কমেডির রাজা হলেন ফ্যারেলি ব্রাদার্স। ববি এবং পিটার ‘ফ্যারেলি ব্রাদার্স’ হিসেবেই বিশ্বব্যাপী পরিচিত। কিন্তু সর্বশেষ ছবি ‘গ্রিন বুক’ এ বিচ্ছেদ ঘটলো তাদের। ববি ব্যক্তিগত কাজের জন্য পাশে ছিলেন না পিটারের। তবে সেই দুঃখ ভুলিয়ে দিলো ৯১তম অস্কারের আসর! হ্যাঁ। সদ্য সমাপ্ত একাডেমি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে ‘সেরা চলচ্চিত্র’র পুরস্কার অর্জন করলো পিটার ফ্যারেলির ছবি ‘গ্রিন বুক’। ছবিটি গেল নভেম্বর আমেরিকায় মুক্তি পায়। বেশ সাড়াও ফেলে। তবে এই ছবির জন্য অস্কার পেয়ে যাবেন, এমনটা ভাবেননি নির্মাতাও। ‘গ্রিন বুক’ মুক্তির সময় ছবিটি নিয়ে স্ল্যাশফিল্ম.কম এ একটি সাক্ষাৎকার দেন পিটার। চ্যানেল আই অনলাইন পাঠকদের জন্য সেই সাক্ষাৎকারটি ভাষান্তর করা হলো:
অবশ্যই নির্মাতা হিসেবে আপনি যেকোন ধরণের চলচ্চিত্রই নির্মাণ করতে পারেন। কিন্তু ‘গ্রিন বুক’ আপনার প্রথম ড্রামা জঁরার কাজ। তো স্টুডিওগুলোকে কি বোঝাতে হয়েছিল যে আপনি কমেডি ছাড়াও অন্য কিছু বানাতে পারেন?
হ্যাঁ। এটা কঠিন ছিল। আমাদের চিত্রনাট্য বেশ ভালো ছিল যেটা ব্রায়ান হায়েস এবং নিক সহ লিখেছিলাম। ভিগো আর মাহেরসালা না থাকলে ব্যাপারটা অন্যরকম হয়ে যেতে পারতো। যখনই ভিগো এবং মাহেরসালা সাইন করলো প্রজেক্টে তখনই মানুষ ভাবলো– আচ্ছা ভিগো, মাহেরসালা আছে তাহলে দেখাই যায় কী দাঁড়ায়।
যদিও এরপরেও তারা এটাকে অতো বড় সিনেমা হিসেবে দেখেন নি কেউ ই। যতটা আমি ভেবেছিলাম এটা হতে পারে। উনারা হয়তো ভাবছিলেন এটা জঁনরা ভিত্তিক কোন ফিল্ম হবে নির্দিষ্ট একটা বাজেটের মধ্যে। কঠিন ছিল ব্যাপারটা! বেশ কয়েক সপ্তাহের শুটিং করতে হয়েছিল, একটা মাত্র অংশের কাজ হয়েছিল। সপ্তম সপ্তাহে মাত্র ২০ মিলিয়ন হাতে ছিল আর বাদবাকি সব কাজ বাকিই ছিল তখনো।
আপনি কি ববিকে ছাড়া একাই কাজটা করছিলেন যখন ড্রামার প্রসঙ্গ এলো?
আমার কোন পরিকল্পনাই ছিলো না একা একা চলচ্চিত্র নির্মাণ করার। আমি চেয়েছিলাম আমার ভাইও আমার সাথে থাকুক কিন্তু তিনি পারছিলেন না তার পারিবারিক ঝামেলার কারণে।
২০১৬ এর দিকে আপনি ‘গ্রিন বুক’ এর কাজ শুরু করেছিলেন এবং তখনই সম্ভবত বর্ণবৈষম্যের ব্যাপারগুলো দেখতে পাচ্ছিলেন নির্বাচনের পরে পরেই। এটা ভালো সময় জনগণকে বুঝিয়ে দেওয়ার যে কতটা দূরে আমরা সরে এলাম…?
