার সম্মান রয়েছে। এখন তারা আমার বিষয়ে যা সিদ্ধান্ত নিবেন আমি সেটাই মেনে নেবো।
ভারত সরকার তার বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নিবে, সেটাতেই পূর্ণ আস্থা রাখার কথাও জানালেন নূর। বললেন, আমার ভাগ্য নির্ধারণে ভারত সরকার যে সিদ্ধান্ত নিবে আমি সেটাই মাথা পেতে নিবো, সেটা আমার ক্যারিয়ারের জন্য যতোই ভয়ঙ্কর হোক। তাদের আইনের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে।
এদিকে ফেরদৌস ও নূরের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছে বিজেপি। শুধু তাদের শাস্তি নয়, এবার তারা দাবি জানাল, এই দুই বাংলাদেশি অভিনেতাকে নিয়ে যারা প্রচারে বেরিয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে।