বিশ্বের প্রাচীন ও মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব বলা হয় ‘কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’কে। পৃথিবীর নামিদামি নির্মাতা, প্রযোজকরা এই উৎসবের অপেক্ষায় থাকেন। আর এই গুরুত্বপূর্ণ উৎসবে প্রথমবার অফিশিয়াল সিলেকশনে স্থান করে নিলো বাংলাদেশের তরুণ নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের দ্বিতীয় সিনেমা ‘রেহানা মরিয়ম নূর’।
কানে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই সবাই খোঁজছেন এই ছবির নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদকে। কিন্তু তিনি কোথাও নেই। গণমাধ্যমতো দূর, তাকে খোঁজে পাওয়া যাবে না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোনো শাখা প্রশাখায়! তার প্রথম সিনেমা ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’র ফেস্টিভাল জয় কিংবা দেশে মুক্তির সময়েও সাদ ছিলেন নিভৃতে। কোথাও আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য দিতে দেখা যায়নি তাকে।
কিন্তু এবার কান চলচ্চিত্র উৎসব বলেই কিনা নিভৃতচারী সাদকেও বিবৃতি দিতে হলো! ভাঙতে হলো নিরবতা। প্রথমে লিখিত আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দিলেন মার্কিন বিনোদনভিত্তিক জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ভ্যারাইটিকে। এরপর দেশীয় গণমাধ্যমেও পাঠালেন সেই লিখিত বিবৃতি। চ্যানেল আই অনলাইনকেও সাদের সেই আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাঠিয়েছেন ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ এর সহ-প্রযোজক রাজিব মহাজন।
লিখিত বিবৃতিতে সাদ জানিয়েছেন, ‘কান চলচ্চিত্র উৎসবের অফিশিয়াল সিলেকশনে বাংলাদেশের প্রথম ছবি হিসেবে রেহানা মরিয়ম নূর আমন্ত্রিত হওয়ায় আমি খুশী এবং সম্মানিত। এই অর্জন পুরোপুরি আমার টিমের।’
এই অর্জনে বার বার টিমের প্রতিই সাদকে কৃতজ্ঞতা জানাতে দেখা গেছে। বিবৃতিতে সাদ উল্লেখ করেন, ‘সবাই মিলে অমানুসিক পরিশ্রম আর নিজেদের সর্বোচ্চটা দেয়ার ফলেই আজকের এই অর্জন। আমি কৃতজ্ঞ এই ব্রিলিয়াট টিমের প্রতি এবং আমার খুবই সেনসিটিভ অভিনয়শিল্পীদের প্রতি। তারা ছাড়া আমি কখনোই এতোদূর আসতে পারতাম না।’
‘রেহানা মরিয়ম নূর’ এর প্রেক্ষাপট তৈরীর হয়েছে পরিবারের কারণে। বিশেষত বড় তিন বোনকে দেখেই এমন গল্প নিয়ে সিনেমা নির্মাণের পরিকল্পনা করেন বলেও বিবৃতিতে জানান সাদ। তিনি বলেন, ‘আমি মধ্যবিত্ত পরিবারে অনেক ভাইবোনদের মাঝে বেড়ে উঠেছি। আমার চিন্তা ভাবনায় তাদের সবার অনেক ইনফ্লুয়েন্স। বিশেষ করে আমার বড় তিন আপু’র। রেহানা’কে নিয়ে লিখতে শুরু করি সম্ভবত ঐরকম একটা জায়গা থেকেই। একটু একটু করে রেহানা’কে নিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করি। ওর ভেতরের ক্ষোভ আর অবিশ্বাস নিয়ে ভাবি। ওর ভেতরের কমপ্লেক্সিটি এবং কন্ট্রাডিকটরি আচরণ বোঝার চেষ্টা করি। রেহানা কী চায় এবং কেন চায় এটা নিয়ে লিখতে লিখতে ক্রমশ আরো প্রশ্ন বের হয়ে আসতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত ঐ প্রশ্নগুলোই আমাকে ছবিটা করতে উদ্ভুদ্ধ করে।’
গেল বৃহস্পতিবার (৩ জুন) কান চলচ্চিত্র উৎসব কর্তৃপক্ষ অফিশিয়ালি ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ এর সুসংবাদটি দেয়ার পর পরই মুহূর্তের মধ্যে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সোশাল মিডিয়ায় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কানের ‘আনসার্টেন রিগার্ড’ (ভিন্ন দৃষ্টিকোণ) বিভাগে বাংলাদেশের সিনেমা জায়গা করে নেয়ার খবরে উচ্ছ্বাস, আনন্দে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন দেশের সাধারণ সিনেমা প্রেমী থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা!
প্রায় সকলেই ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ এর এই অর্জনকে বাংলাদেশের জন্য সম্মান আর গৌরবের বলেও আখ্যা দেন। এরআগে বাংলাদেশের কোনো সিনেমা নিয়ে একযোগে এতো মানুষের ইতিবাচক সাড়া, মন্তব্য কিংবা অভিনন্দনের জোয়ার লক্ষ্য করা যায়নি। নাটক, সিনেমার সেলিব্রেটি মুখ থেকে শুরু করে সাধারণ সিনেমাপ্রেমী মানুষটির ভার্চুয়াল দেয়ালও হয়ে উঠে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ময়!
পোটোকল ও মেট্রো ভিডিও’র ব্যানারে ছবিটি প্রযোজনা করেছেন সিঙ্গাপুরের প্রযোজক জেরেমী চুয়া, নির্বাহী প্রযোজক এহসানুল হক বাবু এবং সহ-প্রযোজনা করেছেন রাজীব মহাজন, আদনান হাবিব, সাঈদুল হক খন্দকার।
ছবিটির সিনেমাটোগ্রাফার তুহিন তমিজুল, প্রোডাকশন ডিজাইনার আলী আফজাল উজ্জল ও সাউন্ড ডিজাইনার শৈব তালুকদার। ছবিটি সহ-প্রযোজনা করেছে সেন্সমেকারস প্র্রডাকশন।
ছবিতে মূল চরিত্রে বাঁধন ছাড়াও আরো অভিনয় করেছেন আফিয়া জাহিন জাইমা, কাজী সামি হাসান, আফিয়া তাবাসসুম বর্ন, ইয়াছির আল হক, সাবেরী আলমসহ অনেকে।
ইতিমধ্যে ছবিটির ইন্টারন্যাশনাল সেলস্ এর জন্য জার্মান ভিত্তিক সেলস্ এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ফিল্মস বুটিক চুক্তবদ্ধ হয়েছে। আগামী ৬ জুলাই থেকে ফ্রান্সের কান শহরে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বের প্রথম সারির আর্ন্তজাতিক এই চলচ্চিত্র উৎসব।