আমি জানতাম, যখন বানাচ্ছিলাম তখনই জানতাম এটা বিশাল আকার ধারণ করবে আজ এসে। আসলে আমি এটা সম্পর্কে দুই-তিন বছর আগেই শুনেছিলাম যখন এসব ঝামেলা চলছিল। আপনি যদি মনে করেন যে, আমরা শুধুমাত্র জাতিগত বিদ্বেষ দেখাচ্ছিলাম তা নয় কিন্তু, কেননা পুলিশেরা সতর্ক ছিলেন, চোখে ক্যামেরা পরে ঘুরছিলেন আবার কিছু নেতিবাচক চরিত্রের পুলিশও আমরা খুঁজে পেলাম। আসলে সাদা-চামড়ার মানুষেরা স্বীকার করতে চাইছিলেন না এরকম কিছু ঘটছে, এবং হঠাৎ করে আমরা দেখতে পাই এটা লিভিং রুমে দেখানো হচ্ছে প্রতি রাতে। এটাই ব্যাপারগুলোর পরিবর্তন ঘটায়। গত দুই বছরে আমার মনে হয়েছে অনেক মানুষ এই বিষয়কে নিজেদের স্বার্থের জন্য কাজে লাগিয়েছেন।
বর্ণবাদ সংক্রান্ত দৃশ্যেগুলোর মধ্যেও হাসির খোরাক কি দিতে পেরেছেন দর্শকদের?
আমরা আসলে হাসির বস্তুতে এ ব্যাপারটাকে পরিনত করতে চাইনি, আর তাই এটা করিও নি। যেসমস্ত হাস্যরসই এসেছে তা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এসেছে। আপনি একজন কালো বর্ণের পিয়ানোবাদককে খুঁজে পাবেন তিনজন সঙ্গীসহ যারা ষষ্ঠ শ্রেণি পাশ যারা এই বর্ণবাদকে উঠিয়ে নিয়ে আসে দৃশ্যে। তাই কিছু মুহূর্ত তো পাওয়াই যায় যাতে হাস্যরসের ছাপ আছে। কিন্তু এটা ব্যক্তিত্ব থেকেই, চরিত্র থেকেই, কোন হালকা জোকসের মাধ্যমে নয়। সত্যিকার অর্থে, আমরা যখন লিখছিলাম, একবারও ভাবিনি এটা হাস্যরস সম্পন্ন চিত্রনাট্য হতে হবে। ভেবেছিলাম, এই মুরগির দৃশ্যগুলো কিছুটা হাসি এনে দিবে কিংবা এখানে-সেখানে অন্য এক দৃশ্যে অনেকটা হাসি থাকতে পারে। কিন্তু যতক্ষণ না দু’জন অভিনয়শিল্পী এমন পাওয়া যায় যে আমার মনে হবে এ দৃশ্যগুলোতে যথেষ্ট হাস্যরস আছে। শুটিং এর সময় আমি ভেবেছি কতটা মজার এ চলচ্চিত্র কিন্তু আমি হাসানোর জন্য কিছু করিনি। স্বতঃস্ফূর্ত কোন হাসি যদি থেকে থাকে তবে এতে তাই আছে।
কমেডির ক্ষেত্রে আপনি বলেন আপনি পরীক্ষা করতে পছন্দ করেন যে মানুষ একেকটা জোকস এ কী করে প্রতিক্রিয়া জানান। ‘গ্রিন বুক’ এর ক্ষেত্রে সেটা কোন ভাবে ভিন্ন ছিল কী ?
