লেখাপড়ার জন্য একটা চেয়ার-টেবিলও ছিলো না। বিছানায় বসেই লেখাপড়া করে চলতি শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার ভাদসা হরিপুর গ্রামের দিনমজুর আলাউদ্দিন ও শাহানাজ পারভিন দম্পতির মেয়ে স্মৃতি পারভিন।
মেয়ের এমন সাফল্যে খুশি হলেও পড়ালেখার খরচ চালাবেন কীভাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে পরিবার।
পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি স্মৃতির বাবা আলাউদ্দিন। বসতবাড়ি ছাড়া তাদের ১৩ শতাংশ আবাদি জমি রয়েছে। ওই জমিতে যে ফসল হয়, তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। দুই বোনের মধ্যে স্মৃতি ছোট।
তিনি হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে কলেজে যাওয়া শুরু করতেই আলাউদ্দিনের কষ্ট বেড়ে যায়। দিনমজুরের কাজ করে মেয়ের লেখাপড়ার খরচের জোগান দিতে থাকেন। প্রতিদিন মেয়েকে কলেজে যাতায়াত খরচ বাবদ ৩০ টাকা করে দিতেন।
এমন টাকা দিয়েই কষ্ট করে লেখাপড়া করে স্মৃতি জয়পুরহাট সরকারি কলেজ থেকে ২০২১ সালে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে ডাক্তার হবার স্বপ্নে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ৭৩.৫ নম্বর পেয়ে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান।
কিন্তু মেয়ের এমন সাফল্যে খুশি হলেও তার মেডিকেলে পড়ালেখার খরচ কীভাবে জোগাবেন তা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছে পরিবারটি। অর্থাভাবে মেয়ের ডাক্তার হবার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে কিনা- তা নিয়েও হতাশায় দিন কাটছে তাদের।
স্মৃতি পারভিন বলেন, ‘বাবা দিনমজুরের কাজ করে পড়াশোনার খরচ দিয়েছে। জায়গা-জমি নেই বললেই চলে। কলেজে যাওয়ার সময় প্রতিদিন ৩০ টাকা করে দিতেন বাবা। সেই টাকা নিয়ে সকালে কলেজে গিয়ে ক্লাশ ও প্রাইভেট শেষ করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতাম। আমি আমার চেষ্টা করেছি। মেডিকেলেও চান্স পেয়েছি। বাবা-মাও খুশি। কিন্তু মেডিকেলে পড়ার খরচ দিনমজুর বাবার পক্ষে চালানো কখনোই সম্ভব নয়। শেষতক হয়তো টাকার অভাবেই আমার ডাক্তারি পড়াটা হবে না।’
স্মৃতির বাবা আলাউদ্দিন বলেন, ‘মেয়ে মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় আমরা খুশি। আমরা গরিব মানুষ, জায়গা- জমি নেই। দিনমজুরি করে কীভাবে মেয়ের লেখাপড়া করাব সেটাই এখন বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, ‘স্মৃতি খুবই মেধাবী ছাত্রী। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়েও সে দমে যায়নি। পেয়েছে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ। আমরাও অনেক খুশি। কিন্তু মেডিকেলে ভর্তির পর অর্থনৈতিক দিক দিয়ে তারা সমস্যায় পড়বে। মেয়েটি যেন পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে সেজন্য বিত্তবানদের সহযোগিতা প্রার্থনা করছি।’
ভাদসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরোয়ার হোসেন স্বাধীন বলেন, ‘দরিদ্র পরিবারের মেয়ে স্মৃতি মেডিকেলে চান্স পাওয়ার কথা শুনে জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সামছুল আলম দুদু সাহেব তার ভর্তি বাবদ টাকা দিতে চেয়েছেন। আমরাও বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি যেন অর্থের অভাবে মেয়েটির পড়াশোনা বন্ধ না হয়ে যায়।’