সরকারের তিন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সারাদেশে চলমান পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছে মালিক-শ্রমিকরা। বুধবার দুপুরে মতিঝিলের সড়ক ভবনে বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।
সংবাদ সম্মেলনে শাজাহান খান বলেন, ‘তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের মৃত্যুর খবরে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে আমরা বিবৃতি দিয়েছিলাম। আমরা আজও বলতে চাই, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু কখনোই আমাদের কাম্য নয়।
এই মামলায় চুয়াডাঙ্গার ডিলাক্স পরিবহনের চালককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে। এই ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের পরিবহন শ্রমিকেরা যানবাহন চালানো থেকে বিরত থাকেন।
বিষয়টি সমাধানের উদ্দেশ্যে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসি। বৈঠক চলাকালে সংবাদ আসে, ঢাকার আদালত সড়ক দুর্ঘটনায় আরেক ট্রাকচালককে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। সংবাদটি দ্রুত দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন জেলার মালিক ও শ্রমিক নেতারা আমাদেরকে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর জানাতে থাকেন। তখন বিষয়টি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।’
এর ফলে ওই সময় গাড়ি চালানোর গৃহীত সিদ্ধান্ত ভণ্ডুল হয়ে যায় এবং চালকরা গাড়ি চালানো থেকে নিজেরাই বিরত থাকেন বলে জানান নৌমন্ত্রী। যাত্রীদের হওয়া দুর্ভোগের জন্য মন্ত্রী আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
শাজাহান খান অভিযোগ করেন, পরিবহনের এই অচলাবস্থাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহল উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার এবং সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে।
দুর্ঘটনায় ফাঁসি ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ার আশঙ্কায় শ্রমিকরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছেন শাজাহান খান। পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গার ডিলাক্স ও গ্রিনলাইনের দুর্ঘটনার কারণে একটিতে ১২ কোটি ৮৮ লাখ ও অন্যটিতে ২০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। সব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই সরকারকে এগোতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বাস্তব সমস্যা উপলব্ধি করে সমস্যা নিরসন করতে সরকারকে সুপরামর্শ দেয়ার জন্য মালিক-শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নৌ পরিবহনমন্ত্রী।
এর আগে পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে বাস মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং নৌমন্ত্রী শাজাহান খান।
মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ, সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় বাসচালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। আরেকটি মামলায় সোমবার ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২০০৩ সালে সাভারে ঘটা একটি ঘটনায় ট্রাক চালক মীর হোসেন মীরুকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।
এ দুই রায়ের প্রতিবাদে মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেন শ্রমিকরা। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হন সাধারণ মানুষ। ধর্মঘটের কারণে কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে রাজধানীসহ দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা। দূরপাল্লার পাশাপাশি স্বল্প দূরত্বেও বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছে মানুষ।
ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে বুধবার গাবতলীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষও হয়েছে। সংঘর্ষে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় একজন বাসচালক।