
টানা বৃষ্টি এবং বন্যার কারণে বেড়ে গেছে নিত্যপণ্যের দাম। বিশেষ করে কাঁচা বাজারে প্রভাব পড়ছে বেশি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে আমদানি কম, পরিবহন খরচ বেশি। এই অবস্থা থাকলে আগামীতে আরো দাম বাড়তে পারে।
সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ, মিথ্যা অজুহাতে দাম বাড়িয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন।
সরেজমিন কাওরান বাজার ও মিরপুর শ্যাওড়াপাড়া কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে পেঁয়াজ ৬৫ টাকা, পটল ৬০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা এবং বেগুন ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

অথচ ঢাকার বাইরে স্থানীয় বাজারে এসব কাঁচা পণ্যের দাম অর্ধেকের চেয়ে কম।
রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানার চতরা হাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে প্রতি কেজি পটল ২৭ টাকা, করলা ৩০ টাকা, বেগুন ২৫ টাকা, কাঁচা মরিচ ৫৫ টাকা আলু ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের দাম অবশ্য সেখানে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা।
ঢাকার বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়া ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। শ্যাওড়াপাড়ার লন্ড্রি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, এমন দাম থাকলে আর বাজারে যাওয়া হবে না: ছেলে সন্তান নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। প্রতিদিন আয় যা করি তা দিয়ে সংসারের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছি।
পেঁয়াজের দামের বিষয়ে কাওরান বাজারের আড়তদার আব্দুর রশিদ বলেন, আসলে আমরা বেশি করে নিয়ে আসতে পারছি না। কারণ কোনোভাবে একটা পেঁয়াজ যদি বৃষ্টির পানিতে পঁচে যায় তবে বাকি পেঁয়াজ রাখা খুব অসুবিধা হয়ে পড়ে। এ কারণে বাজারে এর কিছুটা প্রভাব পড়ছে।
এর সঙ্গে ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিকেও কারণ হিসেবে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
কাঁচা বাজারে দামের বিষয়ে খারাপ আবহাওয়াকেই দুষছেন ব্যবসায়ীরা। কাওরান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী রুহুল আমিন জানান, বৃষ্টির কারণে কাঁচাপণ্যের সরবরাহ কমে গেছে। ফলে বেশি দাম দিয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পণ্য কিনে বিক্রি করতে হচ্ছে।
‘বৃষ্টি এভাবে চলতে থাকলে সবজির দাম আরও বাড়তে পারে,’ বলে অাশংকার কথা জানিয়েছেন তিনি।
পাইকারি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, বৃষ্টির কারণে অনেক সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকরা আগে মোকামে ৫ থেকে ৭ মণ করে সবজি ওঠাতেন। এখন তারা দেড় থেকে ২ মণের বেশি সবজি মোকামে তুলতে পারছেন না। ফলে তাদের কাছ থেকে আমাদের বেশি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে।
‘তাছাড়া বৃষ্টির কারণে আমাদেরকে পরিবহন খরচও বেশি গুণতে হচ্ছে,’ বলে দাবি তার।
তবে, সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ: ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে করেই সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ায়। কাওরান বাজারে অফিস শেষে বাজার করতে আসা হালিম কাজী বলেন, আমি কৃষক পরিবারের ছেলে। বাড়িতে কথা বলে জেনেছি, যে দামে কৃষক কাঁচামাল বিক্রি করছে তাতে তাদের বেশি লাভ হচ্ছে না। তা হলে ঢাকায় এতো দাম কেনো!
‘ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দুই তিন গুণ দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে,’ বলে অভিযোগ তার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত এক মাসে গুঁড়ি গুঁড়ি ও অনবরত বৃষ্টির কারণে সারাদেশে ১ লাখ ১৭ হাজার ৮শ ১৪ হেক্টর ফসলী জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টিতে অন্যান্য জেলার তুলনায় যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল, ফেনি, কক্সবাজার, সিলেট, পটুয়াখালী ও পিরোজপুর জেলার কৃষকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।