ইতালীয় নাগরিক নিহত হওয়ার পর ঢাকায় পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকদের চলাফেরা সাময়িকভাবে সীমিত হয়ে গেছে। ইসলামিক স্টেট (আইএস) বা অন্য জঙ্গি গোষ্ঠিগুলো পশ্চিমা নাগরিক বা স্থাপনায় আরো আঘাত হানতে পারে শংকায় কূটনৈতিক মিশন এবং সংশ্লিষ্ট অন্য সংস্থাগুলোর নির্দেশনা পেয়ে তাদের কর্মকর্তারা চলাফেরা খুবই সীমিত করেছেন।
সোমবার সন্ধ্যায় ওই হত্যাকাণ্ডের পর মার্কিন নাগরিকদের রাতে নিজ নিজ অবস্থানে থাকতে বলা হয়। আজ জোরদার নিরাপত্তার মধ্যে দূতাবাসে কার্যক্রম চললেও আমেরিকান স্কুল একদিনের জন্য বন্ধ থাকে। আমেরিকান ক্লাবেও কার্যক্রম সীমিত আছে।
অন্য দূতাবাস এবং বিদেশী সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারাও বাইরে যাওয়া সীমিত করে অতিরিক্ত পুলিশি নিরাপত্তার পাশাপাশি নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।
মার্কিন একটি সাইটে আইএস টাভেলা সিজার হত্যার দায় স্বীকার করার পর পশ্চিমাদের আশংকা আরো বেড়েছে।
তবে বাংলাদেশ পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ডিপ্লোম্যাটিক জোন গুলশান-বনানী-বারিধারার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করলেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে আইএস সক্রিয় হতে পারেনি বলে দাবি করছে।
বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে যাই বলুক, অস্ট্রেলিয়ার পর ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র এবং এরপর কানাডাও তাদের নাগরিকদের সতর্ক করেছে। দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করে সতর্কবার্তা প্রকাশ করা হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এ ধরণের ঘোষণার পর থেকে পশ্চিমা দেশগুলোর নাগরিকরা বাংলাদেশে তাদের চলাফেরা ও কর্মব্যস্ততা কমিয়ে দিয়েছেন।
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস সর্বশেষ নিরাপত্তা বার্তায় বলেছে, তাদের কাছে নতুন এমন বিশ্বাসযোগ্য তথ্য আছে যে জঙ্গিরা বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ান স্বার্থের উপর আঘাত হানার পরিকল্পনা করছে। ‘এমন কোনো হামলার ঘট্না ঘটলে তা মার্কিনসহ অন্য বিদেশীদের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে।’
বিদেশীদের উপর জঙ্গি হামলার হুমকি আগের চেয়ে বেড়েছে উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্র তার নাগরিকদের বিভিন্নরকম নির্দেশনা দিয়ে সেগুলো মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেই মার্কিন স্থাপনা, মার্কিন স্বার্থ এবং মার্কিন নাগরিকদের উপর হামলার পরিকল্পনার খবর পাচ্ছে বলে নিরাপত্তা বার্তায় বলা হয়েছে।
প্রথমে অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ সতর্কতা জারি করে তাদের ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর পিছিয়ে দেয়। বাংলাদেশে ঈদের দিন অস্ট্রেলিয়ান সরকারের ওই সর্তকবার্তায় ৯টি বিষয় উল্লেখ করে অস্ট্রেলীয় নাগরিকদের বাংলাদেশ সফর না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
তার দু’দিনের মাথায় ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশানে জগিং করার সময় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন ইতালির নাগরিক সিজার টাভেলা।
এরপর একে একে ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং সবশেষে কানাডা সতর্কবার্তা জারি করে তাদের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশকে ‘অনিরাপদ’ ঘোষণা করে। ব্রিটেনের সতর্কবার্তায় আশংকা প্রকাশ করা হয় যে পশ্চিমা বিশ্বের নাগরিকরা বাংলাদেশে যে কোনো সময় জঙ্গি হামলার শিকার হতে পারেন।
যুক্তরাজ্যের পর ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস তার নাগরিকদের বাংলাদেশে অবস্থানকালে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়।
অন্যদিকে কানাডা সরকারের ভ্রমণ সতর্কতা বিষয়ক ওয়েবসাইটে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের হুমকি এবং ভঙ্গুর রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণ দেখিয়ে কানাডার নাগরিকদের উচ্চমাত্রায় সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়।
সবগুলো দেশই পশ্চিমা লক্ষ্যবস্তুর ওপর জঙ্গি হামলা হতে পারে বলে আশংকা করছে।
গণমাধ্যমের জন্যেএক বার্তায় ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস সিজার নিহত হওয়ার ঘটনায় শোক প্রকাশ করে মার্কিন নাগরিকদের জন্য নির্দেশনার কথা জানিয়েছে। বাংলাদেশকে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে শক্তিশালী অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গেও হুমকির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছে বলে জানিয়েছে মার্কিন দূতাবাস।