ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের জেলে যাওয়া উচিৎ বলে দাবি করেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের দ্বিতীয় দিনে এ কথা বললেন তিনি।
বিতর্কের শুরুতেই ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন হিলারির বিরুদ্ধে যত অভিযোগ আর গুজব আছে সব প্রকাশ্যে এনে হিলারিকে একেবারে ধুয়ে ফেলবেন তিনি। নিজের কথা অনেকটাই রেখেছেন বিতর্কিত এই রিপাবলিকান প্রার্থী। আর তার আক্রমণের প্রধান হাতিয়ারই ছিল হিলারি ক্লিনটনের জীবনসঙ্গী সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের অতীত।
ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কাঁদা ছোঁড়া
ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেন, স্বামীর সঙ্গে বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত নারীদের ওপর হিলারি নিজের স্বার্থরক্ষায় আক্রমণ চালিয়েছেন এবং তাদের মিথ্যেবাদী প্রমাণ করার জন্য সবকিছু করেছেন। একই সঙ্গে ই-মেইল কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ তুলে ট্রাম্প বলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে হিলারিকে জেলে পাঠাবেন।
মিসৌরির সেন্ট লুইসে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে সিএনএন এর অ্যানডারসন কুপার এবং এবিসি নিউজের মার্থা রাডাজের সঞ্চালনায় ওই প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে উঠে এসেছে রাজনৈতিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক এবং স্বাস্থ্য বীমা ইস্যু। তবে ঘুরেফিরে ব্যক্তিগত আক্রমণই ছিল মূখ্য।
শুধু তাই নয়, সেইন্ট লুইসে ওই বিতর্কের কিছুক্ষণ আগেই ডোনাল্ড ট্রাম্প সেসব নারীদের সদস্য করে একটি প্যানেল গঠন করে আলোচনায় অংশ নেন যারা বিভিন্ন সময়ে বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন।
বিতর্কের শুরুতে ২০০৫ সালে নারীদের নিয়ে অশ্লীল মন্তব্যের ভিডিও ফাঁসের ঘটনায় ক্ষমা চান ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এটাও বলেন, বিল ক্লিনটনের কুকর্মের কাছে তিনি কিছুই না। ট্রাম্পের ভাষায়, ‘বিল ক্লিনটন আমার চেয়ে অনেক বেশি খারাপ। আমার তো শুধু খারাপ কথা, তার ছিল খারাপ কাজ।’
ট্রাম্পের সাক্ষাৎকার নিয়ে হিলারির ব্যক্তিগত হামলা
হিলারি ক্লিনটন প্রথমেই বলেছিলেন, তিনি এসব কাঁদা ছোঁড়াছুড়িতে নামবেন না। কিন্তু নিজের কথায় ঠিক থাকতে না পেরে একসময় তিনিও ট্রাম্পের বিতর্কিত ভিডিও ও অডিও সাক্ষাৎকার নিয়ে আলোচনা শুরু করেন।
হিলারি বলেন, এসব সাক্ষাৎকারই বলে দেয় ট্রাম্প আসলে কেমন মানুষ। হিলারি বলেন, নারীদের নিয়ে এসব অপমানজনক মন্তব্যই প্রমাণ করে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নন।
তবে ই-মেইল কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গে আবারও দুঃখ প্রকাশ করেন হিলারি।
অন্যান্য ইস্যু
নব্বই মিনিটের বিতর্কে রাজনৈতিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক এবং স্বাস্থ্য বীমা ইস্যুর পাশাপাশি রাশিয়া-সিরিয়া এবং ইরাক যুদ্ধের কথাও উঠে আসে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন বিভিন্ন বিষয়ে হিলারির সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আবারও সিরিয়া-ইরাক এবং লিবিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অভিযান নিয়ে হিলারিকেই ট্রাম্প দায়ী করেন। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে আইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদিই হবে হিলারির মূল লক্ষ্য বলে ট্রাম্পের জবাবে জানান হিলারি। আর জঙ্গিবাদ দমনে দু’জনই নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন। যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম শরণার্থী নিয়েও বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন দু’জনে।
অবশেষে একটু প্রশংসা
বিতর্ক অনুষ্ঠানের শুরুতে দর্শকদের করতালিতে মঞ্চে আসলেও যথারীতি একে অপরের সঙ্গে হাত মেলাননি দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। পুরো বিতর্ক জুড়ে ছিল কথা দিয়ে একে অপরকে ছিন্নভিন্ন করার তীব্র চেষ্টা। পর্যবেক্ষকদের অনেকে এমনটাও বলেছেন, এবারের বিতর্কটি ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সবচেয়ে ভয়াবহ ও তিক্ত বিতর্ক।
তবে এর মাঝেও অবশেষে একে অপরের সম্পর্কে খানিকটা ভালো কথা বললেন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। ডোনাল্ড ট্রাম্প হিলারি ক্লিনটন সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি হার মেনে নেন না, তিনি হাল ছাড়েন না, তিনি একজন যোদ্ধা। তিনি যেসব বিষয় নিয়ে লড়াই করছেন তার বেশিরভাগেরই বিরোধী আমি। কিন্তু তিনি সত্যিই শক্ত হাতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তিনি হাল ছাড়ছেন না। এটাকে আমি অনেক ভালো একটা গুণ বলে মনে করি।’
অন্যদিকে হিলারি ক্লিনটন ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসা করেন একটু ঘুরিয়ে, ‘আমি তার (ট্রাম্পের) সন্তানদের সম্মান করি। তারা খুবই যোগ্য এবং বাবার প্রতি নিবেদিত একেকজন মানুষ। আর সেখান থেকেই বোঝা যায় ট্রাম্প ব্যক্তি হিসেবে কেমন। ট্রাম্পের অন্য কোনো কথা বা কাজের সঙ্গে একমত না হলেও এ বিষয়টির সঙ্গে আমি একমত।’
অবশেষে শুরুতে হাত না মেলালেও দ্বিতীয় দিনের বিতর্ক শেষে একে অপরের সঙ্গে হাত মিলিয়েই অনুষ্ঠান শেষ করেন দুই প্রার্থী। বাংলাদেশ সময় আগামী ২০ অক্টোবর সকালে এবারের নির্বাচনের তৃতীয় এবং শেষ প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কটি অনুষ্ঠিত হবে।