
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নতুন এক মাইলফলকে পৌঁছে গেল বাংলাদেশ। বিশ্বের প্রথম কোনো দেশ হিসেবে একদিনে ১ কোটি ২০ মানুষকে টিকা দিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। রোববার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘গতকাল শনিবার বিশেষ টিকা ক্যাম্পেইনে একদিনে ১ কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল আমাদের। তবে দিন শেষে ১ কোটি ১১ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ এবং ৯ লাখ মানুষকে ২য় ডোজ দিতে পেরেছি। এটা নিঃসন্দেহে বিশ্বের প্রথম ঘটনা।’
শুধু বিশ্ব রেকর্ডই নয়, ১ কোটি ২০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার পর আরও দুটি মাইলফলক স্পর্শ করেছে বাংলাদেশ। এর একটি, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি টিকা দিতে পারা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন দশম। আরেকটি মাইলফলক- দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৩ ভাগ মানুষকে টিকা দিয়ে শতভাগ লক্ষমাত্রা অর্জন করেছে সরকার।
এর আগে গণটিকা কার্যক্রমের আওতায় সারাদেশে একদিনে ৮০ লাখ ডোজ টিকা দিতে পেরেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে এবার টিকা নেওয়ার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনায় আরও ব্যাপক সংখ্যক মানুষ টিকা নিতে পেরেছে। কারণ কোনো রকম পূর্ব রেজিস্ট্রেশন, জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধনের মতো নথিপত্র ছাড়া শুধু কেন্দ্রে গিয়েই টিকা নিতে পেরেছে মানুষ। তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে এবার ব্যাপক প্রচার-প্রচারণাও চালানো হয়েছিল। তাতে মানুষ উৎসাহিত হয়েছে।
এতে আবার কোথাও কোথাও উল্টো ফলও হয়েছে। ব্যাপক উপস্থিতির কারণে ভিড় সামলাতে পুলিশ ডাকতে হয়েছে। এমনকি সাভার-সহ কিছু কিছু স্থানে টিকাকেন্দ্রের ভিড় নিয়ন্ত্রণে লাঠিপেটাও করতে হয়েছে পুলিশকে। টিকা নিয়ে অধিক সচেতনতার কারণে এমন ঘটনাকে অবশ্য মানুষ ইতিবাচকভাবেই নিয়েছে। মানুষ এখন বুঝতে পেরেছে, সুরক্ষিত থাকতে হলে করোনা টিকা নিতেই হবে। তাতেই সবার মঙ্গল।

আমরা জানি, এত বিশাল কর্মযজ্ঞ সফলভাবে শেষ করা চাট্টিখানি কথা নয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এই বিশেষ টিকা ক্যাম্পেইনে সফল করতে ১ লাখেরও বেশি মানুষ কাজ করছে। এই কাজে থাকা বেশিরভাগ মানুষকেই নির্ধারিত সময়ের বাইরে আরও সময় ব্যয় করতে হয়েছে। জনগণের প্রতি আন্তরিকতা এবং দায়বদ্ধতা না থাকলে এমন কাজের সফলতা ছিল অসম্ভব ব্যাপার।
সরকারের হিসাব বলছে, এই ১ কোটি ২০ লাখ-সহ সারাদেশে ১৯ কোটিরও বেশি ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে মানুষকে। আর এ কারণেই করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ অনেক অনেক উন্নত দেশের চেয়েও এগিয়ে আছে। কেননা মহামারীর এই দুই বছরে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা থেমে থাকেনি। যার প্রমাণ ৬ এর উপরে থাকা মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)।
আমরা মনে করি, দেশের এই অর্জন, আমাদের গর্ব। সরকারের পাশাপাশি এ দেশের প্রতিটি মানুষ এই অর্জনের অংশীদার।