রাজধানীসহ সারাদেশে ট্রাফিক সচেতনতা বাড়াতে মাসব্যাপী বিশেষ কর্মসূচি হতে নিয়েছে পুলিশ। সেই কর্মসূচি চলার মধ্যে এক অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া মন্তব্য করেছেন, ‘আইন বাস্তবায়ন করতে গেলে অনেকে পেছন থেকে টেনে ধরতে চায়।’
এখানেই থেমে না থেকে ওই অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেছেন, ‘ট্রাফিক অাইন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমাদের অনেক প্রভাব, চাপ সহ্য করতে হয়। কখনো বা আমাদের আপোষ করতে হয়। কিন্তু আমরা সেটা করতে চাই না।’
এমন রূঢ় সত্যকে অকপটে স্বীকার করে নেয়ার জন্য ডিএমপি কমিশনারকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। এটা ঠিক, তার কথাগুলো কারো কারো কাছে শুনতে খারাপ লাগবে। প্রশাসনের কেউ কেউ এজন্য বিব্রতও হতে পারেন। কিন্তু নির্মম হলেও এটাই বাস্তব, এটাই সত্য। যাকে অস্বীকার করা বা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
ওই অনুষ্ঠানে তিনি আরেকটি বিষয় আমাদের সামনে এনেছেন। তা হলো; ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ের মধ্যে দিনে কমপক্ষে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়। শুধু তাই নয়, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদেরকে হাত উঁচু করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
কয়েক বছর আগে রাজধানীতে অটো সিগন্যাল শুরুর কথা আমরা জানি। সেই সময় যানবাহনের ধরন অনুযায়ী লেনও ভাগ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর চালু রাখা হয়নি। রাজধানীর যানজট নিরসনে নানা সময়ে এমন আরো অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে ডিএমপি। কিন্তু সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে কোনোটাই শেষ পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি।
এক্ষেত্রে কিছু হাস্যকর বিষয়ও ভূমিকা পালন করে। যেমন; যানজট নিয়ন্ত্রণের কাজ ট্রাফিক বিভাগের হলেও সেই কাজের বড় একটা অনুষঙ্গ সিগন্যাল বাতি। কিন্তু সেসবের নিয়ন্ত্রণ পুলিশের হাতে নেই। সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করে সিটি করপোরেশন। আবার রাজধানীতে বাস চলাচলের অনুমতির দায়িত্ব ট্রাফিক বিভাগের হাতে নেই। সেটাও সিটি করপোরেশনের হতে। আর গণপরিবহন বা ব্যক্তিগত গাড়ির অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ।
এমন পরিস্থিতিতে জাহাঙ্গীরগেট থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কের অটো ট্রাফিক সিসটেম চালুর পদক্ষেপ নিয়েছে ডিএমপি। এতে সাফল্য পেলে আস্তে আস্তে অন্য সড়কগুলোতেও এই ব্যবস্থা চালু করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
সর্বত্র আইন না মানার শহরে নতুন এই পদক্ষেপ কতটা কার্যকর হবে সেটা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু তার আগে আইন মানানোর কাজটাও ডিএমপিকেই করতে হবে। যতোই কেউ তাতে পেছন থেকে টেনে ধরার চেষ্টা করুক। কারণ এই দায়িত্ব পালনের একমাত্র কর্তৃপক্ষ তারা। এখানে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। প্রভাবশালীরা তাদের প্রভাব দেখানোর চেষ্টা করবে; এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পুলিশকে তা দায়িত্ব থেকে পিছিয়ে আসা চলবে না। ওই ব্যক্তিদের জনগণের সামনে টেনে আনতে হবে।
আমরা মনে করি, অপ্রিয় এবং কঠিন হলেও সবাইকে আইন মানাতে বাধ্য করতে হবে। তা না হলে কোনোভাবেই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে না।