আমি সচেতন ছিলাম। হ্যাঁ, চিন্তিত ছিলাম এটা নিয়ে, আমাদের প্রধান চরিত্র দু’টা গ্লাসকে আবর্জনার মধ্যে ফেলে দিবে এটাই শুরুর দৃশ্য হবে কি না তা নিয়েও ভাবছিলাম। আমরা দর্শকদের মধ্যেই ছিলাম যারা অর্ধেক কালো, অর্ধেক সাদা এবং আমি চাইছিলাম কালো মানুষগুলো দাঁড়িয়ে বলুক– ‘ফালতু জিনিস এটা। আমি এটাতে নেই, এটা আমি দেখতেও চাই না।’ কিন্তু এমন কিছুই হয়নি। সিনেমা শেষ হলে উনাদের সাথে আমি কথা বলছিলাম, জিজ্ঞেস করলাম– ‘কেমন লাগলো আপনার?’ আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারি না, উনারা খুশি ছিলেন, বললেন- ‘আমার ভালো লাগছে কারণ আপনি সত্যটা দেখালেন, তারা এই সত্যটা দেখায় না।’
আমিতো হাঁফ ছাড়লাম কারণ এই বিষয়গুলো নিয়েই আমি চিন্তিত ছিলাম। আমি অবাক হচ্ছিলাম, মানুষের চলচ্চিত্রটি উপভোগ করা দেখে, সেই হাসিগুলো, আমরা স্তম্ভিত ছিলাম। প্রত্যাশাই করিনি। অবাক হয়েছিলাম কী করে মানুষ টনি লিপ-এর বর্ণবাদ বৈষম্যের ব্যাপার ভুলে গিয়ে তার ব্যক্তিত্বকে উপভোগ করতে শুরু করলো আর ডা. শির্লের সাথে তার সম্পর্কের ব্যাপারটা উপভোগ করলো।
মুরগী সম্পর্কিত দৃশ্যগুলো তো সত্যিকারের ছিল, এটা কি কেএফসির না কি ওরেঞ্জ বার্ড- যারা পেছনে ছিল?
হুম, তিনটা ছিল, সবগুলোই সত্যি ছিল। ওরেঞ্জ বার্ডই ছিল সত্যিকারের ঘটনাটার পেছনে কারণ ডা. শির্লে নতুন নতুন জিনিস শিখছিলো তখনো, সে সচেতন ছিল মিউজিকের নতুন নতুন ফর্ম সম্পর্কে। কিন্তু টনি লিপ যেভাবে করতো সেটা আবার তার পছন্দ হচ্ছিল না। টনি লিপ নাইট ক্লাবে চাকরি করতো, তাই অনেক ব্যান্ডের সাথেই তার যোগাযোগ ছিল। যারা সেখানে আসতো। টনি সেজন্য ডা. শির্লের চেয়ে বেশি জানতো মিউজিক সম্পর্কে। ঐ ফ্রাইড চিকেন দৃশ্যটা পুরোটাই টনি বর্ণনা করেছিল সেই অডিও টেপে। আমাদের চলচ্চিত্রে অনেক লম্বা হয়ে যাচ্ছিলো বলে এ দৃশ্যগুলো কেটে ছোট করে এনেছিলাম।
এরপর কী কাজ করার কথা ভাবছেন, আবার কমেডি-তে ফেরত আসবেন কি?
সত্যিকারভাবে বলতে গেলে, আমি এখনো নিশ্চিত নই। আমি সত্যি থাকতে চাই নিজের কাছে। কিছু পরিকল্পনা আছে মাথায় কিন্তু এখনো নিশ্চিত নই। আমি যেটা করতে চাই না তা হল, তাড়াহুড়ো করে কোথাও ঝাঁপিয়ে পড়তে চাই না শুধুমাত্র কাজটা ভালো মনে হচ্ছে দেখেই। আমি অনেক অফার পাচ্ছি, এবং অনেকগুলোই খুবই ভালো কাজ বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু আমি ভাবছি ‘সত্যি, আমি কী আনতে পারি? আমার পক্ষে এর মাধ্যমে কী আনা সম্ভব?’ অনেকগুলো বিষয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি এখন তাই নিশ্চিত নই এরপর কোন কাজটা ধরবো, দেখা যাক